মৃত্যুর পরপরই প্রাণীদের কোষগুলো মারা যায় না। বরং মৃত্যুর অন্তত এক ঘণ্টা পরেও মৃত প্রাণীর রক্ত সঞ্চালন ও অন্যান্য কোষ কার্যকর থাকে। মৃত শূকরের ওপর গবেষণা চালিয়ে নতুন এ তথ্য খুঁজে পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক।
গবেষকেরা মনে করছেন, নতুন এই গবেষণার ফলাফল মানুষের অঙ্গগুলোকে দীর্ঘ সময়ের জন্য সংরক্ষণ করতে সহায়তা করবে। একই সঙ্গে আরও অনেক মানুষ অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সুযোগ পাবে।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই গবেষণার জন্য গবেষকেরা ‘অর্গান এক্স’ নামের একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন এবং এই পদ্ধতি ব্যবহার করে ১০০ মৃত শূকরের শরীরজুড়ে অক্সিজেন পুনঃ সঞ্চালন করতে সক্ষম হয়েছেন। এ পদ্ধতির মাধ্যমে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরে কিছু কোষ ও অঙ্গ সংরক্ষণ করাও সম্ভব হয়েছে।
গবেষক দলের প্রধান ও ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসায়েন্সের অধ্যাপক ড. নেনাদ সেস্তান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘এই গবেষণার ফলাফল আমাদের এমন ইঙ্গিত দিচ্ছে যে কোষের মৃত্যু রোধ করা যেতে পারে। এমনকি মৃত্যুর এক ঘণ্টা পরেও প্রাণীর শরীর থেকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।’
এনওয়াইইউ গ্রসম্যান স্কুল অব মেডিসিনের ক্রিটিক্যাল কেয়ার অ্যান্ড রিসাসিটেশন রিসার্চের পরিচালক ও ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক ড. স্যাম পার্নিয়া লন্ডনের সায়েন্স মিডিয়া সেন্টারকে বলেছেন, ‘এটি সত্যিই এক অসাধারণ ও তাৎপর্যপূর্ণ গবেষণা। এটি প্রমাণ করে যে মৃত্যুর পরেও স্তন্যপায়ী প্রাণীর কোষ (মানুষসহ) যেমন মস্তিষ্ক কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত কার্যকর থাকে।’
পার্নিয়া এই গবেষণায় জড়িত ছিল না। মৃত শূকরের ওপর ‘অর্গান এক্স’ পদ্ধতি ব্যবহার করে চিকিৎসা চালানোর ছয় ঘণ্টা পরে গবেষকেরা দেখতে পান, শূকরের দেহের হৃৎপিণ্ড, লিভার, কিডনিসহ অনেক অংশে নির্দিষ্ট কিছু সেলুলার ফাংশন সক্রিয় ছিল। পরে তারা কিছু অঙ্গের কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন।
এই একই দলের গবেষকেরা ২০১৯ সালে আরেকটি গবেষণা চালিয়েছিলেন। তখন তাঁরা মৃত শূকরের মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনের জন্য ‘ব্রেইন এক্স’ নামের একটি পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলেন।
গবেষণাটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে এবং এটি একটি পরীক্ষামূলক গবেষণা। তবে গবেষকেরা এই গবেষণা নিয়ে আশাবাদী। তারা বলছেন, অদূর ভবিষ্যতে এই গবেষণা মানুষের ওপর প্রয়োগ করা যেতে পারে। প্রাথমিকভাবে এটি অঙ্গ প্রতিস্থাপনের নতুন দুয়ার উন্মোচন করবে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য অপেক্ষা করছে। তাদের নতুন পথ দেখাবে এই গবেষণা।
সংবাদ সম্মেলনে ইয়েল ইন্টারডিসিপ্লিনারি সেন্টার ফর বায়োএথিক্সের পরিচালক ও গবেষণার সহলেখক স্টিফেন ল্যাথাম বলেছেন, ‘আপনি একজন মৃত দাতার কাছ থেকে অঙ্গ নিতে পারবেন। সম্ভবত অঙ্গটি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে এবং দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে যার প্রয়োজন তার কাছে পৌঁছে দেওয়া যাবে।’
তবে গবেষকেরা স্পষ্ট করে বলেছেন, তারা কোনোভাবেই শূকরদের জীবিত করেননি। অঙ্গগুলো প্রতিস্থাপন করে ব্যবহারযোগ্য কি না, তা বোঝার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তারা।
এসডব্লিউএসএস/১৪৩০
আপনার মতামত জানানঃ