রাজনৈতিক জীবন থেকে অবসর নিচ্ছেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন ইরাকের প্রভাবশালী শিয়া নেতা মুক্তাদা আল-সদর। দেশটিতে সরকার গঠন নিয়ে চলমান সংকটে অত্যন্ত মুখ্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিলেন তিনি। অথচ এবার সেই নেতা রাজনীতিই ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিলেন।
মুক্তাদা আল-সদরের রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণায় রাজধানী বাগদাদে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। এ সহিংসতায় এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ জন নিহত হয়েছেন। সরকারি ভবনগুলোতে চড়াও হয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে।
রয়টার্স ও আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, রাত নামতেই বাগদাদের সুরক্ষিত গ্রিনজোন এলাকায় মেশিনগানের গুলির শব্দ শোনা যায়। এ এলাকায় সরকারি সদর দপ্তর ও দূতাবাসগুলো অবস্থিত। কয়েক বছরের মধ্যে এটি রাজধানীতে সবচেয়ে মারাত্মক সংঘর্ষের ঘটনা।
মুক্তাদা আল-সদর ও তার প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল উভয়েরই সরকার গঠনের চেষ্টা বিফলে যাওয়ায় গতবছর জুড়ে ইরাকে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করেছে।
সদরের শত শত সমর্থক কয়েক সপ্তাহ ধরে পার্লামেন্টের বাইরে অবস্থান নিয়ে আছে এবং দুবার পার্লামান্টে ঢুকে রাজনৈতিক অচলাবস্থার বিরুদ্ধে বিক্ষোভও করেছে।
এত কিছুর পরও ক্ষমতা নিজের হাতে না আসা ও নিজ দলেই অবস্থান নড়বড়ের কারণে সোমবার রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা দেন প্রভাবশালী শিয়া নেতা।
সোমবার ইরাকের রাজধানী বাগদাদের গ্রিন জোনের ভিডিওতে দেখা গেছে, বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের বাইরের বেষ্টনি এবং প্রবেশদ্বার ভেঙে ভেতরে ঢুকছে। অনেককে প্রাসাদের সুইমিং পুলে সাঁতার কাটতেও দেখা গেছে।
গেল অক্টোবরে দেশটির পার্লামেন্ট নির্বাচনে মুক্তাদা আল সদর জয়ী হয়েও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন কেন্দ্র করে নিজ দলের আইনপ্রণেতা ও শিয়া নেতাদের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ দেখা দিলে থেমে যায় দেশটির সরকার গঠন প্রক্রিয়া। পরবর্তী সময়ে সরকার গঠনে ব্যর্থ হয়ে গেল জুনে নিজ দলের আইনপ্রণেতাদের পদত্যাগের নির্দেশ দেন আল সদর।
এ অবস্থায় গেল মাসের শেষের দিকে সদরের সমর্থকরা ইরাকি পার্লামেন্ট দখল করে সরকারি ভবনগুলোর বাইরে বিক্ষোভ শুরু করলে, পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণা করে। এত কিছুর পরও ক্ষমতা নিজের হাতে না আসা ও নিজ দলেই অবস্থান নড়বড়ের কারণে সোমবার রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা দেন প্রভাবশালী শিয়া নেতা। এমনটাই মনে করেন বিশ্লেষকরা।
আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গভীর রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়া ইরাকের প্রভাবশালী শিয়া নেতা মুক্তাদা আল সদরের অবসরে যাওয়ার ঘোষণাকে রাজনৈতিক কৌশল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এর মধ্য দিয়ে তিনি নিজের শক্তির জানান দিচ্ছেন বলেও মনে করেন তারা।
মুক্তাদা আল সদরের রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা অবশ্য এবারই প্রথম নয়। এর আগে ২০১৩ এবং ২০১৪ সালেও তিনি একইরকম ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে এবারে তার ঘোষণা অস্থিরতা আরও অনেক বাড়িয়ে দিতে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন।
মুক্তাদা আল-সদর এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আমি রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আর এখন আমি রাজনীতি থেকে পুরোপুরি অবসরে যাওয়া এবং আমার সব সংগঠন বন্ধের ঘোষণা দিচ্ছি।” তবে আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে বলে জানান তিনি।
বিশ্লেষকদের মতে, রাজনীতি থেকে অবসরের জন্য নয়; বরং রাজনৈতিক অঙ্গনে নিজের দলে নড়বড়ে অবস্থার পরিবর্তনেই তার এ কৌশল। যদিও অনেকে মনে করছেন, ভবিষতে সরকার গঠন করতে পারবেন না জেনেই অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এমনকি দলের মধ্যে নিজের অবস্থান শক্ত করাসহ রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারে এমন পন্থা তার।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪২৫
আপনার মতামত জানানঃ