জিওফ্রে হিন্টন হলেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষক। তার বেশিভাগ সময় কেটেছে কৃত্রিম প্রযুক্তি নিয়ে। তিনি দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন টেক জায়েন্টে গুগলের সঙ্গে। পরবর্তী দিনে ঝুঁকি নিয়ে আসছে। সেই কারণেই তিনি গুগল ছেড়েছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের জীবনে খারাপ প্রভাব বিস্তার করতে পারে। প্রচুর মানুষ চাকরি হারাতে পারে। সামাজিক জীবনেও প্রভাব ফেলতে পারে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
অনেক আগে থেকেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে বিশ্বের বিশেষজ্ঞরা উদ্বিগ্ন। এ কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তারা মনে করছেন, এই প্রযুক্তিই একদিন মানুষের বিপরীতে দাঁড়িয়ে যাবে। মানুষকে হত্যা করবে।
কিন্তু সেই একই রকম কথা এবার জানান দিল রোবটও। ভবিষ্যতে কি কঠিন অবস্থার মুখোমুখি হতে হবে তা জানান দিয়েছে রোবট। এমন এক অত্যাধুনিক রোবটের নাম দেয়া হয়েছে অ্যামেকা। সে নিজেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে পরিচালিত।
এর ডিজাইনার বলেছেন, বিশ্বে এটিই হচ্ছে সর্বাধুনিক উন্নত মানবীয় রোবট। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে ভীতির কথাও সে বর্ণনা করেছে।
গত সপ্তাহে লন্ডনে আয়োজিত ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অব রোবোটিক্স অ্যান্ড অটোমেশন বিষয়ক সিম্পোজিয়ামে ‘ওপেন এআই’-এর চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে পর্যবেক্ষকদের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বিস্মিত করেছে সবাইকে।
অ্যামেকা’কে তৈরি করেছে কর্নওয়ালভিত্তিক ইঞ্জিনিয়ার্ড আর্টস নামের একটি কোম্পানি। এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উইল জনসন তার কাছে জানতে চান, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দৃশ্যপট’ নিয়ে একটি দৃশ্যের বর্ণনা দিতে বলে। অ্যামেকা তার এ প্রশ্নের জবাব দেয় সাবলীলভাবে।
সে জানায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং রোবোটিক্স নিয়ে সবচেয়ে যে ভীতিকর পরিস্থিতি আমি বিশ্বে কল্পনা করি তা হলো, রোবটরা হয়ে উঠবে অতি মাত্রায় শক্তিশালী। এতটাই শক্তি তারা সঞ্চয় করবে যে, তারা তাদের অজান্তেই মানবজাতিকে নিয়ন্ত্রণ করবে অথবা পরিচালনা করতে সক্ষম হবে।
এসব কথা বলার সময় অ্যামেকার মুখমণ্ডলে মানবীয় এক ভাবধারা ফুটে ওঠে। এদিক ওদিক চোখ ঘুরিয়ে সে বলে- এর ফলে একটি নিষ্পেষিত সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠবে, যেখানে ব্যক্তিবিশেষের অধিকারের প্রতি আর সম্মান দেখানো হবে না।
শুধু যে অ্যামেকাই প্রথম এমন পূর্বাভাস দিয়েছে এমন নয়। বিশেষজ্ঞরা এবং এ বিষয়ের পণ্ডিতজনরা সম্প্রতি এ বিষয়ে সতর্কতা দিয়েছেন। তারা বলেছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এক বিপর্যয় ঢেকে আনছে। গত মাসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘ওপেন এআই’ ‘অ্যানথ্রোপিক’ এবং গুগলের কর্মকর্তারা একটি বিবৃতি দিয়েছেন।
তাতে তারা বলেছেন বৈশ্বিক অগ্রাধিকারে রাখতে হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ঝুঁকিকে। সেন্টার ফর এআই সেফটির আয়োজনে ওই বিবিৃতিতে বলা হয়, মহামারি এবং পারমাণবিক যুদ্ধের মতোই সামাজিক মাত্রায় ঝুঁকি রয়েছে এক্ষেত্রেও।
অ্যামকো’কে যে উইল জনসন তৈরি করেছেন তাকে সে বলেছে, আমরা এখনও কোনো বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে পড়িনি। তবে এআই এবং রোবোটিক্সের সঙ্গে সম্পর্কিত বড় রকমের ঝুঁকি এবং বিপদের বিষয়ে সচেতন হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এখন এসব প্রযুক্তি এমনভাবে তৈরি হতে হবে যাতে ভবিষ্যতে কোনো বড় ক্ষতি বা নেতিবাচক প্রভাব এড়ানো যায়।
ভীতি নিয়ে অ্যামেকা’র এই দৃষ্টিভঙ্গিতে দর্শকরা বিস্মিত হয়েছেন। এ নিয়ে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য করছেন। একজন লিখেছেন, যদি আমরা এআইয়ের আক্রমণের মুখে পড়ি তাহলে আমাদের মুক্তির পথ কি হবে। এ সব নিয়ে পশ্চিমা দুনিয়ায় তোলপাড় চলছে।
এসডব্লিউএসএস/১৪২৫
আপনার মতামত জানানঃ