রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় মাদ্রাসার ২ ছাত্রকে যৌন হয়রানির অভিযোগে এক শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গতকাল রোববার রাতে উপজেলার মীরবাগ এলাকা থেকে অভিযুক্ত শিক্ষক আমির হামজাকে (৪০) গ্রেপ্তার করা হয়।
আমির হামজা উপজেলার সোনাতন গ্রামের মৃত ইসমাইল মণ্ডলের ছেলে এবং ওই গ্রামের উম্মে হানি মডেল মাদ্রাসার আবাসিক শিক্ষক।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক আমির হামজা দীর্ঘদিন ধরে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক যৌন হয়রানি করে আসছিলেন।
ঘটনার দিন গত ২১ জুন রাত ২টার দিকে ওই মাদ্রাসার আবাসিক ২ ছাত্রকে যৌন হয়রানি করেন তিনি। পরে ভোরের দিকে ২ ছাত্র মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি তাদের অভিভাবকদের জানায়।
এরমধ্যে এক ছাত্রের বড় ভাই আমির হামজাকে আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এ বিষয়ে রংপুর জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল-সি) আশরাফুল আলম পলাশ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘অভিযুক্ত শিক্ষককে রোববার রাত সোয়া ৮টার দিকে মীরবাগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে আদালতে পাঠানো হবে বলেও জানান তিনি।
দেশের মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষার্থীদের ওপর যৌন নির্যাতনের খবরে শিউরে উঠছে সারা দেশ। যদিও মাদ্রাসাগুলোতে ক্রমবর্ধমান এই ধর্ষণ নিয়ে মাথাব্যথা নেই সরকারের। দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোও সরব নয়। নেই বার্ষিক কোন প্রতিবেদন। তাই এই সব নির্যাতনের প্রকৃত চিত্র থেকে যাচ্ছে অজানা।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের পর শিক্ষার্থীরা লজ্জা, ভয়, নানান কিছুর কারণে তা প্রকাশ করে না। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে সবথেকে কম কথা বলা হয়। এর কারণ হয়তো সেক্স, অপ্রাপ্তবয়স্ক ভুক্তভোগী এবং ধর্মের মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে মানুষের অন্ধবিশ্বাস।
মাদ্রাসা শিক্ষক কর্তৃক একের পর এক শিশু ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা মাদ্রাসা বিষয়ে দেশবাসীর নিকট এক নেতিবাচক মনোভাব তৈরী হয়েছে।
আজকের শিশুরাই আগামী দিনের দেশ গড়ার কারিগর। আজ যারা শিশু, কাল তারাই বিশ্বের নেতৃত্ব দেবে। আজ যারা বিখ্যাত ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, একদিন তারাও শিশু ছিলেন। তাই শিশুদের নিয়ে তাদের রয়েছে নানা ভাবনা। কিন্তু সারাদেশে বিভিন্ন মাদ্রাসায় বহু ছেলেশিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। আর এর জন্য দায়ী হচ্ছেন কখনো খোদ মাদ্রাসা শিক্ষক তথা মাদ্রাসা সংশ্লিষ্টরা।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, আলিয়া মাদ্রাসা ছাড়া অন্য মাদ্রাসাগুলোতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ বা তদারকি সেভাবে নেই। সেজন্য যৌন নির্যাতন বা শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের সুযোগ থাকে। এছাড়া সেখানে পরিবেশ এমন যে, শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ অনেক সময় প্রকাশও হয় না। কওমি, এবতেদায়ী বা নূরানী-বিভিন্ন ধরনের মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য বেসরকারি উদ্যোগে কর্তৃপক্ষ যারা রয়েছে, তাদের তদারকি বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনেকে মনে করেন এরা আদব কায়দা শিক্ষা দেন। নৈতিকতা শিক্ষা দেন। সে কারণে ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে হোক বা নিরাপত্তার কথা ভেবে অনেকে ছেলেমেয়েদের মাদ্রাসায় পড়াতে দেন। কিন্তু বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, যে নিরাপত্তার কথা ভেবে মাদ্রাসায় ছেলেমেয়েদের পড়াতে দেয়া হয় সেখানে আদৌ নিরাপদ নয়। দেখা যায় ছেলেরাও নিরাপদ নয় এসব তথাকথিত হুজুরদের কাছে। এটিও সমাজের বৈকল্যতা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭১৩
আপনার মতামত জানানঃ