দিয়াশলাই শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Match (ম্যাচ), যা এসেছে প্রাচীন ফরাসি শব্দ ‘মেসে’ থেকে। দিয়াশলাই শব্দের উৎপত্তি সংস্কৃত দীপশলাকা, হিন্দি দিয়াশলাই থেকে। অভিধান মতে, ঘষে আগুন জ্বালানোর জন্য মাথায় বারুদ-দেওয়া সরু কাঠি ও তার বাক্স-কে বলে দিয়াশলাই। এই দিয়াশলাই বা ম্যাচের কাঠির আবিষ্কারের পেছনে আছে বেশ অদ্ভুত একটি ইতিহাস।
জন ওয়াকারকে (১৭৮১-১৮৫৯) বর্তমান ম্যাচের কাঠির উদ্ভাবক বলা হয়। কর্মজীবনের শুরুতে এই ইংরেজ ভদ্রলোক প্রথমে সার্জন অ্যাসিস্টেন্ট পদে কাজ করতেন।
কিন্তু খুব অল্প সময়ে তিনি বুঝে ফেলেন যে, মানুষের শরীর নিয়ে এসব কাজ তার পক্ষে সহ্য করা সম্ভব হবে না। তাই ওয়াকার তার জীবনের পথকে পাল্টানোর চিন্তা করলেন, নজর দিলেন রসায়নের দিকে।
রসায়ন বিষয়টির প্রতি তার বেশ ঝোঁক ছিল। তার উৎসাহ কাজ করছিল সহজে আগুন জ্বালানোর একটি কৌশল আবিষ্কারের দিকে। আর এর পেছনে সুনির্দিষ্ট কারণও ছিল।
কেননা তখন পর্যন্ত আগুন জ্বালানোর জন্য তেমন কিছু আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি, যা দিয়ে ঘর্ষণের মাধ্যমে আগুন জ্বালিয়ে সাথে সাথেই সেটিকে জ্বলতে থাকা অবস্থায় অন্য কোথাও স্থানান্তর করা যাবে।
সুতরাং জন ওয়াকার তার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেবার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। তিনি একদিন গবেষণাগারে অ্যান্টিমনির সালফাইড, পটাশের ক্লোরেট এবং আঠার মিশ্রণ নিয়ে কিছু গবেষণা করছিলেন।
এই মিশ্রণটিতে তিনি সালফারের প্রলেপ দেওয়া একটি কাঠের টুকরা ডুবিয়ে দেখছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে কাঠের টুকরাটির সাথে তাঁর ঘরের ফায়ারপ্লেসের একটু ঘর্ষণ হয় আর সাথে সাথেই জ্বলে উঠে আগুন।
তখনই জন ওয়াকার বুঝতে পারলেন যে, এতদিন পর অবশেষে তার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ পেতে যাচ্ছে। ঘটনাটি ঘটে ১৮২৬ সালে। তিনি তার নতুন উদ্ভাবিত আগুন জ্বালানোর কৌশলটিকে বাজারে সকলের জন্য ছেড়ে দেন।
ওয়াকার যে ম্যাচবাক্সগুলো বাজারে বিক্রি করতেন, তার প্রতিটিতে পঞ্চাশটি করে কাঠি থাকত, ১ শিলিং দাম ছিল প্রতিটি বক্সের। প্রতিটি কাঠিতেই সালফারের আস্তরণ দেওয়া হতো। আর একেবারে মাথার দিকে সেই মিশ্রণটির একটি প্রলেপ দেওয়া থাকতো। এই সালফারই মূলত আগুনকে কাঠের সংস্পর্শে আনতে সাহায্য করতো।
সেই সাথে প্রতি বক্সের সাথে একটি করে শিরীষ কাগজ দেওয়া হতো যার উপর কাঠিটি ঘষে আগুন জ্বালানো যায়।
ইংরেজ উদ্ভাবক ও আর্টিলারি রকেটের গবেষণায় অগ্রদূত স্যার উইলিয়াম কনগ্রেভ-এর সম্মানার্থে জন ওয়াকার তার এই ম্যাচের নাম দিয়েছিলেন ‘Congreves’।
তড়িঘড়ি করে তিনি তার এই যুগান্তকারী আবিষ্কার জনসমক্ষে আনতে গিয়ে এর পেটেন্ট করেননি। কয়েকদিনের মধ্যেই, জন ওয়াকার যাদের কাছে এই পদ্ধতিটি পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন, তাদেরই একজন স্যামুয়েল জোনস এতবড় একটি সুযোগ পেয়ে হাতছাড়া করেননি। তিনি নিজের নামে এর পেটেন্ট নিয়ে নেন।
তিনি অবশ্য এই মিশ্রণ ব্যবহার করে লুসিফার নামক দিয়াশলাই তৈরি করেন। এই দিয়াশলাই এর বিক্রি ছিল অবিশ্বাস্য রকমের বেশি। এমনকি দিয়াশলাইয়ের এই সহজপ্রাপ্যতা তখন ধুমপানের হার বাড়িয়ে দিয়েছিলে!
এসডব্লিউ/এসএস/১৬৫৫
আপনার মতামত জানানঃ