মহাসাগরে লুকিয়ে আছে নানা রহস্য। বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে অনেক কিছু সম্পর্কেই জেনেছে বিশ্ব। তবে তা হতে পারে মাত্র একাংশ! পুরো বিশ্বকে ঘিরে রেখেছে ৫টি মহাসাগর। এই মহাসাগরগুলোতে অন্তর্ভুক্ত আছে ছোট ছোট অনেক সমুদ্র। ক্ষুদ্রতম এলাকাগুলোয় মহাসাগরকে সাগর, উপসাগর, উপত্যকা, প্রণালী ইত্যাদি নামে ডাকা হয়।
সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, মহাসাগরের নিচেও আছে হ্রদ। এমনকি বিশালাকার নদীও আছে সাগরতলে। মেক্সিকো উপসাগরের মতো সমুদ্রের তলদেশে নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় এসব নদী ও লেক আছে। কীভাবে এমনটি সম্ভব?
বিশেষজ্ঞদের মতে, সমুদ্রের পানি যখন লবণের ঘন স্তরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়; তখন লবণ দ্রবীভূত হয় এবং সমুদ্রের তলদেশে নিম্নচাপ তৈরি করে। এভাবেই সৃষ্টি হয় জলাশয়ের। এই ডুবো জলাশয় এবং নদী কয়েক মাইল পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।
আরও জানলে অবাক হবেন, এমন কিছু প্রাণী আছে, যারা সাগরতলের এসব নদীতে ডুবে থাকতে উপভোগ করে। সমুদ্রের তলদেশের নীচে সূর্যের আলো আসা সম্ভব নয়। সেখানে অক্সিজেনের পরিমাণও কম। তবুও সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব আছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
মহাগরের নিচে নদীর রহস্য
মেক্সিকোয় সমুদ্রের নীচে প্রবাহিত একটি জলের তল আছে। ইউকাতান উপদ্বীপে তুলুলাম থেকে মাত্র ১৫ মিনিটের দূরে অবস্থিত এটি। এই নিমজ্জিত প্রাকৃতিক আশ্চর্য দেখলে আপনি কল্পনারাজ্যে হারিয়ে যাবেন। সমুদ্রের তল থেকে প্রায় ১৮০ ফুট নীচে।
এই মিঠা পানির নদীটি হাইড্রোজেন সালফেটের একটি স্তর দ্বারা উপরের লবণাক্ত পানি থেকে পৃথক করা হয়। এই হাইড্রোজেন সালফেট ‘ক্লাউড’ এর মাধ্যমে উত্থানের সময় সীমিত দৃশ্যমানতার কারণে কেবলমাত্র উন্নত স্কুবা ডাইভারকেই এই ডুব তৈরির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
সমুদ্রের পানি থেকে নদীকে আলাদা করে রেখেছে মেঘলা এক স্তর। যার নাম ‘হ্যালোকলাইন। মিঠা জল এবং লবণাক্ত জলের পার্থক্য এভাবেই ঘটে। জানলে আরও অবাক হবেন, সমুদ্র তলের এই নদীর চারপাশে আছে বিভিন্ন গাছেরও অস্তিত্ব। এই নির্দিষ্ট অবস্থানটিকে স্পেনীয় ভাষায় সেনোট অ্যাঞ্জেলিতা বলা হয়, যার অর্থ ‘ছোট দেবদূত’।
রহস্যময় মারিয়ানা ট্রেঞ্জ
প্রশান্ত মহাসাগরের মারিয়ানা ট্রেঞ্জ আরও এক রহস্যময় স্থান। পৃথিবীর সবচেয়ে গভীরতম স্থান এটি। গবেষকদের মতে, পুরো এভারেস্ট অনায়াসেই ঢুকে যাবে মারিয়ানা ট্রেঞ্জের গভীর খাদে। এটি চ্যালেঞ্জার ডিপ নামেও পরিচিত।
মূলত প্যাসিফিক প্লেট আর ফিলিপিন্স প্লেটের যেখানে সংঘর্ষ হয়েছে, সেখানেই মারিয়ানা ট্রেঞ্চ তৈরি হয়েছে। এখানে কিছু ব্যতিক্রম পাথর আছে, যেগুলো পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো পাথর। এখান থেকে কিছু পাথর গবেষণার জন্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।
পৃথিবীর সবচেয়ে গভীরতম এই স্থানে রিচার্ড গ্যারিয়ট এক ব্যাক্তি প্রথমবারের মতো নেমেছিলেন। ১২ ঘণ্টার সফর শেষে সাগরের ১১ হাজার কিলোমিটার নিচে গিয়ে পৌঁছান তিনি। গবেষণার জন্য তিনি সেখান থেকে সংগ্রহ করেন খনিজ, পানি আর সামুদ্রিক প্রাণী।
প্রশান্ত মহাসাগর পৃথিবীর বৃহত্তম মহাসাগর। প্রশান্ত মহাসাগরের আয়তন ১৬৯.২ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার। এটি পৃথিবী পৃষ্ঠের প্রায় ৩২ শতাংশ, সব জলভাগের ৪৬ শতাংশ এবং পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠের চেয়ে আয়তনে বেশি। বিশ্বের প্রায় ৭০ শতাংশ আগ্নেয়গিরি এই মহাসাগরে অবস্থিত।
গ্রেট বেরিয়ার রিফ রহস্য
গ্রেট বেরিয়ার রিফ বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোরাল রিফ। মহাশূন্য থেকে পৃথিবীর যে কয়েকটি বস্তু দৃশ্যমান তার মধ্যে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ অন্যতম। প্রবাল, পলিপস ইত্যাদি কোটি কোটি ক্ষুদ্র অর্গানিজমস দ্বারা এই রিফ কাঠামো গঠিত।
সেখানে অনেক প্রাণের অস্তিত্ব আছে, ১৯৮১ সালে এটাকে বিশ্ব হেরিটেজ সাইটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সিএনএন এই প্রবাল প্রাচীরকে পৃথিবীর প্রাকৃতিক সপ্তাচার্য্যের একটি বলে ঘোষণা করেছে। কুইন্সল্যান্ড ন্যাশনাল ট্রাস্ট এই রিফকে কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের প্রতীক হিসেবে ঘোষণা করে।
রিফটি পর্যটকদের জন্য, বিশেষত হুইটসুন্ডে দ্বীপপুঞ্জ এবং কেয়ার্নস অঞ্চলের পর্যটকদের জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য। পর্যটন এই অঞ্চলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কার্যক্রম, যা থেকে প্রতি বছর ৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি আয় হয়। গুগল গ্রেট ব্যারিয়ার রিফে ত্রিমাত্রিক ‘গুগল আন্ডারওয়াটার স্ট্রিট ভিউ’ চালু করেছে ২০১৪ সালে।
এসডব্লিউএসএস/১১৫০
আপনার মতামত জানানঃ