বর্তমান সময়ে সবকিছু অনেক সহজ হয়ে গেছে। আমরা এখন চাইলেই কয়েক ঘন্টার মধ্যেই এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেতে পারি। চাইলেই কয়েক মুহুর্তের মধ্যেই পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে থাকা মানুষগুলোর সাথে যোগাযোগ করতে পারি। এখনকার সময়ে টেকনোলজি অনেক আপডেট হওয়ার সাথে সাথে মানুষগুলোও স্মার্ট হয়ে গেছে। এই প্রজন্মের মানুষগুলোর লাইফ স্টাইল এমন হয়ে গেছে যে প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া তারা এক পাও সামনে অগ্রসর হতে পারে না ।
কিন্তু আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন। হাজার হাজার বছর আগের পৃথিবীটা কেমন ছিল? সেই আদ্যিকালের মানুষরা কেমন করে দিন গুজরান করতেন? ইতিহাসের পাতায় আদিযুগকে নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। নানা সময়ই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে খননকার্য চালান প্রত্নতত্ত্ববিদরা। তুরস্কের একটি জায়গায় খনন কাজ চালিয়ে তেমনই এক আদি নিদর্শনের সন্ধান পাওয়া গেল।
২০২১ সালে দক্ষিণ-পশ্চিম তুরস্কের সেবুর্চ এলাকায় পাথরের দেওয়ালে খোদাই করা নানা ভাস্কর্যের সন্ধান পেয়েছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। ঐ শিল্পকর্মগুলো প্রায় ১১ হাজার বছরের পুরনো বলে দাবি করা হয়েছে। সম্প্রতি এ নিয়ে গত ৮ ডিসেম্বর ‘অ্যান্টিকুইটি’ নামে একটি জার্নালে প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
এ নিয়ে লিখেছেন ইস্তানবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক আইলেম ওজদোয়ান। পাথরের দেওয়ালে খোদাই করা শিল্পকর্মে ফুটে উঠেছে নানা কাহিনী। মানুষ বনাম জন্তুদের লড়াইয়ের নানা মুহূর্তের নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে।
হাজার হাজার বছর আগে হিংস্র জন্তুদের আক্রমণে মানবজাতি কীভাবে আত্মরক্ষা করতো, তার আভাস পাওয়া গিয়েছে ঐ শিল্পকর্মে। একটি শিল্পকর্মে দেখা গিয়েছে, দুই পুরুষকে আক্রমণ করছে জন্তুরা। প্রাণ বাঁচাতে দুইজনেই আত্মরক্ষার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে।
অন্য একটি শিল্পকর্মে ধরা পড়েছে আরো এক ভয়ঙ্কর মুহূর্ত। নিজের যৌনাঙ্গে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক ব্যক্তি। তার দুইপাশে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে দুইটি চিতা। চিতা দুইটি যেন ঐ ব্যক্তিকে আক্রমণের জন্য মুখিয়ে রয়েছে।
এ থেকে গবেষকরা ধারণা করার চেষ্টা করেছে যে সে কালে জন্তুদের আক্রমণের মুখে মানুষ কী করতো, তারই আভাস পাওয়া গিয়েছে ঐ শিল্পকর্মে।
অর্থাৎ হিংস্র জন্তুর আক্রমণের মুখে পড়ে পুরুষরা নিজেদের যৌনাঙ্গে হাত রেখে আড়াল করতেন নিজেদের বাঁচাতে। আত্মরক্ষার জন্যই তারা সে কালে এমনটা করতেন বলে ধারণা প্রত্নতত্ত্ববিদদের।
অন্য একটি শিল্পকর্মে তুলে ধরা হয়েছে এক ব্যক্তি ও ষাঁড়কে। সেখানে দেখা গিয়েছে, এক ব্যক্তির দিকে তেড়ে গিয়েছে একটি ষাঁড়। আক্রমণের জেরে যেন লাফিয়ে উঠেছেন ঐ ব্যক্তি। তার এক হাতে রয়েছে সাপ।
শিল্পকর্মে যে পুরুষগুলোকে দেখা গিয়েছে, তাদের চেহারাও অন্য রকম। গোলগাল মুখ, বড় কান, বড় চোখ।
খননকার্য চালিয়ে প্রত্নতত্ত্ববিদদের ধারণা, খ্রিস্টপূর্ব নবম শতকে ঐ জায়গায় নিওলিথিক মানুষের জনবসতি ছিল।
গবেষকদের মতে, ঐ সময়ে মানবজীবনে গুরুত্বপূর্ণ রূপান্তর ঘটেছে। ঘুরে ঘুরে শিকার করা জীবনযাপনের বদলে কৃষিকাজ করে স্থায়ী ভাবে বসবাস করতে শুরু করেছিল লোকেরা।
এই শিল্পকর্মের মাধ্যমে যে কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে, তা সবচেয়ে পুরনো বলে দাবি করা হয়েছে। আদ্যিকালে মানুষ ও জন্তুদের মধ্যে মিথষ্ক্রিয়া কেমন ছিল, তাই-ই তুলে ধরা হয়েছে শিল্পকর্মে।
ঐ এলাকায় আরো খননকার্য চালালে আরো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া যেতে পারে বলে ধারণা গবেষকদের। নিওলিথিক যুগের নানা অজানা কাহিনীও জানা যেতে পারে বলে মনে করছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা।
এসডব্লিউএসএস/২০১৭
আপনার মতামত জানানঃ