সাউথ অস্ট্রেলিয়ার উত্তর প্রান্তের ছোট্ট এক শহর কুবার পেডি। স্টুয়ার্ট হাইওয়ে ধরে গেলে অ্যাডিলেডের ৮৫০ কিলোমিটার উত্তরে এর অবস্থান। সাধারণভাবে একে দেখলে মোটামুটি জনবিরল এক জায়গা বলেই মনে হবে। বৃক্ষহীন সমতল এক এলাকা, পাতলাভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কিছু ঘর-বাড়ি, এক জোড়া সরাইখানা, একটি পুলিশ স্টেশন, একটি স্কুল আর একেবারে উত্তর সীমায় একটি হাসপাতাল। তবে এতটুকুন দেখে যদি চলে যান, তাহলে আপনি শহরের আসল মজাটাই পেলেন না।
প্রকৃতপক্ষে আপনি দেখলেন শহরের অর্ধেকটি। বাকি অর্ধেকটা ‘ডাগআউট’ নামে পরিচিত চওড়া গুহা আর সুড়ঙ্গের এক পাতাল রাজ্য। কুবার পেডির পাতালরাজ্যে শহরের বাসিন্দারা বানিয়েছেন বাড়ি, ওপাল জাদুঘর, রেস্তোরাঁ, বার, গির্জা, পাঠাগার আরও কত কিছু।
কুবার পেডি নামের এ শহরের প্রায় ৮০% লোক মাটির নিচে বসবাস করেন। শহরটিকে খনি শিল্পের শহর বলা হয়। কুবার পেডি মূলত বর্ণালি পাথরের খনি। ১৯১৫ সালে খনিগুলো আবিষ্কারের পর এই শহরে খনি শ্রমিকদের কদর বেড়ে যায়।
এখানে অনেক সুড়ঙ্গ ও চোরাইপথ রয়েছে। মাটির নিচের এ শহরে রয়েছে চার্চ, শপিং সেন্টার, আর্ট গ্যালারি, হোটেল ও অফিস। আশ্চর্যের বিষয় হলো এই শহরে কোনো ঘাস নেই।
এটি অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড থেকে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দূরে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মরুভূমিতে অবস্থিত। এক সময় এখানে কোনো মানুষের বসবাস ছিল না। দূর থেকে কাজের প্রয়োজনে আসতে হতো লোকজনকে। এরপর তারা এখানেই থাকতে শুরু করেন।
গ্রীষ্মকালে এখানকার তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠে। শীতকালে আবার শূন্য ডিগ্রিরও নিচে নামে।
আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে উদ্ভিদ জন্মায় কম। নানা প্রতিকূলতা থাকার পরও কুবার পেডিতে গড়ে উঠেছে অত্যাধুনিক শহর। রয়েছে রেস্তোরাঁ, বইয়ের দোকান, গির্জা, বিনোদন কেন্দ্র, ক্লাব, ব্যাংক।
কেন এই শহরটি মাটির নিচে? কুবার পেডির পাথুরে জমির সঙ্গে মিশে ছিল ওপাল নামের বিশেষ এক রত্ন। এ জায়গাটার বিশেষত্ব প্রথম আবিষ্কার করে উইল হাচিসন নামের ১৪ বছরের এক কিশোর ১৯১১ সালে। এ মজার আবিষ্কারের আগে এখানকার বাসিন্দা বলতে ছিল মরুভূমির সাপ, বিষাক্ত পোকামাকড়, টিকটিকি আর এমু পাখি। কিন্তু ওপালের অস্তিত্ব আবিষ্কার বদলে দিতে শুরু করলো কুবার পেডিকে।
রত্নসন্ধানীরা আসতে শুরু করেন এখানে। রত্নের খোঁজে শুরু হলো খোঁড়াখুঁড়ি। খোঁড়াখুঁড়ি যত বাড়তে থাকল এলাকার গভীরে নামতে শুরু করল মানুষ। মাটির নিচে বড় বড় গুহার সৃষ্টি হলো। সেখানে রোদের তাপ থেকে বাঁচতে মানুষ বসবাসও শুরু করে দিল। এভাবেই সময়েরক্রমে গড়ে উঠলো এই শহর। রয়েছে ভূগর্ভস্থ সুইমিং পুল, গেমস রুম, বড় বাথরুম, লিভিং রুমসহ বিস্তৃত এবং বিলাসবহুল বাসস্থান।
আপনার মতামত জানানঃ