গত এক দশকে বিশ্বে এক হাজার ৭০০ এর বেশি পরিবেশবাদী কর্মী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। সেই হিসেবে প্রতি দিন প্রায় দুজন পরিবেশবাদী কর্মী হত্যার শিকার হয়েছেন।
সম্প্রতি এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে পরিবেশ ও মানবাধিকার বিষয়ক পর্যবেক্ষক সংস্থা গ্লোবাল উইটনেস।বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) এপির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালে বিশ্বে ২০০ পরিবেশবাদীকে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৪ জনকে মেক্সিকোতেই হত্যা করা হয়। বেসরকারি সংস্থা গ্লোবাল উইটনেসের প্রতিবেদনে দেশটিকে পরিবেশবাদীদের জন্য ভয়ঙ্কর জায়গা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
গ্লোবাল উইটনেস শো প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, গুপ্তঘাতক, সংগঠিত অপরাধী গোষ্ঠী এবং নিজের দেশের সরকারের হাতে ২০১২ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে কমপক্ষে এক হাজার ৭৩৩ জন ভূমি এবং পরিবেশকর্মী হত্যার শিকার হয়েছে। এই ঘটনাগুলো সবচেয়ে বেশি হয়েছে ব্রাজিল, কলম্বিয়া, ফিলিপাইন, মেক্সিকো ও হন্ডুরাসে। মহামারি থাকা সত্ত্বেও ২০২০ সালে ২২৭ জন পরিবেশবাদী হত্যার শিকার হয়েছেন, যা রেকর্ড।
গ্লোবাল উইটনেস আরও জানায়, হত্যাকাণ্ডের বেশির ভাগ ঘটনা ঘটেছে ল্যাটিন আমেরিকায়। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা কম্বোডিয়ার। এ অঞ্চলে আদিবাসীদের জমি অথবা বন ও কোকা ক্ষেত রক্ষা করতে গিয়ে ৬৫ জন খুন হয়েছেন। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে মেক্সিকো। যেখানে এক-তৃতীয়াংশ হত্যাকাণ্ড জড়িত বন উজাড়ের প্রতিবাদের সঙ্গে, এখানে নিহত হয়েছে ৩০ জন। কলম্বিয়া, ব্রাজিল ও নিকারাগুয়ায় ১০ জন করে হত্যার শিকার হয়েছেন।
২০২১ সালে বিশ্বে ২০০ পরিবেশবাদীকে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৪ জনকে মেক্সিকোতেই হত্যা করা হয়।
গত তিন বছর ধরেই মেক্সিকোতে পরিবেশবাদীদের হত্যার ঘটনা বাড়ছে। ২০২০ সালে দেশটিতে ৩০ জন পরিবেশকর্মী হত্যার শিকার হন।
গ্লোবাল উইটনেস প্রতিবেদনটিকে একটি ভিত্তিরেখা হিসেবে বিবেচনা করে জানিয়েছে যে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আমাদের তথ্য একটি অবমূল্যায়ন হতে পারে। কারণ অনেক হত্যার ঘটনা হিসাবের বাইরে রয়ে গেছে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে ও বিশেষ কিছু দেশে।
বেসরকারি সংস্থাটি ২০১২ সাল থেকে প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে ভূমি ও পরিবেশ রক্ষাকারীদের হত্যার বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। ওই বছর কম্বোডিয়ান পরিবেশবাদী চুট উটি হত্যার শিকার হওয়ার পর গ্লোবাল উইটনেসের প্রধান নির্বাহী মাইক ডেভিস এ বিষয়ে কাজ শুরু করেন।
প্রতিবেদনটিতে ডেভিস লিখেছেন, ‘উটি আমাদের বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি করেছিল। বৈশ্বিক চিত্র কী ছিল, এই ধরনের হামলার প্রভাব কী এবং তাদের প্রতিরোধে কী করা যেতে পারে?’
এই হত্যাকাণ্ডগুলি নিম্ন আয়ের দেশ এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। হত্যাকাণ্ডের শিকার ৩৯ শতাংশই এই অঞ্চল বা জনগোষ্ঠীর। খনি ও নিষ্কাশন শিল্প ও কৃষি ব্যবসা খাতে উন্নয়ন হত্যাকাণ্ডের একটি বড় কারণ।
এদিকে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখনই পদক্ষেপ না নিলে ২০৩০ থেকে ২০৫২ সালের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করবে। উষ্ণতা বৃদ্ধির বিপর্যয়পূর্ণ এ মাত্রা এড়াতে সমাজের সর্বক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবেশের পক্ষে দ্রুত, সুদূরপ্রসারী ও নজিরবিহীন পরিবর্তনের অপরিহার্যতা তুলে ধরেছেন বিজ্ঞানীরা।
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় পরিবেশ বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, কার্বন নিঃসরণের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ১২ বছরের মধ্যে পৃথিবীকে বাঁচানো সম্ভব হবে না। দাবানল, খরা, বন্যা ও ভয়াবহ তাপপ্রবাহের মতো মহাবিপর্যয় নেমে আসতে পারে। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তঃরাষ্ট্রীয় প্যানেল এক বিশেষ প্রতিবেদনেও এমন সতর্কবাণী দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, পরিবেশবাদীদের রক্ষায় সরকারগুলোকে পদক্ষেপ নিতে হবে। অস্থিতিশীল বৈশ্বিক উষ্ণতা মোকাবিলায় অপরিহার্য বন, নদী ও জীববৈচিত্র্য। এগুলো রক্ষায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন পরিবেশবাদীরা। তাদের হত্যা বন্ধ করতে হবে। বরং তাদের জন্য উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টিতে দেশের সরকারগুলোকে সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১২২৪
আপনার মতামত জানানঃ