অনলাইন টেকক্রাঞ্চ বলছে, বাংলাদেশের নাগরিকদের ব্যক্তিগত সব তথ্য ফাঁস হয়েছে সরকারি একটি ওয়েবসাইট থেকে। ফাঁস করা তথ্যের মধ্যে আছে পূর্ণাঙ্গ নাম, ফোন নম্বর, ই-মেইল ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্রের আইডি নম্বর। বিটক্রাক সাইবার সিকিউরিটির গবেষক ভিক্টর মারকোপলাস বলেছেন ২৭ শে জুন তিনি আকস্মিকভাবে বিষয়টি দেখতে পান।
বাংলাদেশ ই-গভর্ণমেন্ট কম্পিউটার ইন্সিডেন্ট রেসপন্স টিম (সিইআরটি) এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পরই এ ঘটনা দেখতে পান বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, লাখ লাখ বাংলাদেশির এসব তথ্য ফাঁস হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়, তারা বিষয়টি যাচাই করেছে। সরকারের আক্রান্ত ওয়েবসাইটে সার্চ অপশন ব্যবহার করে এর সত্যতা যাচাই করে তারা।
এক্ষেত্রে ফাঁস হওয়া ডাটা থেকে অনেকগুলো ওই সার্চ অপশনে দিয়ে অবিকল একই ফল পাওয়া গেছে। তবে সরকারের কোন ওয়েবসাইট থেকে এসব তথ্য ফাঁস হয়েছে টেকক্রাঞ্চ তা প্রকাশ করেনি।
ফাঁস হওয়া তথ্য আমাদের বিভিন্নভাবে বিপদে ফেলে। সরকারি ওয়েবসাইটের পাশাপাশি ব্যক্তিগত তথ্যের ভাণ্ডার আমাদের মোবাইল ফোণ থেকেও প্রচুর গোপনীয় তথ্য ফাঁস হওয়া্র ঝুকিতে থাকে। তাই এর নিরাপত্তায় সচেতন হওয়া উচিত!
নিরাপত্তা
অ্যানড্রয়েড কিংবা আইফোন—এই দুই ব্র্যান্ডের হ্যান্ডসেটের জন্য প্রচুর নিরাপত্তামূলক অ্যাপ রয়েছে। তবে দেখা যায়, ডাটা বাঁচাতে বা পাইরেটেড অ্যাপ ব্যবহারের জন্য আমরা অন্যান্য স্থান থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করি।
বিষয়টা খুবই বিপজ্জনক। জনপ্রিয় অ্যাপের মধ্যে প্রায়ই হ্যাকারের কম্পিউটারে পাঠানোর কোড ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। ফলে ওয়েবসাইট লগইন পাসওয়ার্ড, ছবি, লোকেশন তথ্য—সবই ব্যবহারকারীর অজান্তে চলে যায় তাদের হাতে। এই শ্রেণির ম্যালওয়্যার স্মার্টফোনের অন্য কোনো ক্ষতি না করায় বিষয়টা ব্যবহারকারীর চোখ এড়িয়ে যায়।
এ ছাড়া কিছু ম্যালওয়্যার ও ভাইরাস ফোনের সিস্টেমে চলে যেতে পারে, বিশেষ করে যদি সেটটি রুট করা থাকে, অতএব এটি যাঁরা করবেন, তাঁদের আরো বেশি সাবধান থাকতে হবে।
এ রকম ভয়াবহ ক্ষতিকারক ম্যালওয়্যার ছাড়াও ফোন ব্যবহারকারীদের বিরক্তিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে অ্যাডওয়্যার। অনেক অ্যাপ্লিকেশনই নির্মাতারা বিনা মূল্যে ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে থাকেন সেটিতে বিজ্ঞাপন দেখানোর মাধ্যমে—যা সাধারণত খুব বেশি সমস্যার সৃষ্টি করে না। তবে কিছু নির্মাতা অতিরিক্ত লোভে অ্যাপ্লিকেশনে স্ক্রিনজোড়া বিজ্ঞাপন, ভিডিও বিজ্ঞাপনও দিয়ে থাকেন, যা খুবই বিরক্তিকর।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি অন্য অ্যাপের মধ্যেও বিজ্ঞাপন দেখায় ও নিজ থেকেই অন্য অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করে ইনস্টল করতে থাকে। এ অবস্থা থেকে বাঁচতে হলে খেয়াল রাখবেন, কোন অ্যাপ্লিকেশন থেকে এমনটি হচ্ছে। অপরিচিত কোনো অ্যাপকে ডিভাইস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যাকসেস দেবেন না। ডাউনলোড করার সময় অ্যাপটি আপনার সেটের কী কী তথ্য বা এক্সেস চাইছে তা খেয়াল রাখুন। যেমন—ক্যামেরা অ্যাপ অবশ্যই ক্যামেরা, মাইক্রোফোন ও ছবিতে অবস্থান যোগ করতে জিপিএস ব্যবহারের অনুমতি চাইবে, চাইবে ফোনের স্টোরেজে ছবি রাখার অনুমতি।
কিন্তু সেটি কখনোই কন্ট্যাক্টস দেখতে চাওয়ার কথা নয়। একইভাবে গান শোনার অ্যাপ ক্যামেরা ব্যবহারের অনুমতি চাইবে না। যদি চায় তাহলে ভাববেন—কোথাও কোনো ঝামেলা আছে।
হ্যাকাররা অ্যাপ স্টোরে তাদের নির্মিত কি-বোর্ড অ্যাপও ছাড়তে পারে। কারণ এই অ্যাপ ব্যবহারকারীদের মধ্যে কে কী টাইপ করছে, তা হ্যাকাররা জানতে পারে। এভাবে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতছাড়ার আশঙ্কা আছে। তাই পরিচিত নির্মাতা বা নামকরা কি-বোর্ড অ্যাপ ছাড়া অন্যগুলো ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
প্রয়োজন না থাকলে কোনো তারবিহীন সেবা যেমন—ব্লুটুথ, ওয়াই-ফাই, জিপিএস ইত্যাদি বন্ধ রাখাই ভালো। যেখানে-সেখানে ফ্রি ওয়াই-ফাই দেখলেই ব্যবহার করা উচিত নয়। খোলা বা অপরিচিত ওয়াই-ফাইয়ের মাধ্যমে তথ্য হাতিয়ে নেওয়া কোনো কঠিন কাজ নয়।
সেট হারালে
হ্যান্ডসেট চুরির ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। খোয়া গেলে শুধু যে সেটই হাতছাড়া হচ্ছে তা নয়, সঙ্গে কন্ট্যাক্টস, মেসেজ, ফটো ও অন্যান্য ডাটাও হারাচ্ছে। স্মার্টফোনে সাধারণত আমরা ই-মেইল, ফেসবুক, গুগল প্লে বা এ ধরনের সাইট ও অ্যাপে চটজলদি লগইন করতে ব্রাউজারেই পাসওয়ার্ড সেভ করে রাখি। ফলে যতক্ষণ না পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা হচ্ছে, সেট যার হাতে চাইলে সেও এসব সাইটে ঢুঁ মারতে পারবে। যদি সেটে আর্থিক লেনদেনের সেবা অ্যাপল পে বা অ্যানড্রয়েড পে চালু থাকে, তাহলে অ্যাকাউন্টের টাকাও নিরাপদ নয়। দেশে যদিও এ সেবা এখনো চালু হয়নি, তবুও অনেক ব্যাংকেরই পিনকোড ফোনে জেনারেট করার অ্যাপ রয়েছে। এটি কাজে লাগিয়ে ক্ষতি করতে পারে দুষ্কৃতকারীরা।
যা করতে হবে
সেট হাতে থাকতেই প্রথমে যা করা উচিত তা হচ্ছে—ফোনে প্যাটার্ন বা পাসওয়ার্ড লক চালু করতে হবে। প্রতিবার আনলকের সময় পিনকোডের বাটনগুলোর অবস্থান বদলে ফেলার অপশনটিও চালু রাখা উচিত, যাতে দূর থেকে খেয়াল করে পিন বোঝা না যায়।
ইদানীং সেটে ফিঙ্গারপ্রিন্ট লক ও আইরিস স্ক্যানার লকও থাকছে। এটি আরো নিরাপদ। এ ছাড়া সেটে ডাটা এনক্রিপশন চালু করতে পারেন, যাতে সেটের ছবি বা অন্যান্য তথ্য কেউ হাতিয়ে নিতে না পারে। এ দুটি অপশন চালু থাকলে অন্তত ডাটা সুরক্ষিত থাকবে। এ ছাড়াও সেট হারানোর পর দ্রুত ই-মেইল বা বিভিন্ন সাইটের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে মোবাইল অপারেটর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে সিম বন্ধ বা রিপ্লেস করতে হবে। সেটে ট্র্যাকিং সফটওয়ার ও অ্যাক্টিভেশন লক চালু করলে চুরি হওয়ার পরও সেটটি অচল করে দেওয়া যাবে। অ্যানড্রয়েড ব্যবহারকারীরা অ্যানড্রয়েড ডিভাইস ম্যানেজার অ্যাপটি ফোনে ইনস্টল করে এ সুবিধাটি পাবেন।
তবে এসব কিছুর থেকে ফোনটি যাতে না হারায় সেটির দিকে লক্ষ রাখা আরো জরুরি। বেশির ভাগ সময়ই আমরা ফোন হারিয়ে থাকি নিজেদের ভুলের কারণেই, অন্যমনস্ক অবস্থায় কোথাও ফোন ফেলে আসা, পকেটে রেখে খেয়াল না করে কী হচ্ছে—বা ভিড়ের মধ্যে ব্যাগে ফোন রাখা, এ সব কিছুই চোরদের জন্য সুখবর। ছিনতাইয়ের থেকে পকেটমার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বহুগুণে বেশি, মনে রাখতে ভুলবেন না। একটু ভুলের কারণে ব্যক্তিগত সব তথ্য হুমকির মুখে পড়ুক সেটি কারো কাছেই কাম্য নয়।
এসডব্লিউ/এসএস/১৩৩৫
আপনার মতামত জানানঃ