বাংলাদেশে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমছে। গত কয়েক বছরে শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, ছিনতাই, ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়, মিথ্যা মামলায় সাধারণ মানুষকে ফাঁসিয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এবার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। চাঁদাবাজির মামলায় তারা গ্রেপ্তার হয়েছেন।
এক ছাত্রের করা চাঁদাবাজির মামলায় গত ২৩ জুন তাদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার হওয়া দুই পুলিশ কনস্টেবল হলেন ভরত কুমার রায় ও কামরুল হোসেন।
উত্তরা এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিয়াউল হক প্রথম আলোকে বলেন, কনস্টেবল ভরত কুমার ও কামরুলের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তদন্ত করে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। এরপর তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়েছে। আর ভুক্তভোগী ব্যক্তিকে আইনি সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
মা জানা গেছে, জামালপুরের মাদারগঞ্জ কলেজের ছাত্র কাউসার আহমেদ ২২ জুন রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন। সেদিন বিকেলে তার চাচাতো ভাইয়ের সৌদি আরব থেকে ঢাকার বিমানবন্দরে নামার কথা ছিল। কাউসার বিমানবন্দর বহুতল কার পার্কিংয়ের তৃতীয় তলায় প্রাইভেট কারের ভেতর বসে ছিলেন। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে এপিবিএনের কনস্টেবল ভরত কুমার ও কামরুল সেখানে আসেন। তারা গাড়ির ভেতর বসে থাকা কাউসার ও চালক উজ্জ্বলকে গাড়ি থেকে নামতে বলেন। এরপর তারা গাড়ি এবং কাউসার ও উজ্জ্বলের দেহ তল্লাশি করেন।
আমার কাছে অবৈধ কিছু নেই। আমি একজন ছাত্র মানুষ। আমি চাচাতো ভাইকে রিসিভ করার জন্য এখানে এসেছি। আমার জীবনটা শেষ করবেন না।
কাউসার বলেন, ‘আমাদের দেহ তল্লাশি করার পর কোনো কিছু পুলিশের দুই সদস্য পাননি। তবে গাড়ির নিচে পড়ে থাকা সিগারেটের কাগজ দেখিয়ে ভরত কুমার বলেন, “চল, তোকে থানায় নিয়ে যাব।” তখন আমি বলি, আমার কাছে অবৈধ কিছু নেই। আমি একজন ছাত্র মানুষ। আমি চাচাতো ভাইকে রিসিভ করার জন্য এখানে এসেছি। আমার জীবনটা শেষ করবেন না।’
কাউসার আরও বলেন, ভরত কুমার রায় তখন এক লাখ টাকা চাঁদা চান। এই টাকা না দিলে মাদক মামলার আসামি করার হুমকি দেন।
মামলার এজাহারে কাউসার অভিযোগ করেন, তিন হাজার টাকা তিনি ভরত কুমারকে দিতে রাজি হন। তবে এই টাকা নিতে রাজি হননি তিনি। পরে তার চাচাতো ভাইয়ের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা জোগাড় করে ভরত কুমারকে দেন। তখন ভরত কুমার টাকার পাশাপাশি কাউসারের দামি মুঠোফোনটি কেড়ে নিয়ে চলে যান। পরে তিনি বিমানবন্দর এপিবিএনের কর্মরত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
এপিবিএনের এসআই ওসমান গণি জানান, রাত ১১টার দিকে অভিযান চালিয়ে কনস্টেবল ভরত কুমার ও কামরুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভরত কুমারের কাছ থেকে চাঁদাবাজির চার হাজার টাকা ও ভুক্তভোগীর মুঠোফোন জব্দ করা হয়। পাশাপাশি কামরুলের কাছ থেকেও চাঁদাবাজির সাড়ে তিন হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুহা. আসলাম উদ্দিন বলেন, কনস্টেবল ভরত কুমার ও কামরুলের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির ঘটনা তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, পুলিশের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে এটা বলবো না৷ বলা উচিত এই প্রবণতা আগেও ছিল, এখনো আছে৷ আগে সেভাবে গণমাধ্যমে আসত না, এখন আসছে৷ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও আগে সেভাবে খেয়াল রাখত না, এখন রাখছে৷ ফলে বিষয়টি সামনে চলে এসেছে৷
তারা মনে করেন, পুলিশের মধ্যে কোন পরিবর্তন হয়নি৷ তাদের কিছু বিভাগ বেড়েছে সত্যি, কিন্তু সেই ব্রিটিশ নিয়মেই তারা চলে৷ আর এই সংস্কারটা হচ্ছে না এর কারণ পুলিশকে অনেক বেশি রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করা হয়৷ পুলিশের মধ্যে এমন কোন ক্যারিশমেটিক নেতা আসেনি যে তারা নিজের উদ্যোগেই সংস্কার করবে৷ আর আমাদের অর্থনীতি যেভাবে বেড়েছে তাতে পুলিশের মধ্যে এই দিকে ধাবিত হওয়ার প্রবণতা রয়েছে৷ অনেকেই অল্প দিনে ধনী হতে চান ফলে তারা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন৷
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুলিশের বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ার হার আশংকাজনক। প্রায় প্রতিদিনই পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে বিভিন্ন অপকর্মের। এবিষয়ে পুলিশের কর্তৃপক্ষসহ দেশের সরকাকেও নজর বাড়াতে হবে। কেননা, আইন রক্ষাকারী কর্তৃক একেরপর এক আইন বিরোধী কর্মকাণ্ডে দেশের আইনের প্রতি মানুষের অনাস্থা জন্মাবে। ফলে দেশে দেখা দিবে বিশৃঙ্খলা।
সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনের খড়্গ চালানোর আগে পুলিশের ওপর চালানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। তারা বলেন, আগে পুলিশকে অপরাধমুক্তের চরিত্র অর্জন করতে হবে। নইলে সন্ত্রাসীদের নিকট পুলিশের যে ভাবমূর্তি সৃষ্টি হচ্ছে, এতে পুলিশ আর সন্তাসীদের মধ্যকার তফাৎ ঘুচে যায়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩১৭
আপনার মতামত জানানঃ