চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে দুই সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। সংবাদ সংগ্রহে গেলে আইনজীবীর হামলা ও লাঞ্ছনার শিকার হন যমুনা টেলিভিশনের রিপোর্টার আল আমিন সিকদার এবং ক্যামেরাপারসন আসাদুজ্জামান লিমন। এই ঘটনায় মামলা হয়েছে।
বুধবার (১৭ আগস্ট) দিনগত রাত ১টার দিকে কোতোয়ালি থানায় মামলাটি করেন হামলার শিকার সাংবাদিক আল আমিন সিকদার। মামলায় দুই আইনজীবীকে এজাহারনামীয় করে অজ্ঞাত ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারনামী আসামীরা হলেন, চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানার পূর্ব কলাউজান গ্রামের আবদুর রশিদের ছেলে সাহেদুল হক (৩৫) এবং আধুনগর আকতারিয়া পাড়া গ্রামের আহমদ মিয়ার ছেলে ইসহাক আহমেদ।
এর আগে বুধবার (১৭ আগস্ট) বিকেলে সাড়ে ৩টার দিকে চট্টগ্রাম জেলা জজ আদালতে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে এ হামলার শিকার হন তারা। আদালত চত্বরে উঠতেই প্রথমে এক দফা হামলা চালানো হয়। এসময় দুই সাংবাদিককে গলা টিপে মারার চেষ্টা চালান হামলাকারীরা। এসময় তারা দুই সাংবাদিকের মোবাইল, নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরে আইনজীবী সমিতির অফিসে নিয়ে গিয়ে ১ ০-১৫ জন একযোগে লাথি কিল ঘুষি মারতে থাকে। একপর্যায়ে দুই সাংবাদিক মাটিতে পড়ে যান। খবর পেয়ে দ্রুত অন্য সাংবাদিকরা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
যমুনা টিভি চট্টগ্রাম অফিসের প্রধান জামশেদ চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে জানান, বুধবার চট্টগ্রাম জেলা জজ আদালতে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে এ হামলার শিকার হন তারা। আদালত চত্বরে উঠতেই প্রথমে এক দফা হামলা চালানো হয়। পরে আইনজীবী সমিতির অফিসে নিয়ে গিয়ে ১০-১৫ জন একযোগে লাথি কিল ঘুষি মারতে থাকে। একপর্যায়ে দুই সাংবাদিক মাটিতে পড়ে যান। খবর পেয়ে দ্রুত অন্য সাংবাদিকরা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
মামলার বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির বলেন, আদালত পাড়া এলাকায় যমুনা টেলিভিশনের রিপোর্টার ও ক্যামেরাপার্সনের উপর হামলার ঘটনায় আল আমিন সিকদার এজাহার দিয়েছেন। আমরা সেটি মামলা হিসেবে নিয়েছি। ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এসময় তারা দুই সাংবাদিকের মোবাইল, নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরে আইনজীবী সমিতির অফিসে নিয়ে গিয়ে ১ ০-১৫ জন একযোগে লাথি কিল ঘুষি মারতে থাকে। একপর্যায়ে দুই সাংবাদিক মাটিতে পড়ে যান।
এদিকে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে আদালত ভবন প্রাঙ্গণে যমুনা টেলিভিশনের সাংবাদিক আল আমিন সিকদার ও আনিসুজ্জামান লিমনের ওপর ন্যক্কারজনক হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে)।
বুধবার সন্ধ্যায় সিইউজে সভাপতি মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলামের সঞ্চালনায় আয়োজিত জরুরি সভায় হামলাকারী আইনজীবীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে হামলাকারী আইনজীবীদের সনদ বাতিলের দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে আইনমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলেও সিইউজে’র সভায় জানানো হয়।
হামলাকারীদের বিচারের দাবিতে বুধবার সন্ধ্যায় তাৎক্ষণিক এক প্রতিবাদ সভা করেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন। প্রতিবাদ সভায় হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়।
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, যমুনা টেলিভিশনের দুই সাংবাদিক রিপোর্টার আল আমিন সিকদার এবং ক্যামেরাপারসন আসাদুজ্জামান লিমনের ওপর আদালত ভবনে হামলার ঘটনায় বুধবার রাতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাংবাদিকের ওপর হামলায় অংশ নেওয়া আইনজীবীদের সনদ বাতিল ও শাস্তির দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম জিয়া উদ্দিন দাবি করেন, ‘সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় আমরা লজ্জিত। এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে সমিতির নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর সঙ্গে কারা কারা জড়িত আছে তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
এর আগে গত ১৩ আগস্ট নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে ছাত্র ইউনিয়ন-যুব ইউনিয়নের একটি প্রতিবাদ বিক্ষোভ সমাবেশের সংবাদ ও ছবি সংগ্রহ করতে গিয়ে ছাত্রলীগের উশৃঙ্খল নেতাকর্মীদের হাতে ব্যাপক মারধরের শিকার হন ভোরের কাগজ চট্টগ্রাম অফিসের স্টাফ রিপোর্টার প্রীতম দাশ। মাথায়-বুকে আঘাত নিয়ে প্রীতম এখনও চিকিৎসাধীন।
সংবাদপত্রকে বলা হয় একটা দেশের দর্পণ। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই সংবাদপত্র চেক এন্ড ব্যালেন্সের কাজ করে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই আমাদের সংবিধানে ব্যাপারে স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু এই মহাজোট সরকার আসার পর বিভিন্ন সময় এরা সংবাদকর্মীদের উপর চড়াও হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিগত কয়েক দশকে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন, হয়রানি ও আক্রমণের বেড়ে যাওয়ায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এ পেশার অনেকেই। আইনের দীর্ঘসূত্রিতা, জটিল বিচারিক প্রক্রিয়া সেইসঙ্গে রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠান পক্ষ থেকে কোন ধরণের সহযোগিতা না থাকার কারণে সাংবাদিক নির্যাতন ও সহিংসতা থামানো যাচ্ছেনা। সাংবাদিকদের স্বার্থ রক্ষায় সক্রিয় কোন প্ল্যাটফর্ম না থাকায় এই পেশা দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে বলেও মন্তব্য করেন তারা।
তারা বলেন, সাংবাদিকরা নির্যাতনের শিকার হলেও সেগুলো আদালতে নিতে চান না। কেননা মামলা করতে গেলে প্রতিষ্ঠান থেকে যে সাপোর্ট লাগে বা অর্থনৈতিকভাবে যে সাপোর্ট লাগে, সেটা তাদের সবার থাকেনা। এ অবস্থায় বিচার নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে যায়। বাংলাদেশের সংবিধানে মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলা হলেও রাষ্ট্রীয় সামাজিকভাবে সেই স্বাধীনতা নিশ্চিত করা যায়নি বলে জানান তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৪০
আপনার মতামত জানানঃ