দেশে ভোক্তাপর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম আবার বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশে ডিসেম্বর মাসের জন্য তরল প্রাকৃতিক গ্যাস এলপিজির দাম কেজিতে প্রায় ৪ টাকা বাড়িয়ে ১০৮ টাকা ০৯ পয়সা করা হয়েছে। এত দিন এর জন্য দিতে হতো ১ হাজার ২৫১ টাকা। সে হিসাবে ১২ কেজি এলপিজির দাম বাড়ল ৪৬ টাকা।
রোববার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) রান্নার গ্যাসের নতুন এই দাম ঘোষণা করে, যা সন্ধ্যা ৬টা থেকে কার্যকর হবে।
নভেম্বর মাসে প্রতিকেজি এলপিজির দাম ধরা হয়েছিল ১০৪ টাকা ২৬ পয়সা। সে অনুযায়ী ১২ কেজি ওজনের একটি সিলিন্ডারের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ঠিক করা হয়েছিল ১২৫১ টাকা। উল্লেখ্য, নভেম্বর মাসে ১২ কেজিতে ৫১ টাকা বেড়েছিল।
নভেম্বরে এলপিজির মূল উপাদান প্রোপেন ও বিউটেনের ৩৫ অনুপাত ৬৫ মিশ্রণের প্রতি টনের সৌদি সিপি মূল্য ছিল ৬১০ ডলার। ডিসেম্বরে সেটা বেড়ে ৬৫০ ডলারে দাঁড়িয়েছে। সে কারণে খুচরায় বেড়েছে এলপিজির দাম।
নতুন দর অনুযায়ী প্রতি কেজি রেটিকুলেটেড এলপিজির দাম ঠিক করা হয়েছে ১০৪ টাকা ৮৫ পয়সা, যা আগের মাসে ছিল ১০১ টাকা ০২ পয়সা, ভোক্তা পর্যায়ে।
উল্লেখ্য, ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্ম জুমে নতুন এ দামের ঘোষণা করেছেন বিইআরসির চেয়ারম্যান আবদুল জলিল। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারের ইচ্ছা অনুসারে সংশ্লিষ্ট বিভাগ বিইআরসি আইন সংশোধন করেছে। সরকার চাইলে আইন পরিবর্তন করতে পারে। কমিশন আইন অনুযায়ী চলবে।
গত বছরের ১২ এপ্রিল দেশে প্রথমবারের মতো এলপিজির দাম নির্ধারণ করে বিইআরসি। এর পর থেকে প্রতি মাসে দাম সমন্বয় করা হচ্ছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আবদুল জলিল বলেন, ১৮টি কোম্পানির মধ্যে ১৬টি কোম্পানির আমদানির ঋণপত্র দেখে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারের গড় হিসাব করা হয়েছে।
বিইআরসি জানায়, সরকারি এলপিজির দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। বেসরকারি খাতে ভোক্তাপর্যায়ে প্রতি কেজি এলপিজির নতুন দাম ১০৮ টাকা ৯ পয়সা। এ হিসাবে বিভিন্ন পরিমাণের এলপিজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারিত হবে। এ ছাড়া গাড়িতে ব্যবহৃত এলপিজির (অটো গ্যাস) নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি লিটার ৬০ টাকা ৪১ পয়সা, যা আগে ছিল ৫৮ টাকা ২৮ পয়সা।
জানা গেছে, এলপিজি তৈরির মূল উপাদান প্রোপেন ও বিউটেন বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। প্রতি মাসে এলপিজির এ দুই উপাদানের মূল্য প্রকাশ করে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান আরামকো। এটি সৌদি কার্গো মূল্য (সিপি) নামে পরিচিত। এ সৌদি সিপিকে ভিত্তিমূল্য ধরে দেশে এলপিজির দাম সমন্বয় করে বিইআরসি।
দাম ঘোষণার সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিইআরসির সদস্য মকবুল-ই-এলাহী চৌধুরী, আ ব ম ফারুক, মোহাম্মদ বজলুর রহমান ও মো. কামরুজ্জামান।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গাসের দাম বৃদ্ধির কারণে সব শ্রেণির গ্রাহকই চাপে পড়বেন। বস্তুত এ সময় গ্যাসের দাম বৃদ্ধিকে অযৌক্তিক বলে মনে করি আমরা। দেশে বেশকিছু দিন ধরে দ্রব্যমূল্য ক্রমাগত বাড়ছে। এরই মধ্যে কিছুদিন আগে বাড়ানো হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাড়ছে খাদ্যশস্যের দাম। নিত্যপণ্যের দাম আরেক দফা বেড়ে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে দেশে মূল্যস্ফীতি আরও প্রকট হবে।
এসডব্লিউ/এসএস/২০২৫
আপনার মতামত জানানঃ