সুনির্দিষ্ট বিধিমালা ও কমিটি থাকা সত্ত্বেও নজরদারির অভাবে ঢাকার ঐতিহ্যপূর্ণ স্থাপনাগুলো একে একে বেহাত হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)।
বিআইপির সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসানের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়। সেখানে বলা হয়, পরিকল্পনাহীন উন্নয়নের সমারোহে ঢাকার গৌরবময় ইতিহাস বিলীন হওয়ার জোগাড় হয়েছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স বলে, আইন অনুযায়ী বড় কাটরা সরকারের অধীনে থাকার কথা। তবে সরকারি সংস্থাগুলোর নজরদারির অভাবে স্থাপনাটি ব্যক্তি মালিকানাধীন বলে দাবি করা হয়। বড় কাটরার বিশাল অংশজুড়ে একটি মাদ্রাসা, মালের আড়ত, ঝালাই কারখানাসহ নানা রকমের দোকানও রয়েছে। ফলস্বরূপ, বিভিন্ন সময়ে দাবিকৃত মালিকরা ভবনটি ভেঙে ফেলেছে। তারা বহুতল ভবন নির্মাণে রাজউকের অনুমতি ও অন্যদিকে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হিসেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অনুমতি রয়েছে বলে দাবি করে চলেছে।
এই ভবন ভেঙে ফেলার জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে ২০০১ এবং ২০১৬ সালে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অথচ এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ অবগত পর্যন্ত ছিল না বলে জানাচ্ছে বিআইপি।
বিভিন্ন সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে সংগঠনটি জানায়, ঐতিহ্যবাহী ইমারত হিসেবে তালিকাভুক্ত স্থাপনা/ এলাকাসমূহ নিজেরাই সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। একইসঙ্গে এটা ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সংরক্ষণে তাদের দক্ষতা, স্বদিচ্ছা ও দায়িত্বশীলতার অভাবকে নির্দেশ করে। অন্যদিকে রয়েছে স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতার অভাব এবং প্রভাবশালীদের ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা/ এলাকা দখলের নৈরাজ্য।
আইন অনুযায়ী বড় কাটরা সরকারের অধীনে থাকার কথা। তবে সরকারি সংস্থাগুলোর নজরদারির অভাবে স্থাপনাটি ব্যক্তি মালিকানাধীন বলে দাবি করা হয়। বড় কাটরার বিশাল অংশজুড়ে একটি মাদ্রাসা, মালের আড়ত, ঝালাই কারখানাসহ নানা রকমের দোকানও রয়েছে।
বিআইপি জানায়, মুঘল আমলে ১৬৪৬ সালে নির্মিত বড় কাটরা ঢাকার একটি প্রাচীনতম ও ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন। স্থাপনার এই বিশেষ গুরুত্ব অনুধাবন করে বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর ১৯৮৯ সালের ২১ ডিসেম্বর সংরক্ষিত পুরাকীর্তি নিদর্শন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। অন্যদিকে রাজউক একাধারে ২০০৯, ২০১৭ ও ২০২০ সালে বড় কাটরাকে ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। এছাড়াও রাজউক কর্তৃক প্রণীত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (২০১০-২০১৫) এবং (২০২২-২০৩৫) ভবনটিকে ঐতিহ্যবাহী চিহ্নিত করা হয় ।
তারা উল্লেখ করেন, মহানগর ইমারত (নির্মাণ, উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও অপসারণ) বিধিমালা (২০০৮) এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি, ২০২০) অনুসারে ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা / এলাকার সীমানার মধ্যে ও সীমানার বাইরের দিকে ৯ মিটারের মাঝে রাজউকের অনুমতি ছাড়া যে কোনও ধরনের নির্মাণ, উন্নয়ন ও স্থাপনা অপসারণ/ ধ্বংস সাধন নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এছাড়াও স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন (২০০৯) এর তৃতীয় তফসিলের ২৬.৭ ধারা অনুযায়ী ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
সংগঠনটি বলছে, একইসঙ্গে প্রস্তুতত্ব অধিদফতর ও রাজউকের সংরক্ষিত তালিকায় অধিভুক্ত ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার আওতাভুক্ত থাকা সত্ত্বেও এবং প্রয়োজনীয় আইন ও বিধিমালা থাকলেও উল্লিখিত সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা, ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা/ এলাকা সংরক্ষণে অবহেলা, ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা / এলাকাসমূহের সীমানা সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে না পারার সমস্যা রয়েছে।
বিআইপি মনে করে, দ্রুততম সময়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতামত ও পরামর্শ অনুযায়ী সরকার কর্তৃক তালিকাভুক্ত ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা/ভবন/নিদর্শন/এলাকার সীমানা নির্ধারণ, অধিগ্রহণ ও সঠিক সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করে আগের স্থাপত্যশৈলী পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ করা জরুরি। স্থাপনাসমূহ সংরক্ষণে মনিটরিং সেল স্থাপন ও ডিজিটাল মনিটরিং ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যক্তিস্বত্তার মাঝেও ঐতিহ্য সংরক্ষণের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য এ বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ এবং আইন ও বিধামালার কঠোর প্রয়োগ করতে হবে। যেসব কর্মকর্তা/কর্মচারী ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ভাঙার অনুমোদনের সঙ্গে জড়িত কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৩০
আপনার মতামত জানানঃ