পার অ্যান্ড পলিফ্লুরো-অ্যালকিল। বিগত কয়েক বছর ধরেই বেশ চর্চায় রয়েছে এই বিশেষ রাসায়নিক যৌগটি। যেভাবে ক্লোরোফ্লুরো কার্বন ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন শীততাপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র এবং রেফ্রিজারেটরে, ঠিক সেভাবেই খাদ্য সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয় পার অ্যান্ড পলিফ্লুরো-অ্যালকিল বা পিএফএএস।
ক্লোরোফ্লুরো-কার্বনের মতোই যা পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। এবার এই বিষাক্ত যৌগটিরই হদিশ মিলল নরওয়ের চিরতুষারাবৃত স্যালবার্ড অঞ্চলে।
নরওয়ের আর্কটিক অঞ্চলে ঠিক কতটা দূষণের প্রভাব পড়েছে, তা নির্ধারণ করতেই সম্প্রতি এক বিশেষ সমীক্ষা চালিয়েছিলেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। নরওয়ের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল বরফের নমুনা।
আর সেখানেই ধরা পড়ে পিএফএএস যৌগের উপস্থিতি। গঠন এবং শৃঙ্খলের ওপর নির্ভর করে সব মিলিয়ে প্রায় ১২০০ ধরনের পিএফএএস যৌথ রয়েছে বাজারে।
স্যালবার্ডের বরফে যার মধ্যে প্রায় ২৬ ধরনের পিএফএএস যৌগ পাওয়া গেছে বলেই জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। প্রশ্ন থেকে যায়, চিরতুষারাবৃত এই অঞ্চলে, যেখানে মানুষের বাস নেই বললেই চলে, সেখানে কীভাবে এসে পৌঁছাল এই বিষাক্ত যৌগ?
গবেষকরা জানাচ্ছেন, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ থেকে শুরু করে, অগ্নিনিরোধক ফোম, ননস্টিক বাসন, কার্পেট, জামাকাপড়—সর্বত্রই ব্যবহৃত হয় এই বিশেষ যৌগ। পরবর্তীতে যা জল ও বায়ুবাহিত হয়ে জমাট বাঁধে মেঘে। শীতপ্রধান অঞ্চলে ঝরে পড়ে তুষারের আকারে। সেভাবেই নরওয়ের চিরতুষারাবৃত অঞ্চলে দানা বেঁধেছে এই যৌথ।
সাম্প্রতিক এই আবিষ্কার ইতিমধ্যেই চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে বিজ্ঞানীদের কপালে। তার কারণ, বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে হাজার হাজার বছর ধরে জমে থাকা আর্কটিকের বরফ ক্রমশ গলছে নরওয়েতে। আর সেই বরফগলা জলেই পুষ্ট হচ্ছে দেশের অধিকাংশ নদী।
নদীবাহিত হয়ে এই ‘বিষ’ নরওয়ের বাস্তুতন্ত্রকে প্রভাবিত করবে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। আর্কটিক ফিয়র্ড এবং তুন্দ্রা—এই দুই অঞ্চল সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবে বলেই মনে করছেন গবেষকরা। জু প্লাঙ্কটন, মাছ, সীল থেকে শুরু করে মেরু ভাল্লুক—খাদ্য-খাদক শৃঙ্খলের প্রতিটি ধাপেই পৌঁছে যেতে পারে পিএফএএস।
তাতে কমতে পারে বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীদের জন্মহার। তাছাড়াও একধিক দুরারোগ্য রোগের প্রাদুর্ভাবও দেখা দিতে পারে এই বিশেষ রাসায়নিক যৌগের প্রভাবে।
এখানেই শেষ নয়। পিএফএএসের প্রভাব থেকে রেহাই পাবেন না মানুষও। খাদ্য ও পানীইয়ের জন্য নরওয়ের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ নদী-নির্ভর হওয়ায় তাদের শরীরেও প্রবেশ করতে পারে এই বিষাক্ত যৌগটি।
উল্লেখ্য, এর আগে আমেরিকা, ব্রিটেন, কানাডা-সহ একাধিক প্রথম বিশ্বের দেশে মানুষের রক্তে পাওয়া গিয়েছিল পিএফএএস। তবে সাম্প্রতিক সমীক্ষা জানাচ্ছে, আরও বড়ো মাত্রায় পিএফএএস-দূষণের শিকার হতে চলেছে ইউরোপের মানুষ।
কারণ রান্নার পাত্র এবং অগ্নিনির্বাপক ফেনা তৈরিতে ব্যবহৃত এই বিপজ্জনক রাসায়নিক আমাদের খাবারেও দেখা যাচ্ছে।
ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) এর সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে মার্কিন খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খলের একাধিক স্তরে পিএফএএস রাসায়নিক দূষণ পাওয়া গেছে। তবে সংস্থাটি দাবি করেছে যে তাদের ফলাফলগুলি ভোক্তা স্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করে না।
এফডিএ বিজ্ঞানীরা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ধরণের খাদ্য উৎসের নমুনা সংগ্রহ করেন। যার মধ্যে কিছু সরাসরি ভৌগলিক অঞ্চল থেকে নেওয়া হয়েছে যা পিএফএএস দূষণ রয়েছে বলে জানা যায়।
উল্লেখ্য, পিএফএএস ভূগর্ভস্থ পানিতে দূষিত হওয়ার পরে নিউ মেক্সিকোতে একটি দুগ্ধ খামারের দুধ মানব স্বাস্থ্যের জন্য একটি সম্ভাব্য ঝুঁকি হিসাবে বিবেচিত হয়েছিল।
এসডব্লিউএসএস/১৮৪৫
আপনার মতামত জানানঃ