যৌনবৃত্তি বা দেহব্যবসা মানুষের আদিম পেশার মধ্যে একটা। শুধু মানুষ কেন প্রাণীজগতের অনেকের মধ্যেই দেহব্যবসা করতে দেখা যায়। অবাক হচ্ছেন? হ্যাঁ, অবাক হওয়ারই মতো বিষয়। মূলত অর্থের বিনিময়ে দেহ ব্যবসা সমাজে যুগ যুগ ধরেই প্রচলিত। মানব সমাজে এর প্রচলন থাকলেও বিজ্ঞানীরা এবার বললেন ভিন্ন কথা।
আপনি জানলে অবাক হবে যে, শুধু মানুষের মধ্যেই এই প্রবৃত্তি নেই, রয়েছে পশুদের মাঝেও। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, অন্যান্য প্রাণীরাও দেহব্যবসা করতে পারে এবং তারাও এমন কাজের সঙ্গে জড়িত।
গবেষকরা বলছেন, প্রাণীদের মাঝে টাকার গুরুত্ব বা মূল্য বোঝাতে পারলে তারা টাকার জন্য সমপ্রজাতির প্রাণীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়ায়। বিজ্ঞানীরা একে বলছেন ট্রানজেকশনাল সেক্স। যেসব প্রাণী এমন দেহব্যবসা বা পতিতাবৃত্তি করেন তাদের মধ্যে রয়েছে পেঙ্গুইন এবং হনুমান।
পেঙ্গুইন
পতিতাবৃত্তিতে সবার চেয়ে এগিয়ে আছে পেঙ্গুইন। পেঙ্গুইন দক্ষিণ মেরুবলয়ের আশেপাশে বসবাস করে। এরা সবাই দিবাচর আর সমুদ্রবাসী। দুর্দান্ত সাঁতারু এবং তাড়া করে মাছ ধরে। হাঁটতে অপটু, তবে উবুড় হয়ে শুয়ে দুই হাতডানা নেড়েচেড়ে বরফের ওপর দিয়ে এগিয়ে যায়। বুক পেট ধবধবে সাদা, বাকি শরীর কালো বা নীলচে।
পেঙ্গুইনের দেহব্যবসার বিষয়টি বিজ্ঞানীদের প্রথম নজরে আসে ১৯৯৮ সালে। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ফিয়ানা হান্টার এবং কানাডার ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক লয়েড ডেভিস পাঁচ বছর অ্যাডেলি পেঙ্গুইনের সঙ্গম আচরণ পর্যবেক্ষণ করেন।
তারা ধারণা করেছিলেন, প্রাণীদের মধ্যে পেঙ্গুইন পতিতাবৃত্তির সঙ্গে জড়িত। তাদের এই গবেষণাটি নিউজিল্যান্ডের একটি প্রকল্পের অংশ হিসেবে করা হয়েছিল। এটি করা হয়েছিল দক্ষিণ মেরু থেকে আনুমানিক ৮০০ মাইল দূরে (১,৩০০ কিলোমিটার) রস দ্বীপে অ্যান্টার্কটিকার কাছে।
সাধারণত কোনো স্ত্রী পেঙ্গুইনের বর্তমান সঙ্গী মারা গেলে অন্য পুরুষ পেঙ্গুইনের সঙ্গে স্ত্রী পেঙ্গুইনটি সম্পর্ক স্থাপন করে। গবেষণায় দেখা যায়, কিছু স্ত্রী পেঙ্গুইন নুড়ির বিনিময়ে যৌনতায় রাজি হয়। এছাড়া আলাদা কয়েকটি ক্ষেত্রে দেখা গেছে, স্ত্রী পেঙ্গুইন দেহ ব্যবসা করে খাবারের ব্যবস্থা করে থাকে।
গবেষণায় অনুমান করা হয় যে, পুরুষ পেঙ্গুইনরা শুধু যৌনতৃপ্তির জন্য পতিতা পেঙ্গুইনের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে। তবে বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ অনুসারে, পতিতা পেঙ্গুইনের সংখ্যা খুব কম এবং একসঙ্গে বসবাসকারীদের মধ্যে মাত্র কয়েক শতাংশ এর সঙ্গে জড়িত।
যাই হোক এটা স্পষ্ট যে, যখনই একজন পতিতা কোনো পুরুষের সঙ্গে মিলিত হয় তখনই নুড়ি পাথর গ্রহণ করে। তবে কখনো কখনো মিলন না করলেও নুড়ি পাথর নেয়।
হনুমান
২০০৫ সালে ভিন্ন একটি গবেষণায় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী ও অর্থনীতিবিদদের সমন্বয়ে একটি গবেষক দল হনুমানদের ওপর পরীক্ষা চালায়। তারা বেশ পরিশ্রম করে হনুমানকে অর্থের কথা বোঝায়। মানে টাকা কী? টাকা কী করে ব্যবহার করতে হয়? টাকা দিয়ে কীভাবে খাদ্য পাওয়া যায়।
পরে হনুমানরা টাকার গুরুত্ব বুঝেও যায়। এরপরই সবার আগে এক পুরুষ হনুমান স্ত্রীকে টাকার লোভ দেখায়। সেই স্ত্রী টাকার বিনিময়ে যৌনতায় রাজি হয় অথবা স্ত্রী হনুমানরা যেসব পুরুষ হনুমানের কাছে টাকা আছে তাদের সঙ্গে মিলিত হতে আগ্রহ দেখায়।
গবেষক দলের অর্থনীতিবিদ কেথ চেন এবং মনোবিজ্ঞানী লরি স্যান্টোস হনুমানদের এই বিষয়ে বেশ কিছু পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করেন।
এরপর দেখা যায়, স্ত্রী হনুমান তার খাবার টোকেনের বিনিময়ে পুরুষ হনুমানের সঙ্গে যৌনসম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী ছিল। তারা বলেন, সাধারণ হনুমানের একটি ছোট মস্তিষ্ক থাকে। এরা খাদ্য এবং যৌনতাকে কেন্দ্র করে খুব বেশি মনোনিবেশ করে।
বিজ্ঞানীরা আরো বলেন, এ গবেষণা দিয়ে আচরণগত অর্থনীতি ও তার ফলাফল কী হতে পারে এবং তাতে প্রাণীরা কিভাবে সাড়া দেয় তা জানা যায়। হনুমানদের এ আচরণ স্পষ্ট করে দেয়ে, শুধু মানুষের মাঝেই নয় পশুরাও বিনিময়ের মাধ্যমে পতিতাবৃত্তি করে থাকে।
এসডব্লিউএসএস/২০৪০
আপনার মতামত জানানঃ