সন্ত্রাসবাদের অর্থায়নের অভিযোগে পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক ওয়াচডগ সংস্থা ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের (এফএটিএফ) ধূসর তালিকা থেকে মুক্তি পেতে সক্ষম হয়েছে পাকিস্তান। তালিকায় ঢোকার চার বছর পর মিলল এই মুক্তি। শুক্রবার প্যারিসে এফএটিএফের সভায় পাকিস্তানকে এই তালিকা থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
অন্যদিকে মিয়ানমারকে ‘কালো তালিকা’ তথা উচ্চঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ফ্রান্সের প্যারিসে এফএটিএফের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন শেষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে পাকিস্তানকে ধূসর তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার কথা জানিয়ে এফএটিএফের সভাপতি রাজা কুমার বলেন, দেশটি ২০১৮ সাল থেকে ধূসর তালিকায় ছিল।
তিনি বলেন, দেশটির দুটি যুগপৎ কর্মপরিকল্পনা ছিল। পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের ব্যাপক কর্মতৎপরতার পর তারা ওই কর্মপরিকল্পনার অধিকাংশই বাস্তবায়ন করতে পেরেছে।
এফএটিএফের সভাপতি বলেন, আগস্টের শেষ দিকে সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়েছিল সংস্থাটির টাস্কফোর্স। পরিদর্শক দলটি পাকিস্তানি নেতৃত্বের কাছ থেকে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি, টেকসই সংস্কার এবং ভবিষ্যতে আরও ভালো করার অঙ্গীকারের বিষয়টি যাচাই করে দেখেছেন।
সন্ত্রাসে অর্থায়ন মোকাবিলায় পাকিস্তানের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, এ জন্য পাকিস্তানকে বাড়তি নজরদারি (ধূসর) তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
এফএটিএফের ধূসর তালিকা থেকে অপসারণের ফলে কার্যত বিশাল একটি সংকট কাটিয়ে উঠেছে পাকিস্তান। কারণ, এখন থেকে বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এডিবি থেকে ঋণ পেতে আর কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না দেশটিকে।
আর পাকিস্তানের অর্থনীতি বর্তমানে যে ভঙ্গুর অবস্থায় পৌঁছেছে, তাতে ঋণ না পেলে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে দেশটি।
ফ্রান্সভিত্তিক সংস্থা এফএটিএফের সদস্যরাষ্ট্রের সংখ্যা ৩৯টি। শুক্রবার প্যারিসে বৈঠকের সময়ে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদের ধূসর তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার ব্যাপারে অবশ্য আপত্তি তুলেছিল সংস্থাটির সদস্যরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভারত। কিন্তু সেই আপত্তি ধোপে টেকেনি।
২০১৮ সালে পাকিস্তানকে ধূসর তালিকাভূক্ত করার পর দেশটিকে ৩৪টি পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল এফএটিএফের তরফ থেকে। সেসব পদক্ষেপের মধ্যে ২৭টি ছিল সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন বন্ধ সংক্রান্ত, আর বাকি ৭টি ছিল মুদ্রাপাচার সম্পর্কিত।
সবগুলো পদক্ষেপেই পাকিস্তানের ফলাফল ‘সন্তোষজনক’ বলে শুক্রবারের বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।
যেভাবে দেখছে ভারত
সন্ত্রাসবাদের জন্য অর্থ জোগানদাতাদের ওপর নজর রাখা বৈশ্বিক নজরদারি প্রতিষ্ঠান ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের (এফএটিএফ) ‘ধূসর’ তালিকা থেকে সরতে পারায় পাকিস্তানে আনন্দের বন্যা বইছে।
এই তালিকা থেকে পাকিস্তানের সরে যাওয়া বিশ্বের স্বার্থে, তবে উগ্রবাদ ও এতে অর্থায়নের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যেতে হবে।
পাকিস্তানের জন্য বিষয়টি আনন্দদায়ক হলেও এতে খুব একটা খুশি নয় ভারত। বরং এ নিয়ে সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দেশটি।
ভারত বলেছে, এই তালিকা থেকে পাকিস্তানের সরে যাওয়া বিশ্বের স্বার্থে, তবে উগ্রবাদ ও এতে অর্থায়নের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যেতে হবে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেছেন, আমরা আশা করব যে পাকিস্তান এশিয়া-প্যাসিফিক গ্রুপের সাথে মানি লন্ডারিং এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ও সন্ত্রাসবিরোধী অর্থায়ন বন্ধে কাজ চালিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, এফএটিএফের তদন্তের কারণে পাকিস্তানকে কিছু কুখ্যাত সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। এদের মধ্যে কিছু সন্ত্রাসী রয়েছে যারা ২৬/১১-তে মুম্বাইয়ে হামলা চালিয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের বিশ্বাসযোগ্য পদক্ষেপ বিশ্বের জন্য মঙ্গলজনক এবং পাকিস্তানকে তা চালিয়ে যেতে হবে। পাকিস্তানকে তার নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা থেকে সন্ত্রাসবাদ ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধ করতে হবেই।
কালো তালিকায় মিয়ানমার
এএনআই জানিয়েছে, মিয়ানমারকে কালো তালিকা তথা উচ্চঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রেখেছে অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থাটি। মিয়ানমারে সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ও লেনদেনে বাড়তি সতর্কতা মেনে চলতে সদস্যদেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এফএটিএফ।
ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআই’র বরাতে এনডিটিভি জানিয়েছে, এফএটিএফ’র উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ বিচারব্যবস্থার তালিকায় প্রবেশ করেছে মিয়ানমার। এই তালিকায় থাকা দেশগুলোতে মানি লন্ডারিং এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় দুর্বলতার বিষয়ে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
সাধারণত অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়নে উচ্চঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে কালো তালিকায় রাখে এফএটিএফ। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কৌশলগত সব ঘাটতি পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মিয়ানমার। তাদের কর্মপরিকল্পনার মেয়াদ শেষ হয় ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে। এরপর চলতি বছরের জুনে এফএটিএফ মিয়ানমারকে অক্টোবর মাসের মধ্যে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে জোরালোভাবে আহ্বান জানায়। অন্যথায় সদস্যদের মিয়ানমারের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক এবং আর্থিক লেনদেনে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানাবে বলে হুঁশিয়ারি দেয় সংস্থাটি।
কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত অগ্রগতি না হওয়ায় দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটিকে কালো তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এফএটিএফ।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৫৮
আপনার মতামত জানানঃ