সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৬ হাজার ফুট উঁচুতে অবস্থিত একটি হ্রদ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সেখানে ২০০ মানুষের কঙ্কাল খুঁজে পাওয়া যায়। বাতাসের বেগে খবরটি ছড়িয়ে গেল বিশ্বজুড়ে। কৌতূহলের কেন্দ্রে চলে এলো কঙ্কাল হ্রদ। গবেষক আর বিশ্লেষকদের একের পর এক তত্ত্ব আর মতামত ভুল প্রমাণিত হয়। পৃথিবীর সেরা রহস্যেময় হ্রদটির এখনো কোনো সমাধান খুঁজে পায়নি কেউ।
কঙ্কাল হ্রদ। কঙ্কাল ছড়িয়ে থাকা এক রহস্য। যে রহস্য আজো পৃথিবীর অমীমাংসিত রহস্য হয়ে টিকে আছে। ইন্ডিয়ান লেকে নবম শতাব্দীর মানুষের কঙ্কাল খুঁজে পাওয়ার কথা মিডিয়ার কল্যাণে বিশ্ববাসী জেনেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যখন ব্রিটিশ পেট্রোল বাহিনী এ পথ ধরে এগোচ্ছিল তখন হঠাৎ চোখ আটকে যায় তাদের। মানুষের খুলি আর শরীরের হাড় দেখতে পেয়ে থামে তারা।
প্রথমে একটি কঙ্কাল তারপর আরেকটি। এক, দুই, তিন করে যখন কঙ্কালের বহর বাড়ছিল। আর ঠিক ওই মুহূর্তে পুরো দ্বীপ নিয়ে তারা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। তারা সেবার ২০০ কঙ্কাল খুঁজে পেয়েছিলেন। এই দেহগুলো কাদের হতে পারে সে প্রশ্ন বুকে নিয়ে দ্বীপজুড়ে চালানো হয় গবেষণা। তবে তখনো খুব বেশি জানা যায়নি। তারা ভাবল এই দেহগুলো জাপানি সৈন্যদের হতে পারে।
প্রাকৃতিক কারণে বা দস্যুদের হামলায় হয়তো তারা প্রাণ হারিয়েছে। তবে আধুনিক সভ্যতার যন্ত্র কাজে লাগিয়ে সে সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া হয়। এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি এই মানুষগুলোকে হত্যা করা হয়েছে, নাকি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে তাদের প্রাণ হারিয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব ৮৫০, তখন কী এমন ঘটেছিল? সেটা জানতে এই কঙ্কাল হ্রদের কঙ্কালগুলো এখনো পৃথিবীবাসীর কাছে কৌতূহলের চূড়ান্তে রয়েছে।
পৃথিবীতে রহস্যের শেষ নেই। এখনো বহু রহস্যময় বিষয় রয়েছে যেগুলোর কোনো সুরাহা হয়নি। কঙ্কাল হ্রদে পাওয়া কঙ্কালগুলো নিয়ে কৌতূহল নিরসন করতে গিয়ে পাওয়া গেছে বিচ্ছিন্ন কিছু উত্তর। ভারতীয় বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল দাবি করে, রূপকুণ্ড হ্রদটিকে কেন্দ্র করে খ্রিস্ট জন্মের আগে থেকেই রহস্য চালু ছিল। তখন অনেক মুনি আর ঋষির নামে বিভিন্ন গল্প চালু ছিল হ্রদটিকে কেন্দ্র করে।
তবে ১৯৪২ সালের দিকে একজন বনরক্ষী হঠাৎ হ্রদটি এবং অনেক গণকবর আবিষ্কার করেন। এই ঘটনায় বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। যদিও পরবর্তীতে জানা যায়, কঙ্কালগুলো ১২ থেকে ১৫ শতকের। তবে মানুষের মনে আজও ভাবনা ঘুরপাক খায় এই ভেবে, কেন ১৬ হাজার ফুট উঁচুতে সেই নয় শতকের সময়ে একসঙ্গে এতগুলো মানুষের কঙ্কাল পড়ে রয়েছে।
বিজ্ঞানীরা কঙ্কালগুলো এবং প্রাপ্ত গহনা পরীক্ষা করেন। পরীক্ষার পর জানান, এগুলো কোনো রাজকীয় বাহিনী বা একদল তীর্থযাত্রীর। এমনও হতে পারে, এই মানুষগুলো কোনো তীব্র তুষারঝড়ের কবলে মারা গিয়েছিল। তবে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্যটি হাজির করেন একদল নৃতত্ত্ববিদ। তাদের কথা অনুযায়ী, ওই অঞ্চলে বসবাসরত কোনো গোষ্ঠী গণহারে আত্মহত্যা করেছিলেন। এ হলো মূল রহস্য।
পৃথিবীবাসীর সামনে এই রহস্যের আবির্ভাব খুব বেশি দিন আগে নয়। আরেকদল অবশ্য বলে, প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় এই রাজকীয় বাহিনী বা তীর্থযাত্রী দলের মানুষগুলোর মৃত্যু হয়েছে। এই হ্রদটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৬ হাজার ফুট উঁচুতে অবস্থিত। অনেক পর্যটক এবং অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষ মানচিত্র ঘেঁটে এবং বছরের পর বছর অনুসন্ধান চালিয়েও হ্রদটির সন্ধান পায়নি।
আবার এমনো হয়েছে, অল্প একটু চেষ্টাতেই অনেকে দেখতে পেয়েছেন হ্রদটিকে। সবচেয়ে বড় কথা এটি সবাই দেখতেও পান না। এর আশপাশের এলাকাও ছিল অতিরিক্ত ঠাণ্ডা। এতদিন পর্যন্ত কেউই এখানকার হ্রদটির কথা জানতো না। কারও বর্ণনায় এই হ্রদের কথা পাওয়া যায়নি। এটি একটি হিমবাহ হ্রদ। এটির অবস্থান ভারতের উত্তরখণ্ডে।
এ ছাড়া অনেকে বলেন ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে মানুষ জানত এই কঙ্কালগুলোর কথা। কারা এই হতভাগ্যরা? কীভাবে তারা মারা গেল? যুগের পর যুগ কৌতূহলী মানুষ এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে। এই হ্রদটির উৎপত্তি ও বিকাশ সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে ঠিক যে সময় থেকে এই হ্রদটি পৃথিবীর মানুষের কাছে পরিচিত হলো, তখন থেকেই এর সঙ্গে রহস্যের ব্যাপারটি একেবারে মিলেমিশে গেছে।
ভারতে অবস্থিত এই হৃদটিকে মানুষজন রূপকুণ্ডের রহস্যময় অভিশপ্ত কঙ্কাল হ্রদ হিসেবেই চেনে। এখানে ৫০০ এর মতো মানুষের কঙ্কাল পাওয়া যায়। এ কারণে রূপকুণ্ড হ্রদের নাম হয়ে যায় কঙ্কাল হ্রদ। ১৯৪২ সালে নন্দা দেবী রিসার্ভ পার্কের রেঞ্জার এইচ কে মাধওয়াল এই কঙ্কালগুলো প্রথম আবিষ্কার করেন। প্রথমে মনে করা হয়েছিল এগুলো জাপানি সৈন্যদের কঙ্কাল যারা ওই অঞ্চলে অনুপ্রবেশ করেছিল কিন্তু প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় তারা মারা যায়। সেসময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছিল। স্থানীয় ব্রিটিশ প্রশাসন বিষয়টি তদন্ত করেন। তদন্ত করতে গিয়ে দেখল কঙ্কালগুলো অন্তত এক শতাব্দী প্রাচীন।
এসডব্লিউ/এসএস/১৯১৮
আপনার মতামত জানানঃ