বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, জনগণের জানমাল ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান, অপরাধ প্রতিরোধ ও দমনে প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু আইন পরিপালন নিশ্চিত করা আর অপরাধ প্রতিরোধ বা দমনই নয়, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বলা হয়। এই বিভাগ যেকোনো দেশ ও জাতির একটি স্থায়ী সম্পদ। তারা আইন ও নীতি-নৈতিকতার ব্যাপারে উচ্চতর স্থানে থাকার কথা। অথচ সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে পুলিশের কিছু সদস্য বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।
এদিকে মাদক মামলায় একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে আসামি করায় তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানতে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ ৬ জনকে সশরীরে হাজির ৭ কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
অন্যরা হলেন- উপ-পরিদর্শক কামরুল ইসলাম, এএসআই মাহাবুব আলম, কনস্টেবল মো. কামরুজ্জামান, আনসার সদস্য ইসমাইল হোসেন ও তদন্ত কর্মকর্তা খালিদ হাসান তন্ময়।
শো-কজ নোটিশের বিরুদ্ধে তাদেরকে আলাদা করে লিখিত ব্যাখ্যা জমা দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. শান্ত ইসলাম মল্লিক মামলার নথি ও ভিডিও ফুটেজ খতিয়ে দেখে গত মঙ্গলবার এই আদেশ দেন।
মাদক মামলার আসামি নির্দোষ মো. খলিলের জামিন মঞ্জুর করেন ম্যাজিস্ট্রেট। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই খালিদ হাসান তন্ময় গত ১১ সেপ্টেম্বর খলিলকে মাদক মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন।
পূর্ব শত্রুতার কারণে এই মামলায় খলিলকে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে দাবি করে তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেন মামলার আইও।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করা হবে কি না, তা আগামী ১৩ অক্টোবর আদালতে উপস্থাপন করা হবে।
গত ৬ সেপ্টেম্বর খলিলকে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে এএসআই মাহবুব আলম। তার আগে পুলিশের ২ সোর্স মো. রুবেল ও সোহেল রানার সহায়তায় খলিলের পকেটে ইয়াবা বড়ি ঢুকিয়ে দেয় এএসআই মাহবুব আলম।
পরদিন খলিলের বিরুদ্ধে মামলা করে পল্লবী থানার এসআই কামরুল ইসলাম বলেন, তার কাছ থেকে ১০০টি বড়ি উদ্ধার করা হয়েছে।
সম্প্রতি দেশে কনস্টেবল থেকে শুরু করে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে। এসব অপরাধ ও অপকর্মের মধ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার, দায়িত্বে অবহেলা ও ঘুষ গ্রহণ ছাড়াও চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, এমনকি ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার মতো ঘৃণ্য অপরাধও আছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, এএসআই মাহবুব অভিযোগকারী এসআই কামরুলকে মিথ্যা তথ্য প্রদান করেন এবং জব্দ তালিকা তৈরির জন্য খলিলের কাছ থেকে ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনাটি তৈরি করেন। ফলে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
তদন্তে খলিলের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এসআই খালিদ তার সহকর্মী মাহবুব ও ২ তথ্যদাতার বিরুদ্ধে ৭ সেপ্টেম্বর ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মাদক মামলা দায়ের করেন।
এই ৩ জনকে ৭ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা হয় এবং বর্তমানে তারা কারাগারে আছেন।
সম্প্রতি দেশে কনস্টেবল থেকে শুরু করে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে। এসব অপরাধ ও অপকর্মের মধ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার, দায়িত্বে অবহেলা ও ঘুষ গ্রহণ ছাড়াও চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, এমনকি ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার মতো ঘৃণ্য অপরাধও আছে।
পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলেই তাদের কারো কারো ক্ষেত্রে বিভাগীয় মামলা হয়, কারো ক্ষেত্রে ফৌজদারি মামলা হয়। শাস্তির মাধ্যমে যদিও তাদের বোঝানো হয়, অপরাধ করলে পার পাওয়া যায় না। কিন্তু বাস্তবতা হলো- পুলিশে অপরাধ কমছে না, বাড়ছে প্রতিদিন।
অপরাধবিজ্ঞানীরা মনে করেন, ‘পুলিশে জবাবদিহিতার অভাবেই এ পরিস্থিতি। এটি কমাতে হলে দায়িত্বশীল অফিসারদেরও জবাবদিহিতা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ অন্যায় অনৈতিক কাজের কারণেই সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ও অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তারা বলেন, অপরাধী যেই হোক, অপতৎপরতা-অনৈতিক থেকে পুলিশ বিভাগকে মুক্ত করার জন্য শক্তিশালী জবাবদিহির ব্যবস্থা এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ছাড়াও যুগোপযোগী আইনেরও প্রয়োজন। প্রয়োজন আইনের সংস্কার। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীরা যদি অনৈতিক কাজ করে আর শাস্তি যদি ১০০ টাকা হয় অপরাধ দমন তো হবেই না, বরং উৎসাহিত হবে। আর অপরাধ দমনের দায়িত্বে নিয়োজিতদের মধ্যে যারা নিজেরাই অপরাধে লিপ্ত হয়, তাদের শাস্তি অধিকতর কঠোর হওয়া দরকার।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৫২
আপনার মতামত জানানঃ