কথিত রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচারের অভিযোগে সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাসিনুর রহমান ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল নেত্র নিউজের ফেসবুক পেইজের এডমিনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। মঙ্গলবার(৩০ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে বরিশাল সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলাটি দায়ের করেন বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মনির উদ্দিন আহম্মেদ তারেক।
বিচারক গোলাম ফারুক মামলাটি আমলে নিয়ে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপারকে আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের বেঞ্চ সহকারী নুরুল ইসলাম কাকন।
বাদী পক্ষের আইনজীবী গোলাম সারওয়ার রাজীব বলেন, মামলার আসামি হাসিনুর রহমানের বাড়ি কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার বিনয়ঘর গ্রামে। তিনি বর্তমানে রাজধানী ঢাকার মিরপুরে বসবাস করছেন। তিনি একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা। মামলার অপর আসামি অনলাইন নিউজ পোর্টাল নেত্র নিউজের ফেসবুক পেইজের এডমিন। হাসিনুর রহমান একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা হওয়া সত্বেও রাষ্ট্র, সরকার ও আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে নানা ধরনের বক্তব্য দিয়ে নেত্র নিউজের মাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
মামলায় অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ১ নম্বর আসামি একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা। সাবেক সেনা কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তিনি বিভিন্ন ধরনের রাষ্ট্র ও সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থেকে “Netra News” নামক ওয়েব সাইট ও ফেসবুক পেইজে মিথ্যা মানহানিকর ভিডিও প্রচার করে আসছেন। ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওসহ পোস্ট রাষ্ট্র ও আইনশৃঙখলা বাহিনী এবং সরকারের বিরুদ্ধে মানহানিকর আক্রমণাক্তক অপপ্রচার চালানো হয়েছে।
এই মিথ্যা অপপ্রচার দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, মুক্তিযুদ্ধ ও জনসাধারণের অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে। ১ নম্বর আসামি উন্নয়নের গতিধারাকে বানচাল ও নস্যাৎ করার জন্য এবং রাষ্ট্রের শান্তি শৃঙখলা বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে সরকারের বিরুদ্ধে নানান প্রকার অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র করে আসছে। সরকার ও জনসাধারণের জান-মালের ক্ষতিসাধন, জনমতে ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে আইনশৃঙখলার অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। আসামি রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরকার বিরোধী লোকজনকে উৎসাহ ও উদ্দীপনা যোগাচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলা দায়েরের সময় উপস্থিত ছিলেন, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটার (পিপি) অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট তালুকদার মো, ইউনুস, বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি লস্কর নুরুল হক, সাধারণ সম্পাদক এ্যাভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দী লেখম মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর পর বাংলাদেশে এ আইন নিয়ে বিতর্ক এবং সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে। অনেকেরই অভিযোগ এ আইন অধিকাংশ ক্ষেত্রে হয়রানির এবং অপব্যহারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এসবের মধ্যেই প্রতিনিয়ত গ্রেপ্তার হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সরকারের সমালোচনা করলেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হচ্ছে। এই আইনে মামলা ও গ্রেপ্তারের যেসব ঘটনা ঘটছে, পরিষ্কারভাবে তা গণমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতার জন্য মারাত্মক হুমকি।
তারা বলেন, যে নিরাপত্তা আইন তৈরি করা হয়েছে, সে আইন নিয়ে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে— এ আইন কার জন্য করা হয়েছে? আইন তো তৈরি করা হয় সাধারণ জনগণের জন্য। এই আইন আসলে কার নিরাপত্তা দিচ্ছে? এ আইনে যারা বাদী হয়েছেন, তাদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন দলের কর্মী, এমপি, মন্ত্রী ও প্রশাসনের লোকজন। আর যারা আইনের শিকার হয়েছেন তারা সাংবাদিক, লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট। আমাদের সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের সাহস গড়ে তোলেন একজন লেখক, সাহিত্য, অ্যাক্টিভিস্ট ও সাংবাদিক। তারা যেন মুক্তভাবে কথা বলতে পারে সেজন্য তাদের সমর্থন করুন। আর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো একটি নিপীড়নমূলক আইন গণতন্ত্রের দেশে থাকতে পারে না।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪৫৬
আপনার মতামত জানানঃ