যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক কি টার্নিং পয়েন্টের দিকে যাচ্ছে? বাংলাদেশ নিয়ে যারা পর্যবেক্ষণ করেন, তারা গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের তরফে উত্তেজনাপূর্ণ সব কূটনৈতিক আলোচনার প্রেক্ষাপটে, বিশেষ করে ২০২১ সালের শেষে অনুষ্ঠিত এবং ২০২৩ সালের মার্চে অনুষ্ঠিতব্য দ্বিতীয় গণতন্ত্র শীর্ষ সম্মেলন থেকে বাংলাদেশকে বাদ দেয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছেন।
দক্ষিণ এশিয়ার মানবাধিকার এবং গণতন্ত্রকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত নতুন মাসিক প্রকাশনা ‘সাউথ এশিয়া পারসপেক্টিভস’-এর উদ্বোধনী সংখ্যার ‘লিড স্টোরি’তে এমন মন্তব্য করে লেখা হয়েছে: উচ্চ পর্যায়ের কোনো মার্কিন কূটনীতিকের সর্বশেষ সফরটি ছিল ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সেলর ডেরেক শোলে ঢাকা এসে আবারো ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ নির্বাচন, মানবাধিকার সুরক্ষা এবং একটি অবাধ ও মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন।
মিস্টার শোলে বলেছেন, ‘বিশ্বের শক্তিশালী গণতন্ত্রের দেশগুলোর সঙ্গেই যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশীদারিত্ব। গণতন্ত্র কোথাও দুর্বল হয়ে পড়লে, সেটি আমাদের সহযোগিতার সক্ষমতাকে সীমিত করে দেবে।’
শোলের কয়েক সপ্তাহ আগে দুই দিনের সফরে ঢাকা এসে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ডোনাল্ড লু-ও শেখ হাসিনার সরকারের পাশাপাশি সুশীল সমাজের সংগঠনগুলোকে একই ধরনের বার্তা দিয়েছিলেন।
গণমাধ্যম বলছে, দুজনই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য মার্কিন সমর্থন এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অব্যাহত সহযোগিতার উপর জোর দিলেও মানবাধিকার ইস্যু এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয় (তাদের বক্তব্যে) প্রধানভাবে ফুটে উঠেছে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি. মাইলামের সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘সাউথ এশিয়া পারসপেক্টিভস’-এ বাংলাদেশে গণতন্ত্রের বর্তমান অবস্থার প্রসঙ্গ টেনে লেখা হয়েছে: ২০১১ সাল থেকেই বাংলাদেশে গণতন্ত্র (ধীর ও অবিচলভাবে) অবক্ষয়ের সম্মুখীন, বিশেষ করে ২০১৪ সালে বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করার পর থেকে দীর্ঘদিন ধরেই (দেশটি) আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরে ছিল।
২০১৮ সালে শেখ হাসিনার সরকার অত্যন্ত কারচুপির নির্বাচন করেছে; যার ফলে তিনি টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন এবং (দেশটিতে) দ্বিতীয়বারের মতো কার্যত একদলীয় সংসদ গঠিত হয়। তিনি নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে ২০০৯ সালে ক্ষমতার চেয়ারে বসেছিলেন।
ওই বিধান তিনি ২০১১ সালে সংবিধান থেকে বাতিল করে দেন। বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উচ্চ মাত্রার অবিশ্বাস, ক্ষমতাসীনদের অধীনে কারচুপির নির্বাচনের ইতিহাস এবং নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতার অভাব বিবেচনায় অন্তর্বর্তী নির্দলীয় সরকারই ছিল নির্বাচনে জালিয়াতির বিরুদ্ধে একমাত্র রক্ষাকবচ। বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচন ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিচারবহির্ভূত হত্যা, জোরপূর্বক গুম এবং হেফাজতে মৃত্যু সহ মানবাধিকারের ব্যাপক ও গুরুতর লঙ্ঘন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো নথিভুক্ত করেছে।
এদিকে, গত মাসের মাঝামাঝি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে আমেরিকা বাংলাদেশের সাথে সুসম্পর্ক রাখতে চায়। এটি নিয়েই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাউন্সিলর ডেরেক শোলের।
মন্ত্রী আরও জানান, আমেরিকার সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক বহুমাত্রিক। এখানে র্যাবের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি একেবারেই ছোটখাটো। রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সাহায্যের কথা দিয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিবসহ বেশ কয়েকটি দেশের কূটনীতিক বাংলাদেশের সাথে এক হয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে বলেও জানান এ কে আব্দুল মোমেন।
তিনি বলেন, গত সাত মাসে আমেরিকার উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি একের পর দেশে এসে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য কাজ করেছেন। তাঁদের দেশে গিয়ে নেতাদের সঙ্গে আলাপ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়তার জন্য। ভুল–বোঝাবুঝি সব দূর করে ভালো সম্পর্ক তৈরি করা উভয় দেশের চাওয়া।
সম্প্রতি অনেক দেশের কূটনীতিকেরা দেশে এসেছেন জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, কূটনীতিকেরা বাংলাদেশকে তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ দেশ মনে করেন। কারণ, বাংলাদেশে ভিন্ন সুযোগ রয়েছে। কোভিডের সময় বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় আয়ের দিক থেকে প্রথম ছিল। দেশে নতুন নতুন যে সম্ভাবনা আছে, সেসবের সঙ্গে তাঁরা সম্পৃক্ত হতে চান।
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে আব্দুল মোমেন বলেন, আমাদের এক নম্বর টার্গেট রোহিঙ্গাদের নিজের দেশে ফেরানো। এতে বিভিন্ন দেশের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। বিভিন্ন দেশ রোহিঙ্গা নেওয়ার ব্যাপারে জানিয়েছে। এর মধ্যে আমেরিকা ও কানাডা রোহিঙ্গা নেবে বলে জানিয়েছে।
এসডব্লিউএসএস/১৭০০
আপনার মতামত জানানঃ