জরায়ু ক্যানসার প্রতিরোধে নারীদের বিনা মূল্যে টিকা দেওয়া হবে। শুরুতে ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সী কিশোরীদের এই টিকা দেওয়া হবে। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে এই টিকা কার্যক্রম শুরু হবে।
আজ সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ কথা বলেন। দেশব্যাপী প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধিতে করণীয় নির্ধারণে এই সভার আয়োজন করা হয়। সভায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।
সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ক্যানসারের মধ্যে জরায়ু ক্যানসারে নারীদের মৃত্যু বেশি হয়। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে জরায়ু ক্যানসারের টিকা দেওয়া হবে। এই টিকা কার্যক্রমের ফলে দেশে জরায়ু ক্যানসারে আক্রান্ত ও মৃত্যু দুই–ই কমে আসবে।
জাহিদ মালেক আরও বলেন, সরকার দেশব্যাপী সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগের আওতায় দেশের ১৫ লাখ দরিদ্র পরিবারের ৬০ লাখ সদস্যের প্রত্যেকে বছরে ৫০ হাজার টাকার ওষুধ ও চিকিৎসাসহায়তা পাবেন। এখন যে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়, এই সহায়তা হবে তার বাইরে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিকভাবে কুড়িগ্রাম, মানিকগঞ্জ, বরিশাল, বরগুনা, লক্ষ্মীপুর ও লালমনিরহাট জেলায় সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। এ ছাড়া ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনেও এই কর্মসূচি নেওয়া হবে।
কতটা নির্মূল সম্ভব?
জরায়ু ক্যানসারে আক্রান্তের পরিমাণ প্রায় ৯০ শতাংশ কমিয়ে দিচ্ছে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস বা এইচপিভি টিকা। যুক্তরাজ্যভিত্তিক চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেটের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এই তথ্যকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়েছে যুক্তরাজ্যের ক্যানসার গবেষণা সংস্থা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়, জরায়ু ক্যানসারের প্রায় সব সংক্রমণই ভাইরাসের মাধ্যমে হয়ে থাকে। টিকার মাধ্যমে এ রোগ প্রায় নির্মূল করা সম্ভব বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ল্যানসেটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৮ সালে যুক্তরাজ্যে কিশোরীদের এইচপিভি টিকা দেওয়া শুরু হয়। অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে টিকা পাচ্ছে ১১ থেকে ১৩ বছরের কিশোরীরা। ২০১৯ সাল থেকে কিশোরদেরও টিকা দেওয়া হচ্ছে।
শুরুর দিকে যাদের টিকা দেওয়া হয়েছিল, তাদের বয়স এখন ২০–এর কোঠায়। গবেষণায় দেখা গেছে, টিকা নেওয়ার ফলে ক্যানসার–পূর্ববর্তী ভাইরাসের বিস্তার কমেছে এবং জরায়ুর ক্যানসার ৮৭ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে।
ল্যানসেট বলছে, এইচপিভি টিকা দেওয়ার ফলে ৪৫০ জনের ক্যানসার এবং ১৭ হাজার ২০০ জনের ক্যানসার–পূর্ববর্তী জটিলতা রোধ করা সম্ভব হয়েছে।
এই সফলতাকে ‘বিশাল’ বলে আখ্যায়িত করেছেন লন্ডনের কিংস কলেজের গবেষক অধ্যাপক পিটার সাসিয়েনি। তিনি বলেন, টিকাদানের ফলাফল হিমশৈলীর উপরিভাগের মতো। কারণ, যাদের টিকা দেওয়া হয়েছে, তারা ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার মতো বয়সে এখনো পৌঁছাননি। সময়ের সঙ্গে সফলতার হার আরও বাড়বে।
পরিসংখ্যান
বাংলাদেশে গড়ে প্রতিবছর অন্তত ১২ হাজার নারী জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত বলে চিহ্নিত হচ্ছে। আর এর মধ্যে গড়ে প্রতি বছর প্রায় ছ’হাজার নারী এ কারণে মৃত্যুবরণ করছে। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এ পরিসংখ্যানে কেবলমাত্র হাসপাতালে আসা রোগীদের হিসাব দেখানো হয়েছে।
এ রোগে আক্রান্ত বেশীরভাগ নারীই আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। বেশিরভাগ ভুক্তভোগী প্রজননতন্ত্রের কিছু সমস্যাকে ‘মেয়েলি সমস্যা’ মনে করে বা সংকোচের কারণে গোপন রাখতে গিয়ে প্রথমদিকে জানতেই পারেন না তারা এমন ভয়ানক কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন।
বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, বাংলাদেশের ক্যান্সার আক্রান্ত নারীদের শতকরা ৩০ ভাগই হচ্ছেন জরায়ু মুখের (সারভিক্স) ক্যান্সারের শিকার। তবে, রোগ শনাক্তের আগে আক্রান্তের অর্ধেক নারী মারা যান।
আন্তর্জাতিক ক্যান্সার গবেষণা এজেন্সির হিসাব মতে, জরায়ুমুখ ক্যান্সার হচ্ছে মেয়েদের জীবন দুর্বিসহ করে দেয়া দ্বিতীয় সাধারণ স্বাস্থ্যঝুঁকি। বাংলাদেশে এখনো এ রোগে আক্রান্ত ৭০ শতাংশই রয়ে যাচ্ছে শনাক্তের বাইরে। তাই জাতীয় নীতিমালার মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ নারীদের স্ক্রিনিং ও আক্রান্তদের চিকিৎসার সহজ সুযোগ সৃষ্টির আহ্বান বিশেষজ্ঞদের।
নারীদের এ গুরুতর শারীরিক অসুস্থতার ক্ষেত্রে অপুষ্টি, ব্যক্তিগত অপরিচ্ছন্নতা, ধূমপান, মাদক জাতীয় দ্রব্য সেবন কারণ হলেও বাল্যবিবাহ সবচেয়ে বড় ঝুঁকি বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।
এসডব্লিউএসএস/১৭৩০
আপনার মতামত জানানঃ