জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সারা দেশে দুই দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। সোমবার রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে যুবদল আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচির ঘোষণা করেন। তিনি জানান, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আগামী বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে ও শুক্রবার সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।
এখন প্রশ্ন উঠছে, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিকে কি নিজের সুবিধায় কাজে লাগাতে পারবে কিনা। যদিও অনেক বিশেষজ্ঞই এ বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। আর অন্যতম কারণ আন্দোলন শুরুর আগে বিএনপিতে আতঙ্ক শুরু হয়েছে। আন্দোলনের পরিণতি কী হবে, আন্দোলনের মাঝ পথে বিএনপি ভাঙবে কিনা এবং আন্দোলনের সময় নেতাকর্মীদের হয়রানির শিকার হবে কিনা ইত্যাদি নিয়ে বিএনপিতে আতঙ্ক চলছে। ফলে বিভিন্ন কঠোর কর্মসূচির নিয়ে বিএনপির মধ্যে আলোচনা হলেও শেষ পর্যন্ত বিএনপির আরও অপেক্ষক নীতি গ্রহণ করতে চাইছে।
বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতার সাথে কথা বলে দেখা গেছে যে, আন্দোলন শুরুর আগে বিএনপি নানা রকম আতঙ্কে ভুগছে। বিএনপির মধ্যে ৫ ধরনের আতংক কাজ করছে বলে বিএনপি নেতাকর্মীদের সূত্রে জানা যাচ্ছে।
বিএনপি মনে করছে যে, এখনই চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য উপযুক্ত সময় নয়। নির্বাচনের এখনও দেড় বছরেরও বেশি সময় বাকি রয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, লোডশেডিং কিংবা জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সরকার একটু চাপে আছে বটে কিন্তু সরকার যদি এই সংকটগুলো সমাধান করে ফেলে, তাহলে আন্দোলন বিপথে পরিচালিত হতে পারে বা আন্দোলন মাঠে মারা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বিএনপি আবার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। তাই সবকিছু দেখে শুনে বুঝে তারপর আন্দোলনের দিকে যেতে চাইছে বিএনপি।
বিএনপি মনে করছে যে, বিএনপির ভেতরে সরকারের প্রচুর এজেন্ট রয়েছে, যারা আন্দোলনের গতি পেলেই উল্টা পথে হাঁটতে পারে এবং বিএনপি ভাঙ্গার ক্ষেত্রে সক্রিয় হতে পারে। এরকম একটি পরিস্থিতি যদি তৈরি হয় তাহলে বিএনপির জন্য তা হবে আত্মঘাতী এবং বিপদজনক। এ কারণে বিএনপির আন্দোলন এর আগে নানা রকম চিন্তাভাবনা করছে।
বিএনপি মনে করে যে, একক আন্দোলন নয়, এই আন্দোলনের সঙ্গে শরিফদেরকে নিতে হবে। শরিফরা যদি আপনারা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়, তাহলে একটা বেগবান আন্দোলন তৈরি করা যাবে। কিন্তু শরিফদের নিয়ে বিএনপির মধ্যে ব্যাপক অবিশ্বাস কাজ করে। বিএনপির অনেক নেতাই মনে করে যে, শরিফদের মধ্যে অনেকেই সরকারের এজেন্ট রয়েছে। যখনই আন্দোলন তীব্র হবে, তখন তারা বিএনপিকে বিভ্রান্ত করবে। গত বছর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের তিক্ততা থেকেই বিএনপির মধ্যে এরকম চিন্তা ভাবনা কাজ করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এখন পর্যন্ত বিএনপিকে আন্দোলনের ব্যাপারে সবুজ সংকেত দেয়নি বা সমর্থনও জানায় নি। বরং বিএনপির নেতারা মনে করছেন এখনও পশ্চিমা দেশগুলো এবং সবচেয়ে বেশি ভারত, সরকারের বিকল্প নেই বলে মনে করছে। তারা মনে করছে যে, আওয়ামী লীগের নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের আস্থা রয়েছে এবং সেই আস্থা থেকে সরে আসতে সময় লাগবে। পশ্চিমা দেশগুলো সরকারের অনেক কাজেই অসন্তুষ্ট, অনেক বিষয়ে তাদের মতামত রয়েছে। কিন্তু তার মানে এই না যে, তারা সরকারকে হটিয়ে অন্য কোনো সরকার বসাতে পারে। এই কারণেই বিএনপি আন্দোলনের ব্যাপারে একটু দ্বিধান্বিত।
বিএনপি সাংগঠনিক ভাবে অনেক দুর্বল। দলের অনেক নেতা-কর্মী দল ছেড়ে চলে গেছেন, নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন। সারাদেশে দলের সংগঠন নিয়ে কিছু কিছু কর্মী বাহিনী বিভিন্ন কর্মসূচি আছে কিন্তু লাগাতার দীর্ঘমেয়াদী আন্দোলনের জন্য দলটি কতটুকু প্রস্তুতি এ নিয়ে দলের মধ্যেই সংশয় রয়েছে।
আর এসব কারণেই আন্দোলন নিয়ে বিএনপির মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিএনপি নেতারা মনে করছেন যে, এখনই আন্দোলন করলে সেই আন্দোলন দেড় বছর পর্যন্ত ধরে রাখা বিএনপির জন্য সহজ নাও হতে পারে।
এসডব্লিউ/এসএস২
আপনার মতামত জানানঃ