বিশ্বে এমন অনেক জায়গা রয়েছে, যেখানে ঐতিহ্য আমাদের দেশের থেকে একেবারেই আলাদা। দেশের বাইরেও এমন কিছু উপজাতি রয়েছে যারা আজও পুরনো রীতিনীতি মেনে চলছে। সেই অভ্যাসের জাঁতাকল ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারেনি আজও। ইন্দোনেশিয়ার দানি উপজাতি সেই নাছোড় অভ্যাসের জ্বলন্ত উদাহরণ।
ইন্দোনেশিয়ার এই প্রাচীন উপজাতির মধ্যে আজও বীভৎস এক রীতি প্রচলিত রয়েছে। তাদের পরিবারের কেউ মারা গেলে প্রিয়জনের স্মৃতির উদ্দেশে নিজের হাতে একটি আঙুল কেটে ফেলেন। আঙুলটি তারা উৎসর্গ করেন মৃত প্রিয়জনের উদ্দেশে।
ইন্দোনেশিয়ার সরকার অবশ্য অনেক আগেই এই পৈশাচিক রীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, তবে এই আদিম উপজাতির শিকড় থেকে উপড়ে ফেলতে পারেনি প্রাচীন প্রথা।
ইন্দোনেশিয়ার জয়াউইজায়া প্রদেশে বাস করেন দানি উপজাতির মানুষজন। তাদের এই উদ্ভট প্রথার নাম ইকিপালিন। এই প্রথা অনুযায়ী, পরিবারের কোনো পুরুষ সদস্য মারা গেলে তার প্রিয়জন হাতের একটি আঙুল কেটে ফেলেন। নারীদেরই এমনটা করতে হয়।
অবশ্য পুরো আঙুল নয়, আঙুলের উপরের অংশ কেটে ফেলেন পরিবারের কোনো একজন নারী। মৃত মানুষের সবচেয়ে কাছের যিনি, তাকেই এই ইকিপালিন পালন করতে হয়। দানি উপজাতির লোকেরা বিশ্বাস করেন, যথাযথভাবে ইকিপালিন পালন করলে মৃত ব্যক্তির আত্মা শান্তি পায়।
ইকিপালিনে যে নারীর আঙুল কাটা হবে, তার আঙুলটি আগে শক্ত করে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। ঐ আঙুলে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ করার জন্যেই এই ব্যবস্থা। বাঁধার কিছুক্ষণের মধ্যে আঙুলের উপর চালিয়ে দেওয়া হয় ধারালো কুঠার।
এখানেই শেষ নয়, আঙুলের মাথা কেটে ফেলার পর যখন নারীর হাত থেকে গলগল করে রক্ত বেরিয়ে আসে, তখন সেই রক্তপাত বন্ধ করার জন্যেও নিষ্ঠুর পন্থা নেয়া হয়। আঙুলের ডগা আগুনের সংস্পর্শে এনে পুড়িয়ে ফেলা হয়।
এই উদ্ভট প্রথার পিছনে দানি উপজাতির আরো একটি ভাবনা কাজ করে। তারা মনে করেন, যে মানুষটি মারা গেছেন, তার মৃত্যুর বেদনা এই তীব্র শারীরিক যন্ত্রণার মাধ্যমে ভুলে থাকা যাবে। শরীরের ক্ষত ম্লান করে দেবে মনবেদনা।
নিষ্ঠুর এই প্রথা বন্ধ করার জন্য ইন্দোনেশিয়ার সরকার এরই মধ্যে অনেক পদক্ষেপ করেছে। সাধারণ মানুষও বহুবার বহুভাবে পথে নেমেছে। প্রশ্ন উঠেছে, কেন শুধু নারীদের উপরেই এই ভয়াবহ প্রথা চাপিয়ে দেওয়া হয়? পুরুষরাও কেন এর ভাগীদার হয় না?
আন্দোলন, প্রতিবাদে ফল যে একেবারে শূন্য, তা নয়। আগের চেয়ে ইকিপালিনের দাপট অনেক কমেছে। তবে আজও তা নির্মূল হয়নি। উপজাতির একটা বড় অংশের মানুষ এখনো এই প্রথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেন।
এসডব্লিউ/এসএস/১৮২৫
আপনার মতামত জানানঃ