এমনিতেই মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সরকারের জন্য অস্বস্তি তৈরি করে। এরই মধ্যে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা রয়েছে। তাছাড়া সম্প্রতি মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নিরাপত্তা নিয়ে ওয়াশিংটনের গভীর উদ্বেগ সরকারের জন্য নতুন এক অস্বস্তি সামনে এনেছে।
নতুন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির আশঙ্কা প্রকাশ করে তা ঠেকাতে এখনই যথাসম্ভব পদক্ষেপ নিতে বিদেশস্থ বাংলাদেশ দূতদের জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে সরকার।
এ সংক্রান্ত দীর্ঘ এক চিঠিতে পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন, আমাদের একটি বিশেষায়িত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও তার সিনিয়র কর্মকর্তাদের ওপর একতরফা নিষেধাজ্ঞা এসেছে। সরকার ও তার প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে সরকারি সংস্থা-ব্যক্তির ওপর একই প্রেক্ষাপটে বা অন্য কারণে আরও নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে বলে আমাদের বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
এ অবস্থায় নিষেধাজ্ঞা ঠেকাতে প্রস্তুত থাকার লক্ষ্যে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি সময় অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে আপনাদের (দূতদের) প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। সময়ে সময়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হালনাগাদ তথ্য ও নির্দেশনা দেবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও বাহিনীটির সাবেক-বর্তমান ৭ কর্মকর্তার ওপর ২০২১ সালের ১০ই ডিসেম্বর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ফের একই ধরনের নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না সরকার।
এমন প্রেক্ষাপটে এ ধরনের পরিস্থিতি সামাল দিতে বিদেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের বাড়তি সতর্কতামূলক ওই চিঠি দেয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র।
বলা হয়েছে, একতরফা নিষেধাজ্ঞার মতো পরিস্থিতি সামাল দিতে রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার এবং সব মিশন প্রধানকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সচিব ৭ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। একই সঙ্গে ২০২৩ সালে বিদেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের কাজের অগ্রাধিকারের একটি তালিকা দেয়া হয়েছে।
২০২২ সালের ৩১শে ডিসেম্বর ওই চিঠি মিশনগুলোতে পাঠানো হয় বলে নিশ্চিত করেছে সূত্র। গত ১০ই ডিসেম্বর থেকে নতুন নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে এমন আলোচনার মধ্যেই সচিবের চিঠি পাঠানোর বিষয়টি সামনে এলো। যা নিয়ে রাজনীতি এবং কূটনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। যদিও বারবারই সরকারের তরফে মন্ত্রী সচিবরা নতুন নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা মৌখিকভাবে উড়িয়ে দিচ্ছেন।
পররাষ্ট্র সচিব চিঠি পাঠানোর একদিন পর অর্থাৎ নতুন বছরের প্রথম দিনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বিদেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন রাষ্ট্রদূত বলেন, পররাষ্ট্র সচিবের নির্দেশনার চিঠি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক দু’টোই একসূত্রে গাঁথা। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের বাড়তি উদ্যোগ নিতে তাগিদ দেয়া হয়েছে।
তবে এক্ষেত্রে কোনো দেশের নাম উল্লেখ করা হয়নি। মিশন প্রধানদের কাছে পাঠানো চিঠিতে মাসুদ বিন মোমেন সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করতে বলেছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের জন্য ২০২৩ সালে করণীয় সংক্রান্ত ষষ্ঠ নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যেকোনো কূটনীতিক মিশনের মৌলিক কাজ হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক বজায় রাখার মধ্যদিয়ে দৈনন্দিন কাজ এগিয়ে নেয়া।
তবে বর্তমান বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আরও বাড়তি কাজের চাহিদা রয়েছে। নির্দেশনায় আরও বলা হয়, আমাদের একটি বিশেষায়িত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও তার সিনিয়র কর্মকর্তাদের ওপর একতরফা নিষেধাজ্ঞা এসেছে। সরকার ও তার প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে সরকারি সংস্থা-ব্যক্তির ওপর একই প্রেক্ষাপটে বা অন্য কারণে আরও নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে বলে আমাদের বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
এজন্য নিষেধাজ্ঞা ঠেকাতে প্রস্তুত থাকার লক্ষ্যে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি সময় অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি। সময়ে সময়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আপনাদের হালনাগাদ তথ্য ও নির্দেশনা দেবে।
চিঠি পেয়েছেন এমন একাধিক বাংলাদেশি মিশন প্রধান গণমাধ্যমকে বলেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সরকারের জন্য অস্বস্তি তৈরি করেছে। নতুন করে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা রয়েছে। তাছাড়া সম্প্রতি মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নিরাপত্তা নিয়ে ওয়াশিংটনের গভীর উদ্বেগ সরকারের জন্য নতুন এক অস্বস্তি সামনে এনেছে।
এই প্রেক্ষাপটে ১লা জানুয়ারি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সমন্বয় সভা হয়। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এই সভায় অংশগ্রহণ করেন। সভায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সরকারের সব পক্ষ যাতে অভিন্ন সুরে কথা বলে, সে বিষয়টি আলোচিত হয়। রাষ্ট্রদূতদের কাছে পাঠানো পররাষ্ট্র সচিবের চিঠি তারই ধারাবাহিকতা বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা।
উল্লেখ্য, চলতি মাসে মার্কিন উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের একাধিক সফর রয়েছে বাংলাদেশে। রাজনৈতিক ওই সব সফরে বিদ্যমান দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচন বিশেষত নিষেধাজ্ঞা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হওয়ার আভাস মিলেছে।
এসডব্লিউএসএস/১৭৫৫
আপনার মতামত জানানঃ