কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের গল্প অনেকেরই জানা। তবে আপনি কি জানেন, কলম্বাস ভুলবশত আমেরিকা আবিষ্কার করেছিলেন? উদ্দেশ্যহীনভাবে ১৪৯২ সালে জাহাজ নিয়ে বের হন তিনি। বাতাসের দিক পরিবর্তন হয়ে ভুল করে তিনি পৌঁছে যান আমেরিকায়। যেখানে সে সময় সভ্য সমাজের উৎপত্তি হয়নি, সবাই ছিল আদিবাসী। ঠিক এমনভাবেই পৃথিবীতে ভুলবশত অনেক কিছুই উদ্ভাবন হয়ে আসছে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, বিজ্ঞানের ইতিহাসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আবিষ্কৃত হয়েছে যেগুলো আবিষ্কারের পিছনে বিজ্ঞানীর বেশি কষ্ট করতে হয়নি। যা হওয়ার তা হয়েছে নিতান্ত দুর্ঘটনা বা ভুলবশত। এমনই একটি আবিষ্কার হল ক্লোরোফর্ম।
ক্লোরোফর্ম আবিষ্কারের পূর্বে রোগীদের অস্ত্রোপচার করার জন্য চেতনা-নাশক হিসেবে কিছু ব্যাবহার করা হত না। অর্থাৎ রোগীকে অজ্ঞান না করেই অপারেশন করা হত। ফলে রোগীকে অমানুষিক যন্ত্রণা ভোগ করতে হত অস্ত্রোপচার টেবিলে।
এ অবস্থার নিরসন ঘটে ক্লোরোফর্ম আবিষ্কারের পরে। ১৮৪৭ সালে ক্লোরোফর্ম আবিষ্কারের পরে অস্ত্রপোচার সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চেতনা নাশক হিসেবে এর ব্যাবহার শুরু হয়। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে ক্লোরোফর্ম আবিষ্কারের ঘটনাটি দুর্ঘটনার চেয়ে কম কিছু নয়!
স্যার জেমস ইয়ং সিম্পসন চেতনা-নাশক নিয়ে দীর্ঘ গবেষণায় যুক্ত ছিলেন। ১৮৪৭ সালের কোন একদিন এডিনবার্গে নিজ বাড়িতে আমন্ত্রিত অতিথিদের সাথে আলাপচারিতার ফাঁকে তার মনে হল নিজের আবিষ্কার পরীক্ষা করে দেখলে কেমন হয়?
তিনি একটি শিশিতে করে ক্লোরোফর্ম অতিথিবৃন্দের সামনে আনলেন। তারপর আর কারো কিছু মনে নেই! হুঁশ ফিরল পরদিন সকালে, এদিকে অতিথিরা একেকজন বেহুঁশ হয়ে এদিক ওদিক পড়ে আছেন। শুরুতে তিনি ভয়ই পেয়ে গেলেন। পরে সবার জ্ঞান ফিরলে আশ্বস্ত হন।
যদিও পরবর্তীতে এমন বিপজ্জনক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপারে খুব সতর্ক ছিলেন তিনি, কারণ বর্ণহীন এই জৈন যৌগটি খোলা জায়গায় রেখে দিলে উড়ে যেতে থাকে। বাতাসে ক্লোরোফর্মের পরিমাণ খুব বেশি হয়ে গেলে তা মারাত্মক ক্ষতিকর।
যেহেতু এটি সরাসরি স্নায়ুর ওপর ক্রিয়া করে, তাই বেশি পরিমাণে শরীরে প্রবেশ করলে মাথাব্যথা থেকে শুরু করে কিডনি ও লিভারের স্থায়ী সমস্যা তৈরি হতে পারে।
সিম্পসন অবশেষে ১৯৪৭ সালে এই আবিষ্কারের কথা জানান সবাইকে, এবং মাত্র তিন বছরের মাথায় শুরু হয়ে যায় রোগীদের অপারেশনের বেলায় অজ্ঞান করার কাজে আন্তর্জাতিকভাবে ক্লোরোফর্মের ব্যবহার।
ক্লোরোফর্ম সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় রাসায়নিক ল্যাবরেটরি ও বাণিজ্যিকভাবে প্লাস্টিক তৈরিতে। এর পরই ব্যবহৃত হয় মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীর শরীরের কিছু অংশ অবশ করতে বা সাময়িকভাবে অজ্ঞান করতে। রোগীদের দেহের সূক্ষ্ম কাটাকাটি থেকে শুরু করে বড় ধরনের অপারেশনে ক্লোরোফর্ম ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৯০০
আপনার মতামত জানানঃ