কন্টিনেন্ট’ বা ‘মহাদেশ’ সম্পর্কে সবাই কম-বেশি অবগত। প্রত্যেকটি দেশই কোনো না কোনো মহাদেশের অন্তর্ভুক্ত। এখন এমন কোনো ভূখণ্ডের কথা যদি বলি যা একের অধিক মহাদেশ নিয়ে গঠিত তাহলে সেই ভূখণ্ডকে কী বলা হবে? মহাদেশ থেকেও বড় তথা এসব অতিরিক্ত বৃহৎ ভূখণ্ডকে বলা হয় ‘সুপারকন্টিনেন্ট’ বা ‘অতি-মহাদেশ’।
এর প্রচলিত সংজ্ঞা অনুসারে বিদ্যমান মহাদেশীয় ভূত্বকের শতকরা ৭৫ ভাগ ভূখণ্ড একত্রে থাকলে তা অতিমহাদেশের অন্তর্ভুক্ত হবে। অবশ্য সংজ্ঞাটি কতটা যুক্তিসংগত তা নিয়ে কিছুটা বিতর্ক রয়েছে। ভূবিজ্ঞানীদের মতে এসব সুপারকন্টিনেন্ট চিরস্থায়ী নয়।
ধারণা করা হচ্ছে, প্রশান্ত মহাসাগর নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়ে একসঙ্গে মিশে যাবে আমেরিকা এবং এশিয়া মহাদেশ। তৈরি হবে বিশ্বের পরবর্তী অতি-মহাদেশ হিসাবে ‘অ্যামেসিয়া’।
ক্রমশ ছোট হচ্ছে প্রশান্ত মহাসাগর। ফলে জন্ম নিতে চলেছে ‘অ্যামেসিয়া’ নামে একটি নতুন অতিমহাদেশ। এমনটাই দাবি করেছেন একদল অস্ট্রেলীয় বিজ্ঞানী। প্রতি বছর অন্তত ১ ইঞ্চি করে ছোট হয়ে যাচ্ছে প্রশান্ত মহাসাগরের আকার। বর্তমানে হ্রাস চোখে না পড়লেও, ওই বিজ্ঞানীদের মতে অদূর ভবিষ্যতে যে কোনও সময় জন্ম নেমে নতুন অতিমহাদেশ।
তাদের মতে আমেরিকা মহাদেশ এবং এশিয়া মহাদেশ ক্রমশ একে অপরের দিকে এগিয়ে আসছে। একসময় দুটি মহাদেশ মিশে গিয়ে তৈরি হবে নতুন অতি-মহাদেশ, ‘অ্যামেসিয়া’। তবে, বিজ্ঞানীদের গণনা অনুযায়ী তা হতে এখনও ২০ থেকে ৩০ কোটি বছর লাগবে।
উল্লেখ্য, প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার পথে প্রশান্ত মহাসাগরের স্রোতের আনাগোনা। ভাবা যায়, এই স্রোত একদিন সংকুচিত বা বন্ধ হয়ে যেতে পারে! আগামী ৩০ কোটি বছরের মধ্যে পরবর্তী অতিমহাদেশের আবির্ভাব ঘটলে পৃথিবীর ব্যাপক পরিবর্তনের মাঝে এটি হবে উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা। খবর সিএনএন।
সম্প্রতি সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করে পৃথিবীর টেকটোনিক প্লেটের বিবর্তন ও ভবিষ্যতের সুপারমহাদেশ গঠনের মডেল তৈরি করেছে অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন ইউনিভার্সিটি ও চীনের পিকিং ইউনিভার্সিটির গবেষকরা।
গবেষণা ফলাফলটি গত ২৮ সেপ্টেম্বর ন্যাশনাল সায়েন্স রিভিউ জার্নালে প্রকাশ হয়। সেখান থেকে জানা যায়, প্রশান্ত মহাসাগর সঙ্কুচিত ও বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ২০-৩০ কোটি বছরের মধ্যে নতুন এটি অতিমহাদেশ তৈরি হতে পারে। গবেষকরা এর নাম দিয়েছেন আমাশিয়া।
অতিমহাদেশ গঠনের এই প্রক্রিয়ায় ২০০ কোটি বছর ধরে চলছে। এ অনুসারে প্রতি ৬০ কোটি বছরে মহাদেশগুলোর সংঘর্ষে একটি অতিমহাদেশ গঠিত হয়। যা অতিমহাদেশীয় চক্র হিসেবে পরিচিত। এর মানে হলো, বর্তমান মহাদেশগুলো কোটি কোটি বছর পর আবার একত্রিত হতে চলেছে। গবেষণার প্রধান লেখক ড. চুয়ান হুয়াং এক বিবৃতিতে এ সব তথ্য জানান।
দলটি দেখায় গঠনের পর থেকে শত কোটি বছর ধরে পৃথিবী শীতল হচ্ছে। এর কারণে সময়ের সঙ্গে সমুদ্রের নিচে টেকটোনিক প্লেটের পুরুত্ব ও শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। এর সঙ্গে অতিমহাদেশীয় চক্রের সম্পর্ক রয়েছে।
এর আগে ৩২ কোটি বছর আগে পানজিয়া নামের সর্বশেষ অতিমহাদেশ গঠিত হয়। যা ১৭-১৮ কোটি বছর আগে ভেঙে গিয়েছিল। তখনো পৃথিবীতে ডাইনোসররা ছিল। ওই সময় আটলান্টিক ও ভারত মহাসাগরের আবির্ভাব ঘটে।
মানুষের জানা বিশ্বের প্রাচীনতম অতি-মহাদেশ হল নুনা। আজ থেকে প্রায় ১৮০ কোটি বছর আগে সেটি গঠিত হয়েছিল। কার্টিন ইউনিভার্সিটির আর্থ ডাইনামিকস রিসার্চ গ্রুপের গবেষকরা জানিয়েছেন, “গত ২০০ কোটি বছর ধরে, পৃথিবীর মহাদেশগুলি প্রতি ৬০ কোটি বছরে একটি অতি-মহাদেশ গঠন করে। অর্থাৎ বর্তমান মহাদেশগুলি ১০-২০ কোটি বছরের মধ্যে আবার একত্রিত হবে। তৈরি হবে নয়া অতি-মহাদেশ।
এর বিপরীতে প্রশান্ত মহাসাগর পৃথিবীর প্রাচীনতম মহাসাগর। এই বিশাল জলরাশিটি আসলে পান্থলাসা অতিমহাসাগরের অবশিষ্টাংশ যা ৭০ কোটি বছর আগে তৈরি হতে শুরু করে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৫৩০
আপনার মতামত জানানঃ