বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ, বিশ্বাসযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন দেখতে চায় জাতিসংঘ। নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান জাতিসংঘ মহাসচিবের উপমুখপাত্র ফারহান হক।
ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
তা সত্ত্বেও তথাকথিত সুশীল সমাজের কিছু লোক, মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা কিছু সংগঠন, এমনকি মার্কিন কংগ্রেসের কিছু নির্বাচিত সদস্য জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন থেকে বাংলাদেশকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন। আপনি কি এই ধরনের দাবির বিষয়ে অবহিত?
এছাড়া ঐ সব তথাকথিত সুশীল সমাজ ও যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত কিছু ব্যক্তি বাংলাদেশের আসন্ন সংসদ নির্বাচন জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে করার পরামর্শ দিয়েছেন। যদিও বাংলাদেশ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
সে লক্ষ্যে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো অবাধে সভা-সমাবেশ শুরু করেছে। বাংলাদেশে তাদের সংগঠন কি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের সঙ্গে হস্তক্ষেপ করবে? এ পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের অবস্থান কী?
জবাবে ফারহান হক বলেন, জাতিসংঘ বাংলাদেশে একটি শান্তিপূর্ণ, বিশ্বাসযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনকে উৎসাহিত করে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি বলেন, জাতিসংঘ প্রকৃত অর্থেই রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের উদারতার প্রশংসা করে। আমরা আশা করি, এটি অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্যপদ নিয়ে মন্তব্য করা আমার কাজ না। এটি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সিদ্ধান্তের বিষয়।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ১৪ জন মার্কিন কংগ্রেস সদস্য জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ডকে একটি চিঠি দেন। ঐ চিঠিতে তারা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
একইসঙ্গে তারা জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে বাংলাদেশের সদস্যপদ অবিলম্বে স্থগিত করতে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন।
এবার চলুন বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিটা দেখে নেওয়া যাক। আর এজন্য ফুরে দেখা যাক ২০২২ সালের দিকে। দেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি বিভীষিকাময় বলে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) এক পর্যবেক্ষণে তুলে ধরা হয়েছিল।
বেসরকারি সংস্থা আসকের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদায়ি বছরে সারা দেশে ৪৭৯টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৭০ জন নিহত হয়েছেন। ৬ হাজার ৯১৪ জন আহত হন। ১৯ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার এবং পাঁচজন অপহরণ, গুম ও নিখোঁজ হয়েছেন।
আসকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরে ১ হাজার ৬৯৪টি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। ১২৬ নারী খুন হয়েছেন। ৯৩৬ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ১২ নারী অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন। ১ হাজার ৪৫ শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের ঘটনায় ৪৭৪ শিশু নিহত হয়েছে।
গত বছর সীমান্তে ২১ জন হত্যার শিকার হয়েছেন। গণপিটুনিতে ৩৬ জন মারা গেছেন। কারা হেফাজতে ৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ২০২২ সালে সংখ্যালঘুদের ওপর ১২টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। ২২৬ সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন।
এসডব্লিউএসএস/১৫২০
আপনার মতামত জানানঃ