মিয়ানমারে সামরিক জান্তা সরকারের বিরোধিতা কিংবা প্রতিরোধগোষ্ঠীগুলোর প্রতি সমর্থন জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে কোনো পোস্ট শেয়ার করা— এমনকি এ ধরনের পোস্টে লাইক দিলেই ভোগ করতে হতে পারে ১০ বছরের কারাদণ্ড।
মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) জান্তা সরকার এমন হুমকি দিয়েছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে।
গত বছরের শুরুর দিকে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকেই মিয়ানমারে বিক্ষোভ-সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। গণতন্ত্রপন্থী ও জান্তাবিরোধী সশস্ত্র প্রতিরোধযোদ্ধাদের সঙ্গে সামরিক বাহিনীর সংঘর্ষের খবর শোনা যায় প্রায়ই।
মঙ্গলবার জান্তা সরকারের তথ্যমন্ত্রী ও মুখপাত্র জও মিন তিন বলেছেন, নিরপরাধ মানুষদের হত্যা করে মিয়ানমারকে অস্থিতিশীল করার জন্য তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা করছে ‘সন্ত্রাসীরা’। এদের সমর্থকদের কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে।
তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যের সরকার (এনইউজি) অথবা এর সশস্ত্র সহযোগীদের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা চালালে ৩ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। একই সঙ্গে গুনতে হতে পারে আর্থিক জরিমানাও।
টেলিভিশনে এক ব্রিফিংয়ে জান্তা মুখপাত্র বলেন, ‘আপনি যদি এই সশস্ত্র গোষ্ঠীকে অর্থসহায়তা করেন কিংবা সন্ত্রাসীদের ও তাদের কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করেন, তাহলে কঠোর শাস্তির মুখে পড়বেন। আমরা নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষার জন্যই এটি করছি।’
অভ্যুত্থানের পর থেকে জান্তাবিরোধীরা তাদের বার্তা আরও বড় পরিসরে ছড়িয়ে দিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করে আসছে। দেশটির অনেক নেটিজেন প্রায়ই বিক্ষোভ ও সেনাবাহিনীর নৃশংসতার ছবি পোস্ট করে থাকেন।
ইতিমধ্যে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানবিরোধীদের ওপর গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তুলেছে জাতিসংঘ। দেশটিতে গোপন বিচারের জন্য হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং কারাবন্দী আছেন অনেকে।
এদিকে, সন্ত্রাসী দমানো নামে মঙ্গলবারই একটি স্কুলে বিমান হামরা চালায় জান্তা বাহিনী। এ হামলায় শিশুসহ নিহত হয় কমপক্ষে ১৩ বেসামরিক নাগরিক, তাদের মধ্যে স্কুলের শিক্ষার্থীই ছিল ১১জন। নিহত শিশুদের লাশও নিজেদের হেফাজতে নেয় মিয়ানমার সেনারা। জান্তা বাহিনীর দাবি, এলডিপি এবং কাচিন বিদ্রোহীদের দমনে ওই বিমান হামলা চালানো হয়।
সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত ও ক্ষমতার পালাবদলের পর থেকে মিয়ানমারে অস্থিতিশীলতা জারি রয়েছে।এই ঘটনার পর দেশটিতে তীব্র গণ-আন্দোলন শুরু হয় এবং সামরিক ক্ষমতার জোরেই বার্মিজ সেনাবাহিনী তা দমনের চেষ্টা করে। এতে নিহত হচ্ছে শিশু নারীসহ অনেক বেসামরিক মানুষ।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে জাতীয় ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। বন্দি করা হয় অং সান সুচি ও তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) বিভিন্ন স্তরের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে। সেনা প্রধান মিন অং হ্লেইং এ অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেন।
কিন্তু অভ্যুত্থানের পরপরই ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামী জনগণ। রাজধানী নেইপিদো, বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুন, দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়সহ ছোট বড় বিভিন্ন শহরে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৫৩
আপনার মতামত জানানঃ