যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর শহরতলিতে স্বাধীনতা দিবসের প্যারেডে চলল গুলি। সেই ঘটনায় ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত অন্তত ৩০ জন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আমেরিকার স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে সোমবার সকাল ১০ টায় (স্থানীয় সময় অনুযায়ী) শিকাগোর হাইল্যান্ড পার্ক এলাকা থেকে একটি প্যারেড শুরু হয়। শত শত মানুষ তাতে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
মিনিট দশেকের মধ্যে শোনা যায় গুলির শব্দ। আতঙ্কে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় অংশগ্রহণকারীদের মরিয়া হয়ে দৌড়াতে দেখা গিয়েছে। গুলি চালানোর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে পুলিশ।
সংবাদসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে এক প্রত্যক্ষদর্শী অ্যামরানি গার্সিয়া দাবি করেছেন যে প্রাথমিকভাবে গুলি চালানোর শব্দ শুনতে পান। কিছুক্ষণ পর তা থেমে যায়।
আবার গুলির আওয়াজ কানে আসে বলে দাবি করেছেন গার্সিয়া। তিনি নিজের মেয়েকে নিয়ে প্যারেডে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘মানুষ চিৎকার করছিলেন এবং দৌড়াচ্ছিলেন। এটা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ছিল। আমি প্রচণ্ড আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম।’
অপর একটি সংবাদমাধ্যমে স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেছেন, সম্ভবত কোনো দোকানের ছাদে ছিল বন্দুকবাজ। সেখানে প্যারেডে গুলি চালিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, সারি মেনে ব্যান্ড যাচ্ছিল। আচমকাই সেই সারি ভেঙে আতঙ্কে দৌড়াদৌড়ি করতে থাকেন অংশগ্রহণকারীরা।
হামলার পর থেকে ১৮ থেকে ২০ বছর বয়সি একজন সন্দেহভাজন অস্ত্রধারী শেতাঙ্গকে খুঁজছে পুলিশ।
হাইল্যান্ড পার্ক শহর কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে সন্দেহভাজন হামলাকারী কুচকাওয়াজের অনুষ্ঠানে হামলা চালান। আশপাশের কোনো ভবনে ছাদ থেকে ওই হামলা চালানো হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গোলাগুলির সময় হামলাকারী থেকে ১০০ মিটারের কম দূরত্বে ছিলেন আনন্দ নামের এক ব্যক্তি। তিনি বিবিসিকে বলেন, হামলাকারী যে বন্দুক ব্যবহার করেছিলেন, সেটি দিয়ে খুব অল্প সময়ে অনেক গুলি করা হয়েছিল। তারপরই ঘটনাস্থল নিস্তব্ধ হয়ে যায়।
হাইল্যান্ড পার্ক শহরে বন্দুক সহিংসতার ঘটনা একেবারেই বিরল বলে জানিয়েছেন আনন্দ। বলেন, ‘আমি এখানে নিজেকে খুবই নিরাপদ মনে করতাম। আজ যা ঘটেছে তা একেবারেই অস্বাভাবিক। নিরাপত্তার জন্য আমরা আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছি। লোকজন কান্নাকাটি করছে। বিষয়টি মোটেও ভালো না।’
হামলার ঘটনার পর হাইল্যান্ড পার্ক শহরের মেয়র ন্যান্সি রোটেরিং বলেন, ‘এই দিনটিতে আমরা স্বাধীনতা উদযাপনের জন্য একত্র হই। তবে আজ এই মর্মান্তিক প্রাণহানির জন্য আমাদের শোক পালন করতে হচ্ছে।’
এদিকে হাইল্যান্ড পার্কের বাসিন্দাদের নিরাপদে থাকতে বলেছে শহর কর্তৃপক্ষ। আশপাশের এলাকাগুলোও লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছে। সমুদ্র সৈকতগুলো থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে লোকজনকে। বাকি কুচকাওয়াজ ও আতশবাজির অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে বন্দুক হামলা। প্রায়ই দেশটির কোনো না কোনো অঙ্গরাজ্যে নৃশংস বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটছে। যা থেকে রেহাই পাচ্ছে না শিশুরাও। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৬১টি বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটে। যা আগের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের তুলনায় ৫২ শতাংশ বেশি। এফবিআইয়ের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) জানায়, গত বছর ৩০টি অঙ্গরাজ্যে হামলার ঘটনা ঘটে। যাতে প্রাণ হারান ১০৩ জন ও আহত হন ১৪০ জন।
জানা গেছে, ২০২০ সালে ১৯ অঙ্গরাজ্যে ৪০টি বন্দুক হামলা হয়। এতে নিহত হয় ৩৮ জন ও আহত হয় ১২৬ জন। যদিও এসময় করোনার মহামারির কারণে লকডাউনের মতো কঠোর করোনা বিধিনিষেধ জারি ছিল। ২০১৭ সালে এ ধরনের ৩১টি ঘটনা ঘটে। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ৩০টি করে হামলা রেকর্ড করা হয়।
২০১৭ সালের ৩১টি ঘটনায় রেকর্ড ১৪৩ জন প্রাণ হারান ও আহত হয় ৫৯১ জন। সে সময় নেভেদার লাস ভেগাসে হামলায় বহু হতাহত হয়। হোটেল রুম থেকে একজন বন্দুকধারীর হামলায় ওই ঘটনায় মারা যান ৬০ জন ও আহত হন ৪১১ জন।
এদিকে, সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে গুলি করে হত্যা ৩৫ শতাংশ ও আত্মহত্যা ১.৫ শতাংশ বেড়েছে।
ওই বছরে গুলি করে হত্যায় নিহতের সংখ্যা ছিল ১৯ হাজার ৩৫০। আর আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল ২৪ হাজার ২৪৫। সিডিসি গুলি করে হত্যা ও আত্মহত্যা উভয়কেই ‘যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী এবং উল্লেখযোগ্য জনস্বাস্থ্য উদ্বেগ বলে মনে করছে।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, দীর্ঘস্থায়ী পদ্ধতিগত বৈষম্য এবং কাঠামোগত বর্ণবাদ সহিংসতা বৃদ্ধির উল্লেখযোগ্য কারণ হতে পারে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৪৫০
আপনার মতামত জানানঃ