ওষুধ খেলে অসুস্থতা কমে যায়। কিন্তু এবার ওষুধ খেলে কমে যাবে বয়সও। এমনটাই দাবি করলেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। তারা জানিয়েছেন, বেশ কয়েক ধরনের ওষুধ একসঙ্গে মিশিয়ে একটি ট্যাবলেট আবিষ্কার করেছেন তারা। এই ওষুধ খেলেই শারীরিক ও মানসিকভাবে বয়স পিছনের দিকে হাঁটতে শুরু করবে। ফলে বার্ধক্যের সমস্যা আর শরীরে থাবা বসাতে পারবে না।
বিজ্ঞানীরা এমন এক ওষুধ আবিষ্কার করেছেন, যা মানুষের শরীরে বয়সের ছাপকে ঠেকিয়ে দিতে পারে। এর ফলে বয়সে বৃদ্ধ হলেও দেখাবে যুবকের মতো। নিউইয়র্ক পোস্ট এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
১২ জুলাই এজিং জার্নালে ‘কেমিক্যালি ইনডিউসড রিপ্রোগ্রামিং টু রিভার্স সেলুলার এজিং’ নামের একটি সমীক্ষা প্রকাশিত হয়।
ঠিক কীভাবে তৈরি হবে এই আশ্চর্য ওষুধ? হার্ভার্ডের বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে মোট ছ’রকমের ওষুধ নিয়ে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়েছেন তারা।
কিন্তু ওষুধের মাধ্যমে বয়স কমানোর বিষয়টি নিয়ে সাফল্য মেলেনি। শুধুমাত্র জিন থেরাপি দিয়েই বয়স কমানোর উপায় ছিল। তবে এবার কেমিক্যাল ককটেলের তৈরি ওষুধ দিয়েই বয়স কমে যাবে। এই ওষুধ খেলেই মানবদেহের বার্ধক্যজনিত সমস্যা কমে গিয়ে উলটো দিকে হাঁটা শুরু করবে বয়স।
বিজ্ঞানী দলটি ছয়টি ‘রাসায়নিক ককটেল’ আবিষ্কার করেছেন, যা কয়েক বছর ধরে মানুষ ও ইঁদুরের ত্বকের কোষকে বয়স্ক থেকে সজীব করেছে।
হার্ভার্ড গবেষক ডেভিড সিনক্লেয়ারও টুইটার ও থ্রেডে একই ব্যাখ্যা দিয়ে লিখেছেন, ‘আমাদের সাম্প্রতিক গবেষণা শেয়ার করতে পেরে কৃতজ্ঞ। আমরা আগে দেখিয়েছি যে ভ্রূণের জিন চালু করতে জিন থেরাপি ব্যবহার করে বয়সের পরিবর্তন সম্ভব।
এখন আমরা ‘রাসায়নিক ককটেল’ দিয়ে সেটি সম্ভব করে দেখালাম। সাশ্রয়ী মূল্যে পুনর্জীবন লাভে এটি আরেক পদক্ষেপ।’
জানা গিয়েছে, মোট পাঁচ থেকে সাতটি ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে এই ককটেলে। শারীরিক ও মানসিক নানা রোগের প্রতিকার করতেই আলাদাভাবে এই ওষুধগুলি ব্যবহার করা হয়। তবে সব ওষুধকে একসঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছেন হার্ভার্ডের গবেষকরা। এই কাজ করতেই সময় লেগেছে তিন বছর। তারপরেও বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, দেহের কোন অঙ্গে এই ওষুধের প্রয়োগ ঘটানো হবে সেটা খুঁজে বের করা। আপাতত বিজ্ঞানীদের দাবি- স্নায়ু, মস্তিষ্ক, কিডনি ও মাংসপেশিতেই কাজ করবে এই কেমিক্যাল ককটেল ওষুধ।
ডেভিড আরও বলেন, প্রতিটি ‘রাসায়নিক ককটেলের’ পাঁচ থেকে সাতটি এজেন্ট রয়েছে, এগুলোর মধ্যে কয়েকটি অন্যান্য শারীরিক এবং মানসিক ব্যাধির চিকিৎসার জন্য পরিচিত।
তিনি এবং তার হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল দল তিন বছরের বেশি সময় ধরে অণুগুলো খুঁজতে কাজ করেছে, যা বার্ধক্যের চাকাকে বিপরীত দিকে ঘুরিয়ে দেয় এবং মানবকোষগুলো পুনরুজ্জীবিত করতে পারে।
গবেষক আরও টুইট করেছেন, ‘অপটিক স্নায়ু, মস্তিষ্কের টিস্যু, কিডনি এবং পেশির ওপর অধ্যয়নগুলো ইঁদুরের উন্নত দৃষ্টি, বর্ধিত আয়ুসহ আশাব্যঞ্জক ফল দেখিয়েছে।
সম্প্রতি এ বছরের এপ্রিলে বানরদের দৃষ্টিশক্তি উন্নত হয়েছে। মানুষের বয়স কমানোর জিন থেরাপি বর্তমানে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে রয়েছে। প্রথম মানব ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালগুলো আগামী বছরের শেষের দিকে শুরু হবে। আশা করছি সব ঠিকঠাক চলবে।
তবে হার্ভার্ডের একজন অধ্যাপকসহ অন্য বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, গবেষণাটিতে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এবং এটি একেবারেই প্রাথমিক স্তরে রয়েছে।
এসডব্লিউএসএস/০৭১৫
আপনার মতামত জানানঃ