শীত মৌসুমের শুরুতেই বেড়েছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রকোপ। মহামারির জন্য দায়ি এ ভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় তাই আবারও লকডাউনে ফিরেছে বিশ্ব। নেদারল্যান্ডস-জার্মানিতে বুধবার থেকে নতুন লকডাউন কার্যকর হয়েছে।
প্রথমবারের মতো এমন ‘জরুরি অবস্থা’ জারি করতে যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়াও। এছাড়া বড়দিন উপলক্ষে ইতালিসহ বিভিন্ন দেশ বিধিনিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশকেও লকডাউনে ফিরতে হবে কিনা তা নিয়ে জনমনে দুশ্চিন্তা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লকডাউন প্রয়োজন হবে না, এমন ধারণা না ছড়িয়ে সরকারের বরং উচিৎ প্রস্তুতি নিয়ে রাখা এবং নাগরিকদেরও সতর্ক থাকতে বলা।
এদিকে ফ্রান্সে সংক্রমণ ঠেকাতে রাত্রীকালীন কারফিউ জারি করা হয়েছে। বড়দিন সামনে রেখে নতুন বিধিনিষেধ আরোপের কথা ভাবছে ইউরোপের আরেক দেশ ইতালিও। বিশ্বে গেল ২৪ ঘণ্টায় আরও প্রায় ৬ লাখ মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এতে মোট কোভিড রোগীর সংখ্যা সাত কোটি ৪০ লাখে পৌঁছেছে। একই সময়ে মারা গেছেন সাড়ে ১২ হাজার মানুষ। তাতে মোট মৃত্যু সাড়ে ১৬ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
বিশ্বে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে ৭ কোটি ৩৫ লাখ পেরিয়েছে; মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ১৬ লাখ ৩৬ হাজার। বিশ্বজুড়ে সংক্রমণ বৃদ্ধির ধারায় লকডাউনে ফেরা দেশের তালিকায় বাংলাদেশও ঢুকতে পারে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুতে বাংলাদেশে ধারণা করা হয়েছিল এটি এ দেশে আসবে না। কিন্তু পরে ঠিকই লকডাউন ঘোষণা করতে হয়েছে। এ দফায়ও ধারণা করা হচ্ছে বাংলাদেশে লকডাউন প্রয়োজন হবে না।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লকডাউনের শঙ্কা একেবারে উঁড়িয়ে দেয়া যায় না। হঠাৎ মৃত্যু হার বেড়ে গেলে লকডাউন ভিন্ন আর কোনো পথ থাকবে না। নাগরিকদের তাই উচিত লকডাউনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা। চিকিৎসকরা বলছেন, সংক্রমণ এড়াতে মাস্ক ব্যবহার ও নাক-মুখে হাত না দেয়ার অভ্যাস ধরে রাখতে হবে। আবার লকডাউন আসতে পারে, সেজন্য শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক দিক থেকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
করোনাভাইরাসে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যায় প্রতিদিনই নতুন নতুন রেকর্ড গড়ছে জার্মানিতে। বড়দিন উপলক্ষে তা আরও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। প্রাণহানি ও সংক্রমণের লাগাম টানতে তাই আগেভাগেই কঠোর লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জার্মান সরকার। বুধবার থেকে দেশটিতে দ্বিতীয়বারের মতো এই বিধিনিষেধ কার্যকর হয়েছে। এর আওতায় স্কুল এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান ছাড়া বাকি সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, দোকানপাট বন্ধ থাকবে। নতুন এই লকডাউন চলবে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত। দেশটিতে এ পর্যন্ত ১৩ লাখ ৮২ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ২৩ হাজার ৭শ’ বেশি।
দক্ষিণ কোরিয়ায় গেল ২৪ ঘণ্টায় ৭ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ২শ’র বেশি। এ নিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্ত পৌনে ৯ লাখ। মারা গেছেন ২৩ হাজারের বেশি। করোনার এই ঢেউকে ‘জরুরি অবস্থা’ বলে উল্লেখ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। সংক্রমণ ও মৃত্যুহার বাড়তে থাকায় প্রথমবারের মতো লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার। বুধবার দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জনগণকে এমন কঠোর স্বাস্থ্যবিধির হুশিয়ারি দিয়েছেন।
ফ্রান্সে সংক্রমণ ঠেকাতে জারি করা লকডাউন শিথিল করে রাত্রীকালীন কারফিউ জারি করা হয়েছে। কারফিউ অনুযায়ী রাত ৮টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত লোকজন বাড়ি থেকে বের হতে পারবেন না। বড়দিন উৎসবে এই কারফিউ কার্যকর থাকবে না, তবে নববর্ষের উৎসবে কার্যকর থাকবে। এছাড়া ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত বার ও রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকার নির্দেশ জারি থাকবে।
বাংলাদেশে করোনার প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত ৮ মার্চ, তা সাড়ে ৪ লাখ পেরিয়ে যায় ২৪ নভেম্বর। এর মধ্যে গত ২ জুলাই ৪ হাজার ১৯ জন শনাক্ত হয়, যা এক দিনের সর্বোচ্চ শনাক্ত। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ১২ ডিসেম্বর তা সাড়ে সাত হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ৩০ জুন এক দিনেই ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়, যা এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে ২৬তম স্থানে আছে বাংলাদেশ, আর মৃতের সংখ্যায় রয়েছে ৩৩তম অবস্থানে।
এসডাব্লিউ/ডিজে/আরা/১২৩০
আপনার মতামত জানানঃ