প্রিগোজিন বলেছেন, ‘এটি সামরিক অভ্যুত্থান নয়, বরং রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্বে ‘শয়তানি’ বন্ধ এবং ন্যায়বিচারের মিছিল। আমাদের কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই সেনাদের ওপর হস্তক্ষেপ করে না।’
রাশিয়ার ভাড়াটে সেনা সংগঠন ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন রুশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে। প্রিগোজিন ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, রোস্তভ সেনা সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তার সেনারা। সিএনএনের খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ওয়াগনার অফিশিয়াল টেলিগ্রাম চ্যানেলে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে প্রিগোজিন বলেছেন, আমরা সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর দক্ষিণাঞ্চলের সদর দপ্তরে রয়েছি। বিমানঘাঁটিসহ রোস্তভের সামরিক সুবিধাগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’
ভিডিও বার্তায় প্রিগোজিন জানিয়েছেন, তার সেনারা এই শহর অবরুদ্ধ করবে এবং রাজধানী মস্কোর দিকে এগিয়ে যাবে—যতক্ষণ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই সোইগু এবং জেনারেল ভেলেরি গেরাসিমোভ তাদের সঙ্গে দেখা করতে না আসছেন।
রুশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ওয়াগনারের বিদ্রোহ ঘোষণারুশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ওয়াগনারের বিদ্রোহ ঘোষণা
প্রিগোজিন বলেছেন, তিনি রোস্তভ-অন-দনে আছেন এবং তার সৈন্যরা অফিসারদের দায়িত্ব পালনে বাধা দিচ্ছে না। প্রধান সদর দপ্তর, প্রধান নিয়ন্ত্রণ পয়েন্ট স্বাভাবিক হিসাবে কাজ করছে, কোনো সমস্যা নেই।
এর আগে ক্রেমলিন তাকে ‘অস্ত্রধারী বিদ্রোহী’ বলে অভিযুক্ত করার কয়েক ঘণ্টা পরেই তিনি বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। প্রিগোজিন বলেন, ‘রুশ বাহিনী আমাদের বিভিন্ন সেনা শিবিরের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় আমাদের অনেক সহযোদ্ধা সেনাসদস্যের মৃত্যুও হয়েছে। এ কারণে পিএমসি ওয়াগনারের সর্বোচ্চ নির্বাহী ফোরাম কমান্ডার্স কাউন্সিল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, সামরিক নেতৃত্বের হাত থেকে রাশিয়াকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে।’
ইয়েভজেনি প্রিগোজিন আরও বলেছেন, ওয়াগনার যোদ্ধারা ইউক্রেন থেকে রাশিয়ার সীমান্ত পেরিয়ে রোস্তভ শহরে প্রবেশ করেছে। তাদের সামনে যে-ই আসুক না কেন, সে মারা পড়বে। এ অবস্থায় স্থানীয় গভর্নর সেখানকার নাগরিকদের শান্ত এবং বাড়ির ভেতরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
যা বলছে পুতিন
রাশিয়ার ভাড়াটে আধাসামরিক বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের নেতা ইয়েভগেনি প্রিগোশিন বিদ্রোহ করার পরে প্রথমবারের মতো ভাষণ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
জাতির উদ্দেশে সংক্ষেপে এক টেলিভিশন ভাষণে মি. পুতিন বলেন, ওয়াগনার গ্রুপ যা করেছে সেটি ‘বেইমানি’ এবং ‘রাশিয়ার পিঠে ছুরি চালানোর’ মতো। রাশিয়ার সব বাহিনীকে সংহত থাকার আহবান জানান মি. পুতিন।
তিনি বলেন, পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় সব নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাশিয়াকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট সতর্ক করে দিয়ে বলেন, রাশিয়ার সমাজকে যারা বিভক্ত করছে তারা কোনভাবেই শাস্তি এড়াতে পারবে না।
ভাষণে পুতিন ইভেয়গেনি প্রিগোশিনের নাম উল্লেখ করেননি। তবে তিনি ওয়াগনারের ভাড়াটে সৈন্যদের কথা উল্লেখ করে রাশিয়ার পক্ষে লড়াই করার জন্য তাদের প্রশংসা করেন।
ভাষণে ভ্লাদিমির পুতিন ১৯১৭ সালের রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের উদাহরণও টেনেছেন, যখন রাশিয়ানদের হাতে রাশিয়ানরা নিহত হয়েছিল।
এদিকে ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় বলছে, ওয়াগনার গ্রুপ এখন মস্কোর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এরই মধ্যে ওয়াগনার গ্রুপ রাশিয়ার আরেকটি শহর দখল করে নেবার খবর পেয়েছে বিবিসি রাশিয়ান সার্ভিস।
রোস্তভ শহরের পর ভরোনেজ শহরের সব সামরিক স্থাপনা দখল করে নিয়েছে ওয়াগনারের সৈন্যরা। ভরোনেজ শহরটি রোস্তভ ও মস্কোর মাঝামাঝি অবস্থিত। ভরোনেজ অঞ্চলের গভর্নর আলেকজান্ডার গুসেভ সতর্ক করে বলেছেন যে সৈন্যদের গতিবিধি নিয়ে অনেক ভুয়া খবর ছড়াচ্ছে।
তিনি বলেন, সন্ত্রাসী তৎপরতার বিরুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ভরোনেজ অঞ্চলে সামরিক পদক্ষেপ নিচ্ছে। মস্কোর চারদিকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক জোরদার করা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
টেলিগ্রামে পোস্ট করা এক বার্তায় ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিন বলেন, তাদের ২৫ হাজার সৈন্য রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
মস্কো থেকে বিবিসির সংবাদদাতা স্টিভ রোসেনবার্গ বলছেন, পুরো ঘটনাটি ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য খুবই বিব্রতকর হয়ে পড়েছে।
অস্ত্রধারী ব্যক্তিরা সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে রাশিয়ার দক্ষিনাঞ্চলের সামরিক সদরদপ্তর ঘিরে রেখেছে। এর অসংখ্য ভিডিও এখন অনলাইনে দেখা যাচ্ছে। দক্ষিনাঞ্চলের সামরিক সদরদপ্তর রাশিয়া জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এখান থেকে ইউক্রেন যুদ্ধ পরিচালনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ সদর দপ্তরটি দক্ষিনাঞ্চলের রোস্তভ অন-ডন শহরে অবস্থিত।
তবে এটি পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে না যে অস্ত্রধারী ব্যক্তিরা রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সদস্য নাকি ওয়াগনারের সদস্য।
এসডব্লিউএসএস/২০৪০
আপনার মতামত জানানঃ