বৈশ্বিক মন্দা, দেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। কারণ, টানা ১৩ বছর ক্ষমতাসীন থাকার পরও এ কথা সত্য যে আওয়ামী লীগ তার ঘর গোছাতে পারেনি বা ঘর গোছাতে চায়নি। হয়তো শুধু নিজেদের ভাগ্য গোছাতেই ব্যস্ত ছিল।
সরকার গঠন করার পর আওয়ামী লীগ নিজেদের মতো কাজ গেছে। কারো কোনো পরামর্শ কানে তোলেনি। কোনো জবাবদিহিতারও প্রয়োজন মনে করেনি। তাই আজকে, ঠিক নির্বাচনের সামনে এসে দলীয় প্রধানকে বলতে হচ্ছে, এই নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য কঠিন হবে।
নেত্রী বলেছেন, ‘চকচকে নেতারা বিপদে পড়লে থাকবে না, কিন্তু ত্যাগী, তৃণমূলের পোড় খাওয়া নেতারা বিপদে থাকে। তাদের মূল্যায়ন করতে হবে।’ প্রতিটি খাতেই এই চকচকে তেলবাজ মানুষগুলোই আওয়ামী লীগ সরকারে থাকাকালে ক্রিমটা খেয়েছে। ত্যাগী ও নিবেদিত কর্মী-সমর্থকরা ছিটকে পড়েছেন। এখন নির্বাচন এসেছে, তাদের কথা মনে পড়ছে। মনে হচ্ছে বাংলাদেশের প্রান্তিক মানুষের কথা। আওয়ামী লীগের মতো বড় ও প্রাচীন দল ১৩ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার পর ঈর্ষণীয় শক্তি থাকার কথা ছিল। কিন্তু আজকে তারা দ্বিধা-বিভক্ত, সন্দিহান। নিজেদের ওপরেও আস্থা পাচ্ছে না। অনেক ভালো কাজ করার পরও জনগণকে ভয় পাচ্ছে
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে দেশব্যাপী একটি জরিপ চালিয়েছে।
এতে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাজের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ৭০ শতাংশ মানুষ। প্রধানমন্ত্রীর কাজের প্রতি সন্তুষ্ট থাকলেও অনেকেই মতামত দিয়েছেন তারা চান আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হোক।
মঙ্গলবার আইআরআই-এর ওয়েবসাইটে ‘ন্যাশনাল সার্ভে অব বাংলাদেশ, মার্চ-এপ্রিল ২০২৩’ শীর্ষক জরিপ প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। ২০২৩ সালের ১ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের ৬৪ জেলার ৫ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের ওপর এ জরিপ চালানো হয়।
জরিপের ফলাফলে জানা যায়, দেশের বেশির ভাগ নাগরিক মনে করেন, দেশ ভুল পথে চালিত হয়েছে। কিন্তু সরকার জনগণের সমর্থন ধরে রাখতে পেরেছে। তবে বিরোধী দলের জনপ্রিয়তাও বেড়েছে।
এদিকে জরিপে অংশ নেওয়াদের মধ্যে মাত্র ৪৪ শতাংশ বলেছে দেশ সঠিক পথে চলছে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে এই হার ছিল ৭৬ শতাংশ। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণেই মানুষের মতামতে পরিবর্তন এসেছে বলে জানিয়েছে আইআরআই।
জরিপে অংশ নেওয়া একজন বলেছেন, আমার স্বামীর বেতন বাড়েনি; কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা উন্নত হলে জরিপে অংশগ্রহণকারীরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন। জরিপে ৯২ শতাংশ বলেছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে তাদের ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
৫৭ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছে, তারা ‘খুব সম্ভবত’ ভোট দেবে। যারা ভোট দিতে চায় না তারা নির্বাচনি জালিয়াতি এবং ভোটার নিবন্ধনসংক্রান্ত সমস্যাকে ভোটদানের প্রধান বাধা হিসাবে উল্লেখ করেছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৪৪ শতাংশ বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনব্যবস্থায় ফেরাকে সমর্থন করে।
আরআরআই-এর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক পরিচালক স্টিভ সিমা বলেছেন, এটি আশাজনক যে মানুষ অবাধ, সুষ্ঠু এবং প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন চান। এই জরিপের ফলাফলে উঠে এসেছে বাংলাদেশিরা আগামী শীতের নির্বাচনে সত্যিকার অর্থে নিজেদের ইচ্ছার প্রতিফলন দেখতে চান।
এসডব্লিউএসএস/১৯০০
আপনার মতামত জানানঃ