ব্লু হোল হল সমুদ্রের নীচে পাওয়া বড় সিঙ্কহোল বা বিশাল গর্ত, যা উপকূলীয় এলাকায় পাওয়া যায়। অর্থাৎ সমুদ্রের মাঝে বা কোনও দ্বীপের আশেপাশে দৈত্যাকার রন্ধ্রকে ব্লু হোল বলা হয়। সমুদ্রের স্বাভাবিক গভীরতার চেয়ে এই ব্লু হোল গুলির গভীরতা অনেক বেশি। ব্লু হোলের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত সূর্যালোক পৌঁছয় না। তবুও এতে অনেক প্রবাল, সামুদ্রিক কচ্ছপ এবং হাঙ্গর সহ উদ্ভিদ এবং সামুদ্রিক জীবন রয়েছে। তারা যেন দীর্ঘ সময় ধরে পরিবেশের সঙ্গে বেশ ভালভাবেই খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছে। আকাশ থেকে সমুদ্রে চোখ রাখলেও আলাদা করে ব্লু হোলের অস্তিত্ব বোঝা যায়। কারণ ওই সামুদ্রিক রন্ধ্রগুলির উপরের জলভাগকে, আশপাশের জলভাগের চেয়ে বেশি নীল দেখায়।
বিজ্ঞানীদের পক্ষে যে কোনও ব্লু হোল খুঁজে পাওয়া বেশ কষ্টকর। ব্লু হোলগুলিতে পৌঁছানো সহজ নয়, তাই বিজ্ঞানীরা সেগুলি সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানাতে পারে না। এতে অক্সিজেন কম থাকে এবং সূর্যের আলোও পৌছায় না। এই অবস্থাতেও বিজ্ঞানীরা হাল ছাড়তে নারাজ। ২০১৬ সালে বিশ্বের গভীরতম ব্লু হোল (Deepest Blue Hole) দক্ষিণ চিন সাগরে পাওয়া গিয়েছিল। যার নাম ড্রাগন হোল। এটিকে ৯৮০ ফুটেরও বেশি গভীর বলে মনে করা হয়। তার ৭ বছর পরে আবারও নতুন একটি ব্লু হোলের আবিষ্কার করলেন বিজ্ঞানীরা। মেক্সিকোর ইউকাটান উপদ্বীপের উপকূলে বিশ্বের দ্বিতীয় গভীরতম ব্লু হোল আবিষ্কৃত হয়েছে। চেতুমাল উপসাগরে এই বিরাট গর্তটি প্রায় ৯০০ ফুট গভীর এবং ১,৪৭,০০০ বর্গফুট এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এই নতুন ব্লু হোলকে কেন্দ্র করে আর কী জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা?
সূত্র মতে, বিজ্ঞানীরা মেক্সিকোতে ইউকাটান উপদ্বীপের উপকূলে এই বিশাল নীল গর্ত আবিষ্কার করেছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, বিশালাকার ব্লু হোলটি , যা প্রায় ৯০০ ফুট গভীর। এটি বিজ্ঞানীদের দ্বারা আবিষ্কৃত দ্বিতীয় গভীরতম ব্লু হোল হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সমুদ্রবিজ্ঞানীরা বলেন, অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে সমুদ্রে তৈরি হওয়া গভীর গর্তে ।
মধ্য আমেরিকার উত্তর-পূর্ব উপকূলের বেলিজ সিটি এলাকায় এমন ব্লু হোল আছে যাকে ইউনেস্কো স্বীকৃতি দিয়েছে। এমন আরও একটি গভীরতম ব্লু হোলের খোঁজ মিললো মেক্সিকোতে। একটি ব্লু হোল আসলে একটি বিশাল আন্ডারওয়াটার সিঙ্কহোল, যা কয়েকশ মিটার লম্বা। সমুদ্রের স্বাভাবিক গভীরতার চেয়ে এই ব্লু হোলগুলির গভীরতা অনেক বেশি হয়। বড়সড় গর্তের মতো আকারের এই সব ব্লু হোলের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত সূর্যালোক পৌঁছায় না। ফলে এর গর্ভ অন্ধকার থাকে এবং তার জলকে দেখে মনে হয় অনেক বেশি গাঢ় নীল। এর ভেতরে অক্সিজেন পৌঁছায় না।
মনে করা হয়, এই ব্লু হোলগুলি বরফ যুগে গঠিত হয়েছিল যখন সমুদ্রের স্তর বর্তমান স্তরের চেয়ে ১০০ থেকে ১২০ মিটার কম ছিল।
এখানে প্রশ্ন সমুদ্রের নীচে ব্লু হোল কীভাবে তৈরি হয়। মূলত সমুদ্রের জল চুনাপাথরের সঙ্গে মিলিত হলে ব্লু হোল তৈরি হয়। চুনাপাথরে অনেক ছিদ্র থাকে। তাই জল সহজেই পাথরের মধ্যে প্রবেশ করে। এতে জলের রাসায়নিকগুলি চুনাপাথরের সঙ্গে বিক্রিয়া করে এবং এটি ভেঙে যায়। বিশ্বের অনেক ব্লু হোল বরফ যুগে তৈরি হয়েছিল বলে মনে করা হয়। উপকূলীয় অঞ্চলে বারবার বন্যা ও নিষ্কাশনের ফলে শিলা ক্ষয় হয় এবং শূন্যতা তৈরি হয়। তখনও সেই সব হোলগুলি এতটাও গভার ছিল না। কিন্তু পরবর্তীতে সমুদ্রের জলের উচ্চতাও বাড়তে শুরু করে। তখন এই পাথরের কাঠামো জলের নীচে ডুবে যায়। আর তখনই কয়েক জায়গার পাথর ভেঙে সৃষ্টি হয় ব্লু হোল।
লাইভসায়েন্সের মতে, নতুন পাওয়া ব্লু হোলটি মেক্সিকো উপকূলে চেতুমাল উপসাগরে অবস্থিত প্রায় ৯০০ ফুট গভীর। গর্তটি ১ লক্ষ ৪৭ হাজার বর্গফুট এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত গভীর নীল গর্তটি ২০১৬সালে দক্ষিণ চীন সাগরে আবিষ্কৃত হয়েছিল এবং এটি ড্রাগন হোল নামে পরিচিত। রেকর্ড অনুসারে, এটি ৯৮০ ফুটের বেশি গভীর। মেক্সিকো ব্লু হোলের নাম দেয়া হয়েছে তাম জা, যার অর্থ ‘গভীর পানি ‘। এটির প্রায় ৮০ ডিগ্রি ঢালসহ খাড়া দিক রয়েছে, যেখানে গর্তের মুখ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৫ ফুট নীচে। এখন এই নীল গর্তের রহস্য উন্মোচনের চেষ্টায় নেমেছেন বিজ্ঞানীরা।
এসডব্লিউ/এসএস/১৩৩৫
আপনার মতামত জানানঃ