মহাকাশের বুকে জ্বলন্ত এক অগ্নিকুণ্ড। আয়তন গোটা সৌরজগতের থেকেও একশো গুণ বড়ো। তবে কি এই বিশাল অগ্নিকুণ্ড কোনো দৈত্যাকার নক্ষত্র? নাকি অন্য কোনো মহাজাগতিক বস্তু? না, কোনোটাই নয়। বরং, এই আগুনের গোলা প্রকাণ্ড এক মহাজাগতিক বিস্ফোরণ।
আরও ভালো করে বলতে গেলে, মানব ইতিহাসে নথিভুক্ত হওয়া সবচেয়ে বড়ো এবং দীর্ঘস্থানীয় মহাজাগতিক বিস্ফোরণ। জ্যোতির্বিদ্যার ভাষায় যাকে বলা হয় সুপারনোভা।
২০২০ সাল। ক্যালিফোর্নিয়ার জুইকি ট্রানজিয়েন্ট ফ্যাসিলিটির টেলিস্কোপের মাধ্যমে প্রথম এই অগ্নিগোলককে শনাক্ত করেছিলেন গবেষকরা। তবে সেটি যে কোনো মহাজাগতিক বিস্ফোরণ, তা তখনও জানা ছিল না গবেষকদের।
৮ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত মহাজাগতিক বস্তুটির ছবিও যে সেই টেলিস্কোপে খুব একটা স্পষ্ট ছিল, এমনটাও নয়। ফলে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, এই মহাজাগতিক অগ্নিকুণ্ড আদতে কোনো নক্ষত্র, গ্যাসের মেঘ কিংবা নেবুলা।
গত বছর এই ছবি নিয়ে নতুন করে গবেষণা শুরু করেন ইউনিভার্সিটি অফ সাউদাম্পটনের বিজ্ঞানীরা। তাঁরাই প্রথম সন্দেহ করেন, কোনো মহাজাগতিক বস্তু নয় এটি। বরং, এই অগ্নিকুণ্ড থেকে ক্রমাগত বিচ্ছুরিত হচ্ছে বিকিরণ। এরপর বিভিন্ন টেলিস্কোপের মাধ্যমে পৃথক পৃথকভাবে সংগ্রহ করা হয়েছিল অগ্নিকুণ্ডটির ছবি।
টেলিস্কোপ নেটওয়ার্কিং-এ তোলা সেই ছবির প্রেক্ষিতেই সম্প্রতি সামনে এল, আদতে এটি একটি মহাজাগতিক বিস্ফোরণ বা সুপারনোভা। গবেষকরা এই আশ্চর্য বিস্ফোরণের নাম দিয়েছেন ‘এটি২০২১এলডব্লুএক্স’।
সাধারণত সুপারনোভা বা মহাজাগতিক বিস্ফোরণ স্থায়ী হয় কয়েকদিন থেকে কয়েক মাস অবধি। তবে সংশ্লিষ্ট সুপারনোভাটির বিস্ফোরিত হয়ে চলেছে প্রায় ৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে। এমন আশ্চর্য ঘটনা এর আগে কোনোদিনই প্রত্যক্ষ করেননি গবেষকরা।
পাশাপাশি আকার-আয়তন-প্রাবল্যের দিক থেকেই তা এখনও পর্যন্ত রেকর্ড করা সুপারনোভাদের মধ্যে সবচেয়ে বড়ো। এতদিন পর্যন্ত বৃহত্তম মহাজাগতিক বিস্ফোরণ হিসাবে ধরে নেওয়া হত, ২০২২ সালে শনাক্ত করা ‘বোট’ গামা-রে বিস্ফোরণকে।
এবার তার প্রাবল্যকেও ছাপিয়ে গেছে এই সুপারনোভা। কিন্তু এই মহাজাগতিক বিস্ফোরণের নেপথ্য কারণ কী?
গবেষকদের মতে, এই প্রকাণ্ড অগ্নিকুণ্ড আদতে ছিল মহাশূন্যে পুঞ্জিভূত গ্যাসের মেঘ। তার আয়তনও নেহাত কম ছিল না। এই প্রকাণ্ড গ্যাসপুঞ্জকে গিলে ফেলে সূর্যের থেকে কয়েক হাজার গুণ বড়ো একটি দৈত্যাকার ‘সুপারম্যাসিভ’ ব্ল্যাকহোল। আর তা থেকেই এই বিস্ফোরণের সূত্রপাত।
তবে ৩ বছর ধরে এমন বিস্ফোরণ ঘটে চলা জ্যোতিবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে খুবই অস্বাভাবিক ঘটনা। ফলে তা নিয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণার অবসর রয়েছে বলেই ধারণা বিজ্ঞানীদের।
তবে মজার বিষয় হল, রয়্যাল অস্ট্রোনমিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত এই বিশেষ গবেষণাপত্র বিজ্ঞানীমহলে ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলে দিলেও, এখনও পর্যন্ত এই জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডের ঔজ্জ্বল্য নির্ধারণ করতে পারেননি গবেষকরা। তবে মহাবিশ্বে অবস্থিত যে কোনো নক্ষত্রের থেকেই এই বিস্ফোরণ কমপক্ষে ১০ গুণ বেশি উজ্জ্বল বলেই অভিমত তাঁদের।
এসডব্লিউএসএস/১৩৪০
আপনার মতামত জানানঃ