সম্প্রতি ৪৮ কোটি ৭০ লাখেরও বেশি হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর ফোন নম্বর চুরি করে নিয়েছেন সাইবার অপরাধীরা। এই তালিকায় ৩৮ লাখ বাংলাদেশি হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর তথ্যও রয়েছে বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি গবেষণা-ভিত্তিক অনলাইন প্রকাশনা সাইবারনিউজের এক প্রতিবেদন এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সাইবারনিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৬ নভেম্বর হ্যাকিং কমিউনিটি ফোরামে একটি বিজ্ঞাপন পোস্ট করা হয়। বিজ্ঞাপনে দাবি করা হয়, তাদের কাছে ৪৮৭ মিলিয়ন হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর মোবাইল নম্বরের ডেটাবেজ রয়েছে। তাতে বিশ্বের ৮৪টি দেশের হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর তথ্য রয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে।
বর্তমানে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০০ কোটি। এর মধ্যে এক চতুর্থাংশ ব্যবহারকারীর হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর সাইবার অপরাধীরা চুরি করেছেন বলে জানিয়েছে সাইবার নিউজ। ৮৪টি দেশের যেসব হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর ফোন নম্বর তাদের ডেটাবেজে রয়েছে, তারা তথ্য ফাঁসের ঝুঁকিতে রয়েছেন।
এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৩২ মিলিয়ন, যুক্তরাজ্যের ১১ মিলিয়ন, রাশিয়ার ১০ মিলিয়ন, ইতালির ৩৫ মিলিয়ন, সৌদি আরবের ২৯ মিলিয়ন, মিশরের ৪৫ মিলিয়ন, ফ্রান্স ও তুরস্কের ২০ মিলিয়ন করে, মালয়েশিয়ার ১১ মিলিয়ন, ভারতের ৬ মিলিয়ন এবং বাংলাদেশের ৩.৮ বিলিয়ন ব্যবহারকারী রয়েছেন।
বিশ্বের এই বিপুল সংখ্যক সক্রিয় হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর ফোন নম্বর কীভাবে ফাঁস হয়েছে, তা সাইবার নিউজের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়নি। তবে রিপোর্টে বলা হয়েছে, সাইবার অপরাধীরা স্ক্র্যাপিং নামক একটি প্রক্রিয়ার সাহায্য নিয়ে পুরো ডেটাবেজ প্রকাশ্যে এনেছেন। এই পদ্ধতিতে বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে ডেটা সংগ্রহ করা হয়।
একটি নিম্নমানের সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত ফোরামে এই তথ্য ফাঁস করা হয়েছে যা সবার জন্য উন্মুক্ত। ফাঁস হওয়া তথ্যের মধ্যে আছে ব্যবহারকারীর ফোন নম্বর, ফেসবুক আইডি, পুরো নাম, অবস্থান, জন্মতারিখ এবং জীবনবৃত্তান্ত। এমনকি কোনও কোনও ব্যবহারকারীর ই-মেইল আইডি ফাঁস হওয়ার প্রমাণও পাওয়া গেছে।
ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ফাঁস হওয়া এসব তথ্য সঠিক কিনা তা যাচাই করেছে বিজনেস ইনসাইডার। এজন্য তালিকায় থাকা পরিচিত ব্যক্তিদের ফাঁস হওয়া তথ্য যাচাই করে দেখা হয়েছে। যাচাইয়ের পর বিজনেস ইনসাইডার বলছে, সত্যিই ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়েছে।
ফাঁস হওয়া ফোন নম্বর কাজে লাগিয়ে স্প্যাম মেইল পাঠানোর পাশাপাশি ফিশিং আক্রমণ চালাতে পারে হ্যাকাররা। শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণও নিতে পারে। এর পাশাপাশি ব্যবহারকারীদের কার্যক্রমের ওপর নজরদারি করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তথ্য ফাঁসের ঘটনাটি নিশ্চিত করেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষও। এ সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানটির এক মুখপাত্র বলেন, ফেসবুকের পক্ষ থেকে ২০১৯ সালে ঠিক করে নেওয়া একটি দুর্বলতার মাধ্যমে এসব তথ্য ফাঁস করা হয়েছে। কয়েক বছরের পুরনো হলেও ফাঁস হওয়া এসব তথ্যের মাধ্যমে বিপদে পড়তে পারেন ব্যবহারকারীরা।
নিরাপত্তা নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপের দুর্বলতা নতুন কিছু নয়। চলতি বছর মেটা অধীনস্ত এই অ্যাপটি তাদের অফিসিয়াল পেজে, বিদ্যমান ভার্সনে নিরাপত্তা জনিত একটি ‘ক্রিটিকাল’ ত্রুটি বা দুর্বলতা আবিষ্কারের খবর প্রকাশ করে। যদিও এই সমস্যার সমাধান স্বরূপ, অ্যাপের একটি নতুন সংস্করণে এর প্যাচ রিলিজ করা হয়েছে বলেও জানানো হয়েছিল সংস্থার পক্ষ থেকে। আর তাই, প্রত্যেক হোয়াটসঅ্যাপ ইউজার যারা তখনো পুরানো সংস্করণ ব্যবহার করছেন, তাদের নিরাপত্তার খাতিরে অবিলম্বে অ্যাপ্লিকেশনটি আপডেট করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
হোয়াটসঅ্যাপ কেলেঙ্কারির শেষ এখানেই নয়। গোপনীয়তার নিশ্চয়তা দিলেও ফেসবুক ইঙ্কের আওতাধীন হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজিং সার্ভিস মোটেই গোপনীয় কিছু নয়। ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত মেসেজ পড়েন এমনকি শেয়ারও করেন ফেসবুককর্মীরা!
যদিও ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার ফিচারের ব্যাপারে জনপ্রিয় এই অ্যাপের প্রচারণায় দাবি করা হয়, মূল মালিকানা কোম্পানি ফেসবুক তাদের ব্যবহারকারীদের মধ্যে আদানপ্রদান হওয়া মেসেজ পড়তে পারে না।
কিন্তু গত ৭ সেপ্টেম্বর মার্কিন গণমাধ্যম প্রো-পাবলিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বজুড়ে হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজ পড়তে ও সেগুলো প্রয়োজন অনুসারে সংশোধন করতে এক হাজারের বেশি বেতনভুক্ত কর্মী রেখেছে ফেসবুক। তথাকথিত প্রাইভেট বা ডিজিটাল কোডিংয়ের মাধ্যমে সুরক্ষিত (ইনক্রিপটেড) মেসেজ পড়ছেন এসব কর্মীরা।
এখানেই শেষ নয়, ফেসবুক ইঙ্ক হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের তথ্য বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা- যেমন, যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের সঙ্গেও শেয়ার করে।
ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ বারবার দাবি করেছেন, হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের বার্তা মূল কোম্পানি দেখে না। কিন্তু তারপরই বিস্ফোরক প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হলো।
এর আগে, ২০১৮ সালে প্রথম মার্কিন সিনেটে দেওয়া এক শুনানিতে ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী জাকারবার্গ বলেছিলেন, ‘আমরা হোয়াটসঅ্যাপের কোনো কন্টেট দেখি না।’
কিন্তু প্রো-পাবলিকার প্রতিবেদন বলছে, ‘মেসেজ মডারেট করাসহ কল আড়ি পাততে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস, আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন ও সিঙ্গাপুরে রীতিমতো বহুতল অফিস রয়েছে ফেসবুকের। এসব অফিসের এক হাজার নিয়মিত কর্মী প্রতিনিয়ত কোটি কোটি বার্তা ও কল বিশ্লেষণ করছেন।’
এসডব্লিউ/এসএস/২০৪৪
আপনার মতামত জানানঃ