দেশে সাইবার অপরাধের শিকার হওয়া ভুক্তভোগীদের ৫০ দশমিক ২৭ শতাংশই সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে। ছবি বিকৃত করে অপপ্রচার, পর্নোগ্রাফি কনটেন্ট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার এবং অনলাইনে-ফোনে মেসেজ পাঠিয়ে হুমকি দিয়ে মানসিক হয়রানির ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। একইসাথে লোকলজ্জার ভয়সহ বিভিন্ন কারণে অপরাধের বিষয়ে ভুক্তভোগীরা কোথাও অভিযোগ করেন না। সিসিএ ফাউন্ডেশনের এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
করোনা পরিস্থিতি পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচারের প্রবণতা বাড়তে শুরু করেছে। ভুক্তভোগীদের বেশিরভাগেরই বয়স ১৮-৪০ বছরের মধ্যে, যার হার ৮০.৯০ শতাংশ।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের (সিসিএ ফাউন্ডেশন) ‘বাংলাদেশ সাইবার অপরাধ প্রবণতা-২০২২’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
শনিবার (১৩ আগস্ট) বেলা ১১টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে (ক্র্যাব) আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন গবেষণা দলের প্রধান ইস্টওয়েস্ট উনিভার্সিটির আইন বিভাগের সিনিয়র লেকচারার মনিরা নাজমী জাহান।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা কাজী মুস্তাফিজের সভাপতিত্বে আলোচকদের মধ্যে ছিলেন ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির প্রেসিডেন্ট মো ইমদাদুল হক, প্রযুক্তিবিদদের আন্তর্জাতিক সংগঠন আইসাকা ঢাকা চ্যাপ্টারের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন ও ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সুলতানা ইশরাত জাহান।
হয়রানির শিকারের পর ভুক্তভোগীদের মাত্র ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে গেছে জানিয়ে গবেষণা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, আইনের আশ্রয় নেওয়া ভুক্তভোগীদের মাত্র ৭ দশমিক ০৪ শতাংশ আশানুরূপ ফল পেয়েছেন।
আইনের আশ্রয় নেওয়া ভুক্তভোগীদের মাত্র ৭ দশমিক ০৪ শতাংশ আশানুরূপ ফল পেয়েছেন।
লোকলজ্জার ভয়সহ বিভিন্ন কারণে অপরাধের বিষয়ে ভুক্তভোগীরা কোথাও অভিযোগ করেন না। সার্বিক পরিস্থিতিতে সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ব্যাপকভাবে সচেতনতামূলক কার্যক্রমসহ আটটি সুপারিশ তুলে ধরা হয় গবেষণা প্রতিবেদনে।
জরিপে ২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ০২ মার্চ পর্যন্ত ব্যক্তি পর্যায়ে ভুক্তভোগী ১৯৯ জনকে ১৮টি প্রশ্ন করা হয়। সেই মতামতের ভিত্তিতে এ বছরের গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
অধিকাংশ হ্যাকারের বয়স ১৭ থেকে ১৮ বছর বয়সের হলেও এদের কারণে নারী ও শিশুসহ সব বয়স এবং পেশার লোকেরাই বিপদে পড়ছে। সবচেয়ে উদ্বেগের ব্যাপার হলো, সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়ে অনেকেই বেছে নিচ্ছে আত্মহননের পথ
দেশে যারা সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন তাদের শতকরা ৮০ ভাগই নারী। সবচেয়ে ভীতিকর ব্যাপার হলো, এদের বয়সের পরিধি ১৪ থেকে ২২ বছর। এমনকি শিশুরাও এই ঝুঁকির বাইরে নয়। বৃহৎ পরিসরে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির দরুণ অনেক জীবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এই সাইবার বুলিংয়ের কারণে। প্রযুক্তির উত্তরোত্তর উন্নয়নের ফলে পারস্পরিক যোগাযোগ প্রতিনিয়ত সহজলভ্য হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু সংখ্যালঘু দুষ্ট চক্রের বিকৃত মানসিকতার কারণে সেই প্রযুক্তি ব্যবহারের চরম মূল্য দিতে হচ্ছে সবাইকে।
সাইবার বুলিংয়ের শিকার হলে যা যা করণীয় ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন, ম্যাসেজ অথবা অনলাইন সামাজিক মাধ্যমগুলোতে অনাকাঙ্ক্ষিত কমেন্ট, ম্যাসেজ আপনার বিরক্তির কারণ হতে পারে। এমনকি হয়ত আপনার ব্যাপারে রটে যাওয়া ভুল ঘটনাকে কেন্দ্র করে বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকেও কথা শুনতে হতে পারে। ব্যাপারটাকে গভীরভাবে না দেখে এড়িয়ে যান। কেননা আপনি পাত্তা দিলেই উত্যক্তকারীর উদ্দেশ্য সফল হচ্ছে।
বাবা-মা, বড় ভাই-বোন, প্রিয় শিক্ষক অথবা এমন কারো সাথে ব্যাপারটি শেয়ার করুন যে আপনার দুর্বলতার সুযোগ নেবে না বলে আপনি দৃঢ়ভাবে বিঃশ্বাস করেন। আবেগপ্রবণ না হয়ে নিজের অবস্থানটা স্পষ্ট করে তুলে ধরুন। এতে সামাজিকভাবে আপনি একটা পৃষ্ঠপোষকতা পাবেন।
তারা বলেন, প্রায় দেখা যায়, সাইবার বুলিংয়ের শিকার ব্যক্তি জনসম্মুখে নিজেকে প্রকাশ করতে লজ্জাবোধ করেন। তা না করে বরং প্রতিটি সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সাবলীলভাবে উত্তর দিন। এখানে যেহেতু আপনি কোন দোষ করেননি সেহেতু নিজেকে লুকিয়ে রাখার কোন অর্থ নেই। বরং আপনার ইতিবাচক সাড়া অপরাধ ও অপরাধীর বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে ইন্ধন যোগাবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪৩৪
আপনার মতামত জানানঃ