বিশ্বের বাতাসে মোট ১৩ ট্রিলিয়ন টন পানি রয়েছে। এই পানি খুব সহজেই স্বচ্ছ পানীয় হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। পৃথিবীতে তিনভাগ পানি, একভাগ স্থল। তাও ১০০ কোটির বেশি মানুষ পর্যাপ্ত খাবার পানি পায় না। পরিবেশবিদদের মধ্যে কেউ কেউ আশঙ্কা করে এটাও বলেন, আগামী দিনে যদি যুদ্ধ বাধে তা হবে পানির জন্যই। সেই আশঙ্কার মেঘ এবার বোধহয় কাটতে চলেছে।
কারণ, বায়ু বা হাওয়া থেকে সাধারণ উপায়ে পরিস্রুত খাবার পানি তৈরি করে গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সিঙ্গাপুরের একদল গবেষক। সেই পানি উৎপাদনে বড় কোনো যন্ত্রের ব্যবহার নেই। নেই কোনো ঝুট-ঝামেলাও। অনেকটা অবাক করা কাণ্ডের মতো!
সম্প্রতি সায়েন্স অ্যাডভান্সেস জার্নালে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের বিজ্ঞানীদের এই সংক্রান্ত একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। তাতেই বায়ু থেকে পানি তৈরির কথা জানিয়েছেন অধ্যাপক হো ঘিম উইয়ের নেতৃত্বাধীন দল।
গবেষকদের দাবি, এই পানি পানেরও যোগ্য। শুধু তাই নয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-এর বেঁধে দেয়া মানদণ্ডতেও পাশ করেছে। বাজারে বিক্রি হওয়া প্যাকেট বা বোতলের পানির সঙ্গেও এই পানি সমানে সমানে টেক্কা দিতেও পারবে।
কিন্তু কীভাবে বায়ু থেকে তৈরি হবে পানি? গবেষকরা জানিয়েছেন, প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত ‘সিম্পল’। ব্যবহার করা হয়েছে একটি হালকা ‘স্মার্ট’ এয়ারোজেল। সেটি পলিমার দিয়ে তৈরি। দেখতে অনেকটা স্পঞ্জের মতো। এটিকে চালাতে ব্যাটারি কিংবা সামান্যতম বিদ্যুতের প্রয়োজন পড়ে না। এই এয়ারোজেলই বাতাস থেকে পানি শুষে নেবে।
আবার সেই পানি পাওয়ার জন্য এটিকে নিংড়োনোরও দরকার নেই। বিজ্ঞানীদের দাবি, প্রতি কেজি এয়ারোজেল থেকে ১৭ লিটার পানি তৈরি করা সম্ভব। এটি বাতাস থেকে পানির অনুকে শুষে এক জায়গায় নিয়ে আসে। তারপর তাকে তরলে পরিণত করে।
তীব্র গরমের সময় পানির জন্য হাহাকার পড়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। তা নিয়েও আশার কথা শুনিয়েছেন সিঙ্গাপুরের গবেষকরা। তাদের বক্তব্য, গরমের দিনে আরো দ্রুত কাজ করে এই এয়ারোজেল।
এটি ৯৫ শতাংশ জলীয়বাষ্পকে তরলে পরিণত করতে সক্ষম। ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার সময় টানা এক মাস বাতাস থেকে পানি তৈরি করেছে এটি।
গবেষকদের মতে, এর আগেও বায়ু থেকে পানি তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু, সেক্ষেত্রে সূর্যের আলো, বিদ্যুৎসহ একগুচ্ছ উপাদান থাকা জরুরি ছিল। কিন্তু, পলিমার দিয়ে তৈরি ‘স্মার্ট’ এয়ারোজেলে তেমন কোনো ঝঞ্ঝাট নেই।
অধ্যাপক উইয়ের কথায়, এই আবিষ্কারের ফলে যেকোনো আবহাওয়ায় খাবার পানি তৈরি করা সম্ভব। এর ফলে অত্যন্ত কম খরচে বড় সমস্যার সমাধান হতে পারে। তাহলে কী এবার বাণিজ্যিকভাবেও এই পানির ব্যবহার শুরু হবে? ইতিবাচক জবাব দিয়েছেন গবেষকরা।
তারা জানিয়েছেন, বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কথা চলছে। খেলা এবং সারভাইভাল কিটে এই প্রযুক্তি অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে।
এদিকে, ভারতের হায়দারাবাদের সেকেন্দ্রাবাদ রেল স্টেশনে পাওয়া যাচ্ছে বাতাস থেকে তৈরি বিশুদ্ধ এই খাবার পানি। প্রযুক্তির নাম মেঘদূত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উৎসাহে, মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্পে এই প্রযুক্তি বানিয়েছে মৈত্রী অ্যাপটেক নামে একটি ভারতীয় সংস্থা। শহরের নামি পানির কোম্পানিগুলো যখন ১ লিটার পানি বেচছে ২০ টাকায়, এই পানি মিলছে অর্ধেকেরও কম দামে।
এক লিটারের একটি পানির বোতলের দাম পড়ছে ৮ রুপি। ক্রেতা বোতল দিলে মাত্র ৫ রুপিতেই মিলবে এক লিটার পানি। ইকোনমিক টাইমস।
ভারতীয় গবেষণা দলের বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ পানি থেকে লবণ সরাতে আমাদের বেগ পেতে হয়েছে। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রযুক্তিটিতে হাইড্রোজেল ব্যবহার করেছেন বিজ্ঞানীরা, যা ক্যালসিয়াম ক্লোরাইডকে সলিড থাকতে সাহায্য করেছে।
এছাড়াও এই যন্ত্রে ব্যবহার হয়েছে ছোট কার্বন টিউব। ৬০ শতাংশ আর্দ্রতায় ৩৫ গ্রামের একটি যন্ত্র এক রাতে বাতাস থেকে ৩৭ গ্রাম পানি সংগ্রহ করেছে। পরদিন সূর্য উঠলে এই পানি আবার বাতাসে ফিরে গিয়েছে। কম খরচে ভালো পারফর্ম করার জন্য নাম রয়েছে হাইড্রোজেলের।
এসডব্লিউ/এসএস/১২৩৫
আপনার মতামত জানানঃ