বিশ শতকের গোড়ার দিকের ঘটনা। নতুন একটি জাহাজ নিয়ে সারা পৃথিবীতে তখন হইছই। জাহাজটি এতই বড় ও মজবুত যে এর নির্মাতারা ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন স্বয়ং ঈশ্বরও এই জাহাজকে ডুবাতে পারবেন না! সমুদ্রে একটি পাটকাঠি ডুবে যাবে তবুও এই জাহাজ ডুববে না! জাহাজটির নাম টাইটানিক।
অথচ সবার ধারণা ভুল প্রমাণ করে ১৯১২ সালের ১৪ এপ্রিল রাত ১১ টা ৪৫ মিনিটে উত্তর আটলান্টিক সমুদ্রের ডুবন্ত একটি আইসবার্গের সাথে ধাক্কা লেগে সমুদ্রের নীল জলে তলিয়ে যায় এই টাইটানিক। তাও আবার প্রথম যাত্রাতেই! দুর্ঘটনায় মৃত্যু ঘটে ১,৫১৩ জন যাত্রীর। ভাগ্যবান ৬৮৭ জন যাত্রীর জীবন বাঁচলেও পরবর্তী জীবনে তাদের বয়ে বেড়াতে হয়েছে এই দু:স্বপ্ন।
টাইটানিক জাহাজটির ডিজাইনার ‘থমাস এন্ডু’র দাবি ছিল টাইটানিক কোনো দিন ডুবানো সম্ভব হবে না। আসলে তিনি গায়ের জোরে সে কথা বলেননি। টাইটানিক জাহাজটির ডিজাইন এমনভাবে করা হয়েছে যা সকল প্রকার ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মধ্যেও সমুদ্রে বুক চিতিয়ে চলতে পারবে। কিন্তু যেদিন টাইটানিক ডুবে যায় সেদিন তার বয়স হয়েছিল মাত্র ৪ দিন। যেই জাহাজ জীবনেও ডোবানো সম্ভব নয়, সেই জাহাজ কিনা মাত্র ৪ দিনেই ডুবে গেল। আপাতদৃষ্টিতে আইসবার্গের সাথে ধাক্কায় টাইটানিক ডুবির কারণ বলা হলেও এর কোনো সঠিক যুক্তি কোনো গবেষকই দিতে পারেননি। একেক জন একেক ধরনের কারণ উদঘাটন করেছেন। এর ফলে এই জাহাজ ডুবির ঘটনা রহস্যাবৃতই রয়ে গেছে।
সেই ঘটনার পর কেটে গেছে ১০০ বছরেরও বেশি সময়। তবুও টাইটানিক নিয়ে কল্পকাহিনী, মিথ কিংবা বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব সময়ের সাথে সাথে আরো ডালপালা ছড়াচ্ছে। আজ আমরা জানবো এমনই একটি জনপ্রিয় ষড়যন্ত্র তত্ত্ব সম্পর্কে।
টাইটানিকের সাথে ডুবে মারা যাওয়া ১,৫১৭ জনের মধ্যে একজন ছিলেন উইলিয়াম স্টিড। উইলিয়াম স্টিড পেশায় ছিলেন একজন ব্রিটিশ সম্পাদক। তবে বেশ কিছু সময় ধরে তিনি আত্মিক ও আধ্যাত্মিক ব্যাপার নিয়ে ঘাটাঘাটি করেছিলেন। এই স্টিডই প্রথম দাবী করেন একটি অভিশপ্ত মমির কারণে লন্ডনে বেশ কিছু রহস্যজনক মৃত্যু ঘটছে।
স্টিড টাইটানিকের বেশ কয়েকজন যাত্রীর কাছে এই অভিশপ্ত মমির গল্প করেন। টাইটানিক ডুবে যাওয়ার কিছুদিন পর ওয়াশিংটন পোস্ট এই মমি এবং উইলিয়াম স্টিডকে নিয়ে একটি শিরোনাম করে। তখন ব্যাপারটি বেশ হইচই রব তৈরি হয় চারপাশে।
টাইটানিক জাদুঘরের পরিচালক বার্নস বলেন, অনেকে বিশ্বাস করে, সেই মমিটিও টাইটানিকে তোলা হয়েছিলো। ব্রিটিশ মিউজিয়াম নাকি সেই মমিটি বিক্রি করে দিয়েছিলো এবং তা এর আমেরিকান ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য জাহাজে তোলা হয়েছিলো।
যদিও সত্যিটা হচ্ছে, টাইটানিকে কোনো মমিই তোলা হয়নি এবং অভিশপ্ত আখ্যা পাওয়া সেই মমিটি এখনো ব্রিটিশ মিউজিয়ামে বহাল তবিয়তেই আছে।
এদিকে, দীর্ঘ ৭৩ বছর পর ১৯৮৫ সালে যন্ত্রচালিত অনুসন্ধান শুরু করে একদল বিজ্ঞানী। যেই স্থানটিতে টাইটানিক জাহাজটি ডুবেছিল সেই স্থানের ১৩,০০০ মিটার পানির নিচে সন্ধান পান টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের। রবার্ট বালার্ড নামক ফরাসি এই বিজ্ঞানীর ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল টাইটানিককে খুঁজে বের করবেন। বড়ো হয়ে তিনি সেই কাজেই নামলেন।
সন্ধান পেলেও এর রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। কিংবদন্তীর টাইটানিক জাহাজ ডুবি বিষয়ে ইংরেজ কবি শেলি তার ওজিম্যানডিয়াস কবিতায় মত প্রকাশ করেছেন এভাব, “সমুদ্রের নীচে বালি, পলি, আর প্রবালের মৃতদেহের পাশে ছড়িয়ে আছে বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞান ও প্রকৃতির অহমিকার শেষ চিহ্ন।”
এসডব্লিউএসএস/১৬৫৫
আপনার মতামত জানানঃ