ধনসম্পদের বণ্টনে নজিরবিহীন বৈষম্যের মুখে পৃথিবী। ২০১৭ সালে এ বিশ্বের অর্ধেক জনসংখ্যার কাছে অর্থাৎ প্রায় ৩৬০ কোটি মানুষের কাছে যে পরিমাণ অর্থ বা সম্পত্তি ছিল, মাত্র ৮ জন ধনকুবেরের কাছেই সেই পরিমাণ সম্পত্তি ছিল। ভারত, চিন, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কায় এই বৈষম্য আরও প্রবল।
সমীক্ষায় আরও দেখা গিয়েছে, পৃথিবীতে মোট সম্পদের পরিমাণ যা, তার ৫০ শতাংশই রয়েছে বিশ্ব জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ মানুষের হাতে। পৃথিবীতে মোট সম্পদের পরিমাণ ২৫৫ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি ডলার। আর বিশ্ব জনসংখ্যা বর্তমানে ৭৫০ কোটির আশেপাশে। এদের মধ্যে মাত্র ৭ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষের হাতে প্রায় ১২৮ লক্ষ কোটি ডলার রয়েছে। অবশিষ্ট ১২৮ লক্ষ কোটি ডলারের মতো সম্পদ রয়েছে বাকি প্রায় ৭৪৩ কোটি মানুষের হাতে [সূত্র আনন্দবাজার]।
গত দু’দশক ধরে পৃথিবীর এক বিরাট এবং জনবহুল অংশে সবচেয়ে ধনী শ্রেণির আয় ক্রমশ বেড়েছে এবং সবচেয়ে দরিদ্র শ্রেণির আয় ক্রমশ কমেছে বলে সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে। অক্সফ্যামের রিপোর্ট বলছে, চিন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, লাওস এবং শ্রীলঙ্কায় গত ২০ বছরে জনসংখ্যার সবচেয়ে ধনী ১০ শতাংশ মানুষের উপার্জন আগের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে।
অন্য দিকে সবচেয়ে দরিদ্র ১০ শতাংশ মানুষের আয় ১৫ শতাংশেরও বেশি হারে কমে গিয়েছে। ধনীর আয় ক্রমশ বেড়ে যাওয়া এবং দরিদ্রের আয় আগের চেয়েও কমে যাওয়ার জেরেই পৃথিবী আজ এই মারাত্মক ধনবৈষম্যের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে বলে অক্সফ্যাম জানিয়েছে।
এদিকে ভারতের মোট সম্পদের ৪০ ভাগ রয়েছে মাত্র এক ভাগ মানুষের হাতে। আর ৯৯ শতাংশ মানুষের হাতে রয়েছে বাকি ৬০ ভাগ সম্পদ।
গতকাল সোমবার (১৬ জানুয়ারি) বিবিসির এক প্রতিবেদন এ তথ্য জানিয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অক্সফামের ‘সারভাইভাল অব দ্য রিচেস্ট’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
অক্সফামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটিতে ২০২০ সালে বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা ছিল ১০২ জন। ২০২২ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬৬ জনে।
অর্থাৎ ধনীরা ধনী হচ্ছেন, আর অন্যদিকে দরিদ্ররা আরো দরিদ্র হচ্ছেন। বেঁচে থাকার মতো মৌলিক চাহিদা পূরণেও ব্যর্থ হচ্ছেন অনেকে।
সংস্থাটি এ বৈষম্যকে ‘অশ্লীল’ মন্তব্য করে অতি ধনীদের সম্পত্তির ওপর কর আরোপের সুপারিশ করেছে। অক্সফামের দাবি, মিলিয়নিয়ার ও বিলিয়নিয়াররা পাঁচ শতাংশ হারে ট্যাক্স দিলে তার পরিমাণ দাঁড়াবে বছরে এক দশমিক সাত ট্রিলিয়ন ডলার।
এই অর্থ দেশের দুই বিলিয়ন মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করতে পারে। ভারতের মাত্র ১০ জন ধনী ব্যক্তির ওপর যদি ৫ শতাংশ করে কর আরোপ করা হলে সে টাকা দিয়ে আগামী তিন বছর শিশুদের শিক্ষার ব্যায়ভার মেটানো সম্ভব।
ধনী ব্যক্তিদের মোট সম্পদের আড়াই শতাংশ সম্পদ দান করলে দেশটির প্রায় দেড় কোটি শিশু বিদ্যালয়ে ফিরে যেতে পারবে। অক্সফামের ভারতের সিইও জানিয়েছেন, আর্থিক বৈষম্যের কারণে দিনের পর দিন কষ্ট করে যাচ্ছে ভারতের দরিদ্র জনগোষ্ঠী। প্রতিবেদনটিতে দেখা গেছে ধনীদের দেওয়া ট্যাক্সের চেয়ে দরিদ্রদের ট্যাক্সের পরিমাণ বেশি।
সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সভায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়, ভারতের ধনকুবেররা যদি তাদের সম্পূর্ণ সম্পদের ওপর একবার মাত্র ২ শতাংশ কর দেন তাহলে আগামী তিন বছরের জন্য ভারতে অপুষ্টির শিকার মানুষের পুষ্টির জন্য ৪০ হাজার ৪২৩ কোটি টাকার প্রয়োজন মিটবে।
এসডব্লিউএসএস/১১৫০
আপনার মতামত জানানঃ