আজ থেকে ১২ কোটি বছর পূর্বে চার পাখার ডাইনোসরেরা চীনের বনাঞ্চলে বিচরণ করতো। ডাইনোসর হলেও এর আকৃতি ছিল এখনকার কাকের সমান। মাইক্রোর্যাোপ্টরস নামে পরিচিত এই ডাইনোসর প্রজাতির বিষয়ে গবেষকরা এরইমধ্যে অনেক কিছু নিশ্চিত হয়েছেন। তবে তারা কি খেত এবং কীভাবে খেত তা এখনও জানা যাচ্ছিল না। এবার সেই রহস্যেরও একটি কূল করা গেলো।
সায়েন্স অ্যালার্টের এক রিপোর্টে জানানো হয়েছে, সম্প্রতি মাইক্রোর্যাাপ্টরসের এমন একটি ফসিল আবিষ্কার হয়েছে যা থেকে এর সর্বশেষ খাবার কি তা জানা গেছে এবং বিস্ময়কর হলেও মাইক্রোর্যােপ্টরসটি একটি স্তন্যপায়ী প্রাণীকে খেয়েছিল।
এ নিয়ে কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক হ্যানস লারসন বলেন, আমরা প্রথমে এটা বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। তবে এর পেটে আসলেই একটি ছোট ইঁদুরের মতো স্তন্যপায়ী প্রাণীর পা ছিল, যা প্রায় এক সেন্টিমিটার লম্বা। এই দীর্ঘ বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীদের খাদ্য গ্রহণ সম্পর্কে আমাদের কাছে এই আবিষ্কারগুলিই একমাত্র দৃঢ় প্রমাণ। পাশাপাশি এগুলো বেশ বিরলও বটে।
২০০০ সালে চীনের লিয়াওনিং-এ মাইক্রোর্যা প্টরের প্রথম জীবাশ্ম পাওয়া যায়। এর তিনটি পরিচিত প্রজাতি রয়েছে, যারা আদি ক্রেটাসিয়াস যুগে বাস করত। নতুন যে জীবাশ্মটি পাওয়া গেছে তা মাইক্রোর্যা প্টর ঝাওইয়ানাসের অন্তর্গত।
মাইক্রোর্যা প্টরদের বাহু এবং পায়ে সম্পূর্ণ পালকযুক্ত ডানা ছিল। এ ধরণের ডাইনোসরদের মধ্যে একদম প্রথম দিকেই রয়েছে মাইক্রোর্যাসপটররা। পালকযুক্ত ডাইনোসর মধ্যে আর্কিওপটেরিক্সও বেশ পরিচিত। আধুনিক পাখিরা যে ডাইনোসর থেকেই এসেছে তা এসব আবিষ্কার বারবার প্রমাণ করেছে।
যদিও কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, মাইক্রোর্যা প্টররা তাদের ডানাকে মূলত আকাশে ভেসে বেড়াতে ব্যবহার করতো। উড়ে বহুদূর যাওয়ার ক্ষমতা তাদের ছিল কিনা তা অস্পষ্ট। এখনও অবধি ছোট ডাইনোসরগুলি কেবল পাখি, মাছ এবং টিকটিকি খেত বলেই প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সর্বশেষ আবিষ্কারটি যদিও সেই ধারণাকে আরও প্রসারিত করেছে। এতে বুঝা যায় যে, সুবিধা মতো মাইক্রোর্যােপ্টররা সব খাবারই খেত। ছোট মেরুদণ্ডী প্রাণীকেও তারা হত্যা করতে সক্ষম ছিল।
লারসন বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই তাদের পেটে মাছ, একটি পাখি এবং একটি টিকটিকির প্রমাণ পেয়েছি। এই নতুন আবিষ্কারটি তাদের খাদ্যে ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণীকেও যুক্ত করেছে। এই ডাইনোসরগুলি সুবিধাবাদী ছিল এবং খাবারের ব্যাপারে তাদের বাচবিচার ছিল না।
পেটের মধ্যে খাবার সংরক্ষণ করা অবস্থায় ডাইনোসরের জীবাশ্ম পাওয়া অবিশ্বাস্যভাবে বিরল। সমস্ত মাংসাশী ডাইনোসরের জীবাশ্মগুলির মধ্যে আমরা কেবলমাত্র ২০টির কথা জানি যেগুলিতে তাদের শেষ খাবারের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
সর্বশেষ আবিষ্কার সেই সংখ্যাটি ২১-এ নিয়ে গেছে। ডাইনোসররা কীভাবে ভূমি ছেড়ে উড়তে শিখেছিল সেই বিবর্তন বুঝার জন্যেও এই আবিষ্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডাইনোসরদের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে আরও কিছু চমকপ্রদ তথ্য বিভিন্ন সময়ে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছে। এই যেমন জুরাসিক যুগে বাস করা ডাইনোসরের প্রজাতি ডিপ্লোডোকাসকে ধরা হয় ইতিহাসের অন্যতম নিরামিষাশী প্রাণী। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০ কোটি বছর আগে বিদ্যমান থাকা ডিপ্লোডোকাসের পূর্বপুরুষরা মাংসাশী হয়ে থাকতে পারে।
পৃথিবীতে বিচরণ করা প্রথম দিকের কিছু ডাইনোসরের দাঁত নিয়ে গবেষণা শেষে বিজ্ঞানীরা এই তথ্য জানিয়েছেন। সায়েন্স অ্যাডভান্সেস সাময়িকীতে এই গবেষণা প্রকাশিত হয়।
ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদলের প্রধান অ্যান্তোনিও ব্যালেল মায়োরাল বলেন, ট্রায়াসিক যুগে যদিও সর্বভুক, তৃণভোজী, মাংসাশীসহ সব ধরনের প্রাণী বিদ্যমান ছিল, তবে তাদের পূর্বসূরিরা একই খাবার গ্রহণ করেছে, তা বলা যাবে না। তিনি আরো বলেন, দুটি প্রধান নিরামিষাশী ডাইনোসর বংশের প্রথম দিকের সদস্যরা শুধু তৃণভোজী ছিল না।
গবেষকরা আদি যুগের ১১টি ডাইনোসরের দাঁত বিশ্লেষণ করেন, যেখানে ডাইনোসরের লম্বা গলা বিশিষ্ট পূর্বপুরুষ এনজুয়েভু ইন্টলোকো এবং পাখির মতো দেখতে লেসেথোসাউরাস ডায়াগনোসটিকাসের দাঁতও ছিল। দুই প্রজাতিই পৃথিবীতে ২০ কোটি বছর আগে বিদ্যমান ছিল।
প্রধান গবেষক মায়োরাল বলেন, দাঁত দিয়েই কোনো খাদ্য চিবিয়ে খায় প্রাণী। তাই খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে তথ্য পেতে দাঁত একটি ভালো সূত্র।
দাঁতের আকৃতি এবং কার্যকারিতা দেখার পাশাপাশি গবেষকরা কম্পিউটারে মডেল তৈরি করে কামড়ানোর সময় ডাইনোসর কোন দাঁতে বেশি চাপ দিত, সেটাও অনুমানের চেষ্টা করেছেন।
এসডব্লিউএসএস/১৮৫৫
আপনার মতামত জানানঃ