ফিলিপাইনের সংবাদমাধ্যম র্যাপলারের ওয়েবসাইট বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই সংবাদমাধ্যমটির সহপ্রতিষ্ঠাতা দেশটির নোবেলজয়ী সাংবাদিক মারিয়া রেসা। আজ বুধবার র্যাপলার কর্তৃপক্ষ এই আদেশের কথা জানিয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক গণমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
মারিয়া রেসার প্রতিষ্ঠিত ‘র্যাপলার হল’ প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তের সমালোচনা করা গুটিকয়েক মিডিয়া আউটলেটের একটি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত এমন সময় নিল, যখন দুতার্তে প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার এ মাসেই অর্পণ করতে যাচ্ছেন মে মাসের নির্বাচনে বিজয়ী ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রের কাছে। রাজনীতির মাঠে দুতার্তে ও ফার্দিনান্দ মিত্র হিসেবেই পরিচিত।
ফিলিপাইনের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তের কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত মারিয়া রেসা। তিনি দুতার্তের মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানের কঠোর সমালোচক।
ফিলিপাইন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আজ বুধবার এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে, গণমাধ্যমে বিদেশি মালিকানার ওপর সাংবিধানিক এবং বিধিবদ্ধ বিধিনিষেধ লঙ্ঘনের জন্য র্যাপলারের লাইসেন্স প্রত্যাহার করা করেছে।
তবে র্যাপলার কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করবে। তারা তাদের সাইট বন্ধ করবে না।
এক বিবৃতিতে সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, ‘এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। এ প্রক্রিয়ায় শুরু থেকেই অনেক অনিয়ম থাকায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
প্রথম ২০১৮ সালে র্যাপলারের বিরুদ্ধে বন্ধের আদেশটি দিয়েছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বলা হয়েছিল, কোম্পানিটি নিজেকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা একটি বিদেশি সংস্থার কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ফিলিপাইনের সংবাদমাধ্যমে বিদেশি মালিকানাসংক্রান্ত যে বিধিনিষেধ আছে, তার লঙ্ঘন হয়েছে।
তখন থেকেই এ আদেশের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে র্যাপলার। মঙ্গলবার সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, কোম্পানিটির লাইসেন্স প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তটি বহাল থাকছে। কারণ, কমিশন ও আদালতের পর্যালোচনায় দেখা গেছে, র্যাপলারের তহবিল সংগ্রহের প্রক্রিয়াটি অসাংবিধানিক।
এক বিবৃতিতে র্যাপলার বলেছে, সর্বশেষ আদেশটি ‘নিশ্চিত বন্ধাদেশ’। তবে এর মধ্য দিয়ে অবিলম্বে সংবাদ প্রকাশ বন্ধ করতে হবে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে মারিয়া রেসা বলেছেন, সাইটটি বন্ধ করা হবে না।
ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে ঘোষিত মাদকবিরোধী যুদ্ধ নিয়ে তুমুল সমালোচনা করেছিল র্যাপলার। এ অভিযানে বিদ্বেষ, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দুর্নীতির বিষয় নিয়ে সমালোচনা করা হয়েছে।
গত বছর এক রুশ সাংবাদিকের পাশাপাশি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান রেসা। নিজ দেশে ক্ষমতার অপব্যবহার, সহিংসতার ব্যবহার ও ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদের বিষয়গুলো প্রকাশ্যে নিয়ে আসায় প্রশংসিত হন তিনি।
মারিয়া রেসা বুধবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমরা স্বাভাবিকভাবে আমাদের কাজ এবং ব্যবসা চালিয়ে যাব। আমরা আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করব এবং আমাদের অধিকারের জন্য দাঁড়ানো অব্যাহত রাখব।’
নোবেলজয়ী এই সাংবাদিক বলেছেন, এই রায় ‘অত্যন্ত অনিয়মিত’ কার্যক্রমের পরে এসেছে। সাইটটি আর আইনের শাসনের ওপর নির্ভর করতে পারে না।
উল্লেখ্য, মারিয়া রেসা নোবেলজয়ী প্রথম ফিলিপিনো নাগরিক। তিনি প্রায় দুই দশক অনুসন্ধানী প্রতিবেদক হিসেবে মার্কিন সম্প্রচার মাধ্যম সিএনএনে কাজ করেছেন। তিনি ছিলেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক প্রতিবেদক।
২০২০ সালে ফিলিপাইনের বিতর্কিত অ্যান্টি-সাইবার ক্রাইম আইনে অভিযুক্ত হন রেসা। এই আইন দিয়ে ফিলিপাইন সরকার মূলত মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে দমাতে চেয়েছিল। ওই মামলায় ২০১৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার হন তিনি। একজন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মিথ্যা খবর প্রকাশের অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২০১৮ সালে মিথ্যা খবরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য টাইমস পারসন অব দ্য ইয়ারে নাম ওঠে রেসার। এ ছাড়া প্যারিসভিত্তিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের শীর্ষ ২৫ ব্যক্তিত্বের মধ্যে অন্যতম মারিয়া রেসা।
এদিকে সাংবাদিকদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশের তালিকায় ফিলিপাইনের নাম রয়েছে।
২০১৬ সালে ফিলিপাইনের ক্ষমতায় বসেন প্রেসিডেন্ট দুতার্তে। এর পরই রেসা ও তার প্রতিষ্ঠান র্যাপলারকে বেশ কয়েকটি মামলার মুখে পড়তে হয়। বিভিন্ন সময়ে অনলাইনে রেসাকে হুমকিসহ অবমাননাকর বার্তাও পাঠানো হয়।
র্যাপলারকে ‘ভুয়া সংবাদমাধ্যম’ হিসেবে দেখেন দুতার্তে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৫৮
আপনার মতামত জানানঃ