দেশে শিক্ষক লাঞ্ছনার ধরন পূর্বপরিকল্পিত ও পদ্ধতিগত নিপীড়নেরও ইঙ্গিত দেয় বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিন।
সাভারে শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা এবং নড়াইলে এক কলেজ অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা দিয়ে হেনস্তার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিন।
গতকাল বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিন থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মুক্তচিন্তার প্রসারে কাজ করা সংস্থাটি মনে করছে, সম্প্রতি বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে চলা শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনা ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতা ও ঘৃণা-বিদ্বেষেরই বহিঃপ্রকাশ।
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, ভিন্নমত দমন, বহুত্ববাদ ও সহনশীলতা চর্চার অভাব দেশে একটি অসহিষ্ণু ও বিদ্বেষপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করছে। বিচারহীনতা ও ভয়ের সংস্কৃতির কারণে এ পরিস্থিতি এখন ভয়ংকর ও অসহনীয় হয়ে উঠছে। এ কারণে অসহিষ্ণুতা ও বিদ্বেষ প্রশমনে বিচারহীনতা ও ভয়ের সংস্কৃতির অবসান জরুরি।
আর্টিকেল নাইনটিন দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেন, ‘সাম্প্রতিককালে নিগৃহীত শিক্ষকদের সবাই ধর্মীয় পরিচয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বী। তাদের লাঞ্ছনার ধরন পূর্বপরিকল্পিত ও পদ্ধতিগত নিপীড়নেরও ইঙ্গিত দেয়। সুতরাং একে আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়ার কোনো উপায় নেই।
ফারুখ ফয়সল বলেন, নিপীড়নের এসব ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের প্রাথমিক নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তা দেশের সব শিক্ষক এবং বিভিন্ন সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মানুষের মনে নিরাপত্তাহীনতাবোধ তৈরি করছে। চলমান বিচারহীনতা ও ভয়ের সংস্কৃতি এই বোধকে আরও তীব্রতর করেছে, যা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণের পথে বড় প্রতিবন্ধক। এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের মূলমন্ত্রের সম্পূর্ণ বিরোধী।
সাম্প্রতিককালে নিগৃহীত শিক্ষকদের সবাই ধর্মীয় পরিচয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বী। তাদের লাঞ্ছনার ধরন পূর্বপরিকল্পিত ও পদ্ধতিগত নিপীড়নেরও ইঙ্গিত দেয়। সুতরাং একে আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়ার কোনো উপায় নেই।
ফারুখ ফয়সল আরও বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান প্রত্যেক নাগরিকের সমান মর্যাদা ও বিচার পাওয়ার অধিকার দিয়েছে। পাশাপাশি সংবিধান এই অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে দিয়েছে। তাই পদ্ধতিগত নির্যাতন ও নিপীড়নের প্রতিটি ঘটনায় দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা সরকারকে গ্রহণ করতে হবে। এ জন্য বিচারহীনতা ও ভয়ের সংস্কৃতিরও অবসান করতে হবে।
বিবৃতিতে শিক্ষক হত্যা ও লাঞ্ছনার সাম্প্রতিক দুটি ঘটনাসহ এ ধরনের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত বিচার নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়।
এদিকে সাভারে শিক্ষক হত্যা, নড়াইলে শিক্ষক নির্যাতনসহ সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শিক্ষকদের অপমান-অপদস্থ করার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ১৪টি জাতীয় ভিত্তিক সাংস্কৃতিক ফেডারেশন। এক যৌথ বিবৃতিতে ১৪ টি সংগঠন থেকে এসব ঘটনার নিন্দা জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, এখন পর্যন্ত শিক্ষক নির্যাতনের এ ধরনের একটি ঘটনারও নিরপেক্ষ তদন্ত করে অপরাধীদের শান্তি প্রদান করা হয়নি।
বিবৃতিতে এ সকল ঘটনার নেপথ্য নায়ক এবং শক্তিকে চিহ্নিত করে তাদের মুখোশ উন্মোচন করার দাবি জানানো হয়। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনো অপশক্তি যাতে দেশে বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি নষ্ট করতে না পারে সে বিষয়ে সজাগ থাকতে সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এ ছাড়া সামাজিক মূল্যবোধ ও নীতি-নৈতিকতার অবক্ষয় রোধে সাংস্কৃতিক জাগরণ গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮০৭
আপনার মতামত জানানঃ