মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষায় তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) মানুষদের প্রতি বৈষম্য এখনো বিদ্যমান। সম্প্রতি জাতিয় পরিচয় পত্রে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের অন্তর্ভুক্তি করা সিদ্ধান্তের পর এবার নতুন সুখবর হলো উচ্চশিক্ষায় তাদের জন্য কোটা ব্যবস্থা চালু করতে চায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
সরকারের কাছে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ দিতে বিশেষ কোটা ব্যবস্থার সুপারিশ করেছে ইউজিসি। শুধু তাই নয়, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষভাবে ভর্তির সুযোগ দেওয়ারও সুপারিশ দিয়েছে সংস্থাটি।
কমিশনটি তাদের ৪৬তম বার্ষিক প্রতিবেদনের মাধ্যমে সরকারের কাছে এ সুপারিশ করেছে। গত ২৭ ডিসেম্বর এই প্রতিবেদনটি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের হাতে তুলে দিয়েছে ইউজিসি। এই সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে হিজড়াদের সংগঠনগুলো ইউজিসিকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে হিজড়া ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার বিশেষ সুযোগ দেওয়াসহ ২৪টি সুপারিশ করেছে কমিশন। প্রতিবেদনটির সুপারিশ অংশের ২২ নম্বর সুপারিশে বলা হয়েছে, সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাপূর্ণ শিক্ষা নিশ্চিত করা বর্তমান সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। সমাজের একটি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ প্রতিবন্ধী। উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে পিছিয়ে পড়া প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষভাবে ভর্তির সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ভর্তির নির্দেশিকা তৈরি, কারিকুলাম প্রণয়ন এবং ভিন্নভাবে পরীক্ষা নেওয়াসহ তাদের সুরক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারে। এ ছাড়া সমাজের পিছিয়ে পড়া তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিতকল্পে কোটা নির্ধারণের জন্য সরকার কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারে।
২০১৯ সালে পিকেএসএফ থেকে প্রকাশিত এক জার্নালে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে হিজড়া জনগোষ্ঠীর সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে হিজড়ার সংখ্যা ২৪ হাজারের কিছু বেশি। অন্যদিকে হিজড়া কল্যাণ ফাউন্ডেশনের দাবি বাংলাদেশে হিজড়া জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ১২ লাখ! সরকারি হিসাব মতে, দেশে হিজড়ার সংখ্যা ১০ হাজার (ব্র্যাক ২০১৪)। তবে হিজড়াদের অধিকার আদায়ে কর্মরত বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশে হিজড়ার সংখ্যা ৩০ হাজার থেকে দেড় লাখ হতে পারে।
উচ্চ শিক্ষা স্তরে শিক্ষার বিশেষ সুযোগ সৃষ্টির সুপারিশে ইউজিসিকে ধন্যবাদ জানিয়েছে হিজড়াদের সংগঠন সচেতন সমাজসেবা হিজড়া সংঘ। এই সংগঠনের নেত্রী ইভান আহমেদ কথা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যুগের পর যুগ ধরে আমরা হিজড়ারা বঞ্চিত। লেখাপড়ার সুযোগ নেই, চাকরির সুযোগ নেই। সরকার বিভিন্ন সময় উদ্যোগ নিয়েও থেমে যায়। তবে ইউজিসির সুপারিশে আমরা আশার আলো দেখতে পারছি। শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টিতে আমাদের জন্য কোটা ব্যবস্থা, আলাদা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পৃথক কারিকুলাম থাকলে আমরা আর অন্ধকারে থাকব না। আমরাও এগিয়ে যাব, দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে আমরাও হাল ধরব শক্ত করে।’
হিজড়াদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টিতে কোটার ব্যবস্থার ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘একটি দেশের সব শ্রেণির জনগোষ্ঠীর শিক্ষা গ্রহণের সাংগঠনিক অধিকার রয়েছে। সে হিসেবে হিজড়াদেরও সেই অধিকার রয়েছে। কিন্তু তাদের জন্য বিশেষ নজর দেওয়ার প্রয়োজন। না হলে তারা এভাবেই থেকে যাবে যুগের পর যুগ। এ কারণেই আমরা বিষয়টি সামনে আনার চেষ্টা করছি। সরকার যদি বিশেষভাবে তাদের দিকে নজর দেয় তাহলে তারাও মূলধারায় ফিরে আসবে। আমরা চেষ্টা করছি তাদের জন্য উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করার।’
তিনি আরও বলেন, ‘এগুলো বাস্তবায়ন করতে সময়ের প্রয়োজন। অনেক আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে এটা নিয়ে।’
এসডাব্লিউ/ডিডিআর/নাসি/১৫০০
আপনার মতামত জানানঃ