করোনা মহামারির কারণে দেশের ৯টি জেলায় তীব্র খাদ্য সংকটের আশঙ্কা করছেন গবেষকরা। জেলাগুলো হচ্ছে সিলেট, সুনামগঞ্জ, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, পাবনা, ফরিদপুর, বাগেরহাট ও বরগুনা। আন্তর্জাতিক খাদ্যনীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (ইফপ্রি) এই আশঙ্কা করছে।
মহামারিকালীন খাদ্যভিত্তিক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নিয়ে সংস্থাটির পরিচালিত এই জরিপের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দারিদ্র্যপ্রবণতার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধায় পিছিয়ে থাকার কারণেই এসব অঞ্চলের গ্রামীণ জনগোষ্ঠী খাদ্য সংকটে পড়বে। সরকারের নেওয়া মহামারিকালীন খাদ্যবান্ধব এবং অন্যান্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির কার্যকরভাবে সুরক্ষা দিতে না পারলে এই সংকট দীর্ঘায়িত হবে।
পণ্য পরিবহন ও বাজারের ক্ষেত্রে বড় ধরনের বিঘ্ন সৃষ্টি হতে পারে, এ ধারণাকে তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে যাচাইয়ের জন্য ‘ফুড ইনসিকিউরিটি এক্সপেরিয়েন্স স্কেল’ নামে একটি পরিমাপক ব্যবহার করে দরিদ্র পরিবারগুলোর খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা পরিমাপ করেছেন ইফপ্রির গবেষকরা। গবেষণায় দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিম ও কেন্দ্রে অবস্থিত কিছু জেলায় উচ্চ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার প্রমাণ পেয়েছেন তারা।
যৌথভাবে গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব সিডনির অর্থনীতির সহযোগী অধ্যাপক শ্যামল চৌধুরী এবং ইফপ্রি দক্ষিণ এশিয়া কার্যালয়ের পরিচালক শহীদুর রশিদ, রিসার্চ ফেলো কল্যাণী রঘুনাথন ও রিসার্চ অ্যানালিস্ট নাহিয়ান বিন খালেদ।
গবেষকদল বলছেন, সিলেট, সুনামগঞ্জ, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, পাবনা, ফরিদপুর, বাগেরহাট ও বরগুনার গ্রামীণ পরিবারগুলোতে তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা রয়েছে। ৯টি জেলায় খাদ্য সংকটের অঞ্চলভিত্তিক পার্থক্য দেখেছেন তারা। খাদ্য উৎপাদনের সুযোগ কমার পেছনে ভৌগোলিক পার্থক্য যেমন রয়েছে, তেমনি অর্থনৈতিক সুযোগ প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও আঞ্চলিক বৈষম্য রয়েছে। এসব জেলায় শস্য বহুমুখিতা যেমন কম, তেমনি দারিদ্র্যের হারও বেশি। ধান নির্ভরতার কারণে আয় বৃদ্ধি করতে পারছে না এখানকার পরিবারগুলো। অন্যদিকে বেশকিছু অঞ্চল নদীভাঙন, লবণাক্ততা, খরা, বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে পিছিয়ে পড়ছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ, লবণাক্ততা, ফসলের নিবিড়তা বাড়াতে না পারা, জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই খাদ্য নিরাপত্তা অনেকটাই হুমকির মধ্যে রয়েছে সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলায়। শস্য উৎপাদনে এই অঞ্চলে লবণাক্ততা ছাড়াও পানির স্বল্পতা যেমন রয়েছে, তেমনি পানির আধিক্যও রয়েছে। আবার সাম্প্রতিক সময়ে চিংড়ি ও পাট শিল্পও বিপর্যয়ে পড়েছে। ফলে মানুষের আয় কমে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে কোভিডের পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে খাদ্য নিরাপত্তা বেশ হুমকিতে পড়েছে। অন্যদিকে অবস্থাসম্পন্ন অঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও মহামারি আর হাওড় অঞ্চলে জুন মাসের মৌসুমি বন্যার সম্মিলিত আঘাতে সিলেটেও এই প্রভাব প্রকট হয়েছে।
এই বিষয়ে ইফপ্রির দক্ষিণ এশিয়া কার্যালয়ের পরিচালক শহীদুর রশিদ গতকাল দিল্লি থেকে সংবাদমাধ্যমকে জানান, দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকাগুলোয় কোভিডের কারণে আর্থিক সংগতি একেবারেই কমে এসেছে। তার ওপর বছরের মাঝামাঝি সময়ে দীর্ঘমেয়াদি বন্যার কারণে খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে। এতে জেলাভিত্তিক দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছে। বেশকিছু দুর্বলতার কারণে মহামারিকালে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি এবং অন্যান্য সামাজিক সুরক্ষা উদ্যোগ দরিদ্র মানুষগুলোকে কার্যকর সুবিধা দিতে পারছে না। সেই সঙ্গে খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতিও করতে পারছে না।
এসডাব্লিউ/বিবি/নাসি/আরা/১২১০
আপনার মতামত জানানঃ