লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের যন্ত্রাংশ কেনাকাটায় ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটিতে সাধারণ একটি রাউটারের ক্রয়মূল্য দেখানো হয়েছে এক লাখ ৩৬ হাজার ৫০০ টাকায়। অথচ ওই রাউটারের দাম বাজারে দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা। শুধু রাউটার নয় প্রতিটি সরঞ্জাম ক্রয়ের ক্ষেত্রে ৯-১০ গুণ বেশি মূল্য দেখানো হয়েছে।
একটি অপটিকাল ফাইবারের ক্রয় মূল্য ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা, চারটি ডিজিটাল ওয়েটবোর্ড মূল্য ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ১২টি ডেক্সটপ পিসির মূল্য ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা ও একটি প্রিন্টারের মূল্য ৬০ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরে লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ল্যাবের যন্ত্রাংশ বরাদ্দের তালিকায় বাজার দরের চেয়ে এত বিশাল অসামঞ্জস্য দেখা গেছে। প্রতিটি সরঞ্জাম ১০-৯০ গুণ মূল্য দেখিয়ে পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দিয়ে দুর্নীতি করার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে টেন্ডারের মাধ্যমে প্রায় ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকার যন্ত্রাংশসহ বিভিন্ন মালামাল কেনে লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। তবে ওই যন্ত্রাংশ ক্রয়ে দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ যায় দুদকের কাছে সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে দুদক (চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর) সমন্বিত চাঁদপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আতাউর রহমানের নেতৃত্বে তদন্ত কাজ শুরু করা হয়।
ওই অর্থ বছরে মালামাল সরবরাহকারী দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪০ লাখ টাকার দুটি বিলের কপি এসেছে সময় সংবাদের হাতে।
এতে দেখা যায়, ১৬ লাখ ৯০ হাজার টাকার যন্ত্রাংশ সরবরাহ করেছে মেসার্স জে অ্যান্ড জে ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। যার পোপ্রাইটর হলেন ওই পলিটেকনিকের সাবেক ছাত্র যুবলীগ নেতা রেজাউল করিম জেনী। সদর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক তিনি।
আরেকটি বিলের কপিতে দেখা যায়, এসএআরএস টেকনিক্যাল সিস্টেম লিমিটেড নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান ২৩ লাখ টাকার মালামাল সরবরাহ করেছে। সেখানে ‘টিপি লিঙ্ক’ ব্র্যান্ডের একটি রাউটারের দাম ধরা হয়েছে এক লাখ ৩৬ হাজার ৫০০ টাকা।
দুদক চাঁদপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আতাউর রহমান বলেন, গত অর্থ বছরে সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো বরাদ্দ ছিল। কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে। সেটি তদন্ত করা হচ্ছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট পেশ করব।
এদিকে টেন্ডারে অংশগ্রহণকারী একাধিক ঠিকাদার অভিযোগ করেছেন, প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষককে সঙ্গে নিয়ে সরবরাহকারী ঠিকাদারদের সঙ্গে আঁতাত করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. জহিরুল ইসলাম কেনাকাটার অর্থ ভাগবাটোয়ারা করেন। এ ছাড়া কাগজপত্রে সরঞ্জাম টেন্ডারে দিলেও একাধিক মালামাল অধ্যক্ষ আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ তাদের।
ঠিকাদাররা জানান, বিগত কয়েক বছর ধরে লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের টেন্ডারে আহ্বান করা কাজগুলো সর্বনিম্ন ঠিকাদারকে না দিয়ে উচ্চ দরদাতাকে দেয়া হয়। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারায়, যা পিপিআর বহির্ভূত।
তাদের অভিযোগ, সিরিয়ালে থাকা প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় প্রতিষ্ঠানকে কাজ না দিয়ে পঞ্চম ও ষষ্ঠ অবস্থানে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার কাজ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, যারা টেন্ডার পায়নি, তারা কাগজপত্র বা বিভিন্ন ত্রুটির কারণে কাজ পায়নি। তারা ২০২২-২৩ অর্থ বছরের টেন্ডার দরপত্র নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে। এর আগে তারা (ঠিকাদার) আমার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিটও করেছে। জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিয়েছে। আমি জবাব দিয়েছি। আমি কোনো অনিয়ম করিনি। সরঞ্জামের মূল্য বাজার মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য আছে বলে দাবি করেন তিনি।
আপনার মতামত জানানঃ