যৌনতাই কিছু প্রানীর জন্য মৃত্যুর কারণ। অবাক হলেও এটাই সত্য। আর এমন প্রাণীটি হল অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চলভিত্তিক ছোট্ট থলিযুক্ত স্তন্যপায়ী প্রাণী কোল। স্ত্রী কোলেরা চার প্রজনন মৌসুম পর্যন্ত বেঁচে থাকলেও পুরুষ কোলেদের আয়ু এক প্রজনন মৌসুম।
অর্থাৎ প্রথম প্রজনন মৌসুমের পর পুরুষ কোলেদের মৃত্যু হয়। তবে ঠিক কী কারণে তাদের অকাল মৃত্যু হয়, তা রহস্যই থেকে গেছে।
বিজ্ঞানীরা সে রহস্য উন্মোচনের চেষ্টায় বিভিন্ন গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সবশেষ গত বুধবার প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে নতুন তথ্য পাওয়া গেছে। খবর এএফপির।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, পুরুষ কোলেরা স্ত্রী কোলেদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালাতে থাকে। সঙ্গিনীকে আকর্ষণের চেষ্টা চালাতে গিয়ে তারা নিজেদের শরীরকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দেয় না। এমন অবস্থায় ইতিমধ্যে বিপন্ন ঘোষিত এ প্রজাতির টিকে থাকাটাই হুমকির মুখে।
রয়্যাল সোসাইটি ওপেন সায়েন্স নামের সাময়িকীতে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণার অংশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার নর্দার্ন টেরিটরি উপকূলের গ্রুত এইল্যান্ড দ্বীপে সাতটি পুরুষ কোল ও ছয়টি স্ত্রী কোলের পিঠে ছোট আকারের ট্র্যাকিং ডিভাইস লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
এরপর ৪২ দিন ধরে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ৪২ দিনের মধ্যে প্রজনন মৌসুমও আছে। মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদমের মাধ্যমে তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে কোলের ভিন্ন ভিন্ন আচরণ শনাক্ত করা হয়েছে।
দেখা গেছে, স্ত্রী কোলের চেয়ে পুরুষ কোলেরা অনেক বেশি সক্রিয় হয়। স্ত্রী কোলেরা প্রায় ২৪ শতাংশ সময় শুয়ে-বসে কাটায়। অপর দিকে পুরুষ কোলেরা মাত্র ৭ শতাংশ সময় শুয়ে-বসে কাটায়।
সানশাইন কোস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জোশুয়া জাস্ক গবেষণাটিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এএফপিকে তিনি বলেন, পুরুষ কোলদের যতটুকু ঘুমানো দরকার, তার কাছাকাছিও তারা ঘুমায় না।
তার দাবি, প্রজনের পর পুরুষ কোলেরা কেন মারা যায়, তা জানতে নতুন গবেষণার ফলাফল সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় প্রজাতির কোলেরা অপেক্ষাকৃত ছোট। একবারই প্রজনন করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রজনন ঋতুতে স্ট্রেস হরমোন বেড়ে গিয়ে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ ও সংক্রমণের কারণে পুরুষ কোলেরা মারা যায়। তবে উত্তরাঞ্চলীয় কোলেদের মৃত্যুর কারণটি এমন নয়।
জোশুয়া জাস্ক মনে করেন, বছর বছর পুরুষ কোলের মৃত্যুর কারণে উত্তরাঞ্চলীয় প্রজাতির কোলের টিকে থাকাটা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় ভিনদেশি প্রজাতির ব্যাঙ, বিড়াল ও শিয়ালের উপস্থিতিও বাজে প্রভাব ফেলছে।
কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক আড্রিয়ান ব্র্যাডলি মনে করেন, নতুন গবেষণাটি তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, এক প্রজনন মৌসুম আয়ুর ছোট আকারের প্রাণীগুলো যে সংগমের সময়ে স্ত্রীদের ক্লোকাল গ্ল্যান্ড থেকে নিঃসরিত সুগন্ধীতে উদ্দীপিত হয়, তা নিশ্চিত।
এ উদ্দীপনার সময় তাদের যে পরিমাণে ওজন কমে যায়, তাতে বোঝা যায়, কেন ছোট আকারের এ প্রাণীগুলোর আয়ু এক মৌসুমের। তবে ব্র্যাডলি সতর্ক করে বলেছেন, এর জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।
এসডব্লিউএসএস/১৯২৫
আপনার মতামত জানানঃ