সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনায় বেশ কিছু মামলা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে বিএনপির কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে। এরই মধ্যে ধরপাকড় শুরু হয়েছে। গ্রেপ্তার এড়াতে এলাকা ছেড়েছেন অনেক নেতাকর্মী।
তাছাড়া রাজধানীতে পুলিশ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বাড়ির ঠিকানা ও তালিকা তৈরি করছে বলে অভিযোগ দলের নেতাদের। উল্লেখ্য, জ্বালানি তেল, গ্যাসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ ও দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীসহ কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারা দেশে একাধিক কর্মসূচি পালন করে দলটি।
জানা যায়, বেশ কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা প্রায় পাঁচ হাজার আসামি করা হয়েছে। ত্রিমুখী সংঘর্ষে বিএনপি অনেক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। তবে মামলা আর গ্রেপ্তারের আতঙ্কে ছাপিয়ে গেছে নতুন এক ঘটনা। আর তা হলো পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার পর, দল থেকেই পদত্যাগ করছে মানিকগঞ্জের এক বিএনপি নেতা।
সূত্র মতে, মানিকগঞ্জে পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার পর তার স্ত্রী যুবলীগ নেত্রী ছাড়িয়ে আনেন তাকে। এরপর বিএনপি থেকেই পদত্যাগ করেন ওই নেতা। যদিও তার দাবি, এই সিদ্ধান্তের কারণ শারীরিক অসুস্থতা। তিনি এখন রাজনীতি করার অবস্থানে নেই বলে করেছেন মন্তব্য।
শরীরিক অসুস্থা এবং ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে জেলা বিএনপির ১০ নম্বর কার্যনির্বাহী সদস্যের পদ ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি আসাদুজ্জামান আসাদ নিশ্চিত করেছেন।
তার এই পদত্যাগ নিয়ে বিএনপি ঘরানায় নানা আলোচনা তৈরি হয়েছে। আসাদুজ্জামান বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত থাকলেও তার স্ত্রী রোমেজা খাঁন মাহিন ছাত্রজীবন থেকেই আওয়ামী লীগের আদর্শের অনুসারী। তিনি বর্তমানে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠন যুব মহিলা লীগের জেলা শাখার আহ্বায়ক। এই দম্পতির দুই মেয়ে ও এক ছেলেও ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিতে যুক্ত।
মানিকগঞ্জ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এসএ জিন্নাহ কবির বলেন, ‘বিএনপির ৪৪ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে পুলিশ-বিএনপির সংঘর্ষের ঘটনায় ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে পুলিশ যে মামলা করেছে, সেখানে আসাদুজ্জামান আসাদের নাম নাই। তারপরও রোববার রাতে তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। পরে তার স্ত্রী থানায় যায় এবং মুচলেকার মাধ্যমে তিনি ছাড়া পান।’
কী নিয়ে মুচলেকা-জানতে চাইলে এস এ জিন্নাহ কিছু বলতে পারেননি। বলেন, ‘মুচলেকা তার স্ত্রী দিলেন না কি আসাদ সাহেব নিজে দিলেন, সেটা নিয়ে আমরা সন্দেহে আছি।’
পদত্যাগপত্রটি হাতে পাননি জানিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, ‘যদি পাই তাহলে বিষয়টি জেলা কমিটির মিটিংয়ে তোলা হবে এবং আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
পুলিশের ধরে নেয়ার কারণেই পদত্যাগ কি না, জানতে চাইলে আসাদজ্জুমান আসাদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশের ধরা কোনো বিষয় না। এর আগেও পুলিশ আমাকে ধরছিল। আসলে দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক অসুস্থতা আর ব্যক্তিগত কারণে দল থেকে পদত্যাগ করা।’
তবে আসাদের ঘনিষ্ঠ একাধিক রাজনৈতিক কর্মী জানান, তিনি আর বিএনপির রাজনীতি করবেন না- এমন কথা বলে তাকে ছাড়িয়ে আনেন তার যুবলীগ নেত্রী স্ত্রী। এ কারণেই আসাদ বিএনপি থেকে সরে গেলেন।
আসাদকে ধরে নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউফ সরকার। তিনি বলেন, ‘গত ১ তারিখের ঘটনায় রোববার রাতে জেলা বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।’
বিএনপির রাজনীতি আর করবেন না, এমন কোনো ধরনের মুচলেকা নেয়ার বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।
গত বৃহস্পতিবার বিএনপির ৪৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন মানিকগঞ্জ পৌর এলাকার খালপাড় এলাকায় পুলিশের সঙ্গে দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সেদিন দুই পক্ষ ছাড়াও আহত হন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক। এ ঘটনায় মানিকগঞ্জ সদর থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুল লিটন রাতে বিএনপি ও অংগ সংগঠনের ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আড়াই হাজার নেতাকর্মীর নামে মামলা করেন।
এসডব্লিউ/এসএস/২০২০
আপনার মতামত জানানঃ