আজ থেকে এক শতাব্দী পূর্বে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম জন্ম নিয়ন্ত্রক ক্লিনিক প্রতিষ্ঠিত হয়। মার্গারেট স্যাংগারের হাত ধরে এই জন্মনিয়ন্ত্রক ক্লিনিক মার্কিন সাম্রাজ্যে আশীর্বাদ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। আর আজ থেকে ৪০ বছর পূর্বে জন্ম নিয়ন্ত্রক খাওয়ার বড়ি অনুমোদেন দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ ও খাদ্য নিয়ন্ত্রণ দপ্তর।
১৯৬৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আদালত প্রথম জন্ম নিয়ন্ত্রক এই ট্যাবলেট কেবল বিবাহিত দম্পত্তিদের জন্য অনুমোদন দেয়। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো নাগরিক চাইলেই এই নিরোধক ট্যাবলেট ব্যবহার করতে পারবে বলে আদালত রায় দেয়।
এরপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এমনকি বিশ্বজুড়ে এর প্রচলন বাড়তে থাকে। প্রথমদিকে নারীরা এর ব্যবহার বেশি করলেও সময় বদলের সঙ্গে সঙ্গে পুরুষরাও এ পদ্ধতিতে আগ্রহী হয়ে ওঠে।
জন্ম নিয়ন্ত্রণের ওষুধ সাধারণত নারীরাই খেয়ে থাকেন। তবে বেশ কয়েক বছর ধরেই পুরুষদের জন্যও জন্ম নিয়ন্ত্রণের ওষুধ তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছিল। চেষ্টা করা হচ্ছিল পুরুষদের জন্য বাজারে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল আনার।
অনেকদিন পরীক্ষানিরীক্ষার পর অবশেষে জানা গেছে, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয় পুরুষদের জন্মনিয়ন্ত্রণের ওষুধ। এই পিলের প্রভাবে পুরুষদের মিলনের ইচ্ছাও কমে যায় না।
সম্প্রতি পুরুষদের জন্য দুটি গর্ভনিরোধক পিল তৈরি করেছেন গবেষকরা। পরীক্ষামূলকভাবে পিল দুটি ব্যবহারের পর তারা বলছেন, এই ওষুধের তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষদের এই জন্মনিয়ন্ত্রণ ওষুধ দুটি তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই শরীরের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমিয়ে দেয়।
নতুন ওষুধ দুটির নাম ডিএমএইউ এবং ১১বিটা-এমএনটিডিসি। ওষুধগুলো প্রোজেস্টোজেনিক অ্যান্ড্রোজেন নামক ওষুধের সমগোত্রীয়।
নতুন পিল দুটি টেস্টোস্টেরনের মাত্রা হ্রাস করে শুক্রাণুর সংখ্যা কমিয়ে দেয়। নারীদের তুলনায় পুরুষের বিকল্প গর্ভনিরোধকের সংখ্যা খুবই কম। এই দুটি ওষুধ আবিষ্কারের ফলে অপরিকল্পিত গর্ভধারণ রুখতে ছেলেরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবেন বলে দাবি গবেষকদের।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারী পুরুষদের মধ্যে ৭৫ শতাংশের বেশি পুরুষ পুনরায় এই ওষুধ ব্যবহার করার প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছেন। গবেষকদের মতে, এই পিল দুটি ব্যবহার করা হলে অবাঞ্ছিত গর্ভধারণের সমস্যা আরও কমবে।
তবে এক্ষেত্রে পুরুষ কতটা আগ্রহী, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে বাংলাদেশে যেসব পদ্ধতি এখন ব্যবহার হচ্ছে সেগুলো হল জন্ম বিরতিকরন খাবার বড়ি, কপার টি, জন্মনিয়ন্ত্রণ ইনজেকশন, লাইগেশন, চামড়ার নিচে বসিয়ে দেয়া জন্মনিয়ন্ত্রণ ক্যাপসুল, কনডম ও ভ্যাসেকটমি।
খাবার বড়ির ব্যবহার সবগুলো পদ্ধতির মধ্যে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ। ইনজেকশন ১১ শতাংশ। সেই হিসেবে পুরুষদের জন্য মোটে দুটি যে পদ্ধতির তার মধ্যে কনডমের ব্যবহার হচ্ছে মোটে ৭ শতাংশ। পুরুষদের ভ্যাসেকটমির করার হার মোটে ১ শতাংশ। এসব হারই বলে দেয়া পরিবার পরিকল্পনা পুরুষদের অংশগ্রহণ কতটা।
তবে এর আগেও ২০২০ সালে পুরুষের জন্য ভেষজ জন্মনিয়ন্ত্রণ ওষুধ আবিষ্কার করেন গবেষকরা। গবেষকদের দাবি ছিল, ওই ওষুধ প্রায় ৯৯ শতাংশ কার্যকর৷ গবেষকরা জানান, পুরুষের স্পার্মের মধ্যে এনজাইম রয়েছে, তা এই ওষুধের সংস্পর্শে এসে দুর্বল হয়ে যাবে৷ ফলে নারীরা গর্ভবতী হবেন না৷
ইন্দোনেশিয়ার এক বিশেষ উদ্ভিদ জেন্ডারুস গাছের রস দিয়ে এই ভেষজ ওষুধ তৈরি করা হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার পাপুয়া দ্বীপের আদিবাসী পুরুষরা তাদের স্ত্রীদের গর্ভধারণ রুখতে এই গাছের রস দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে আসছেন।
১৯৮৫ সালে এয়ারলাঙ্গা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ব্যাংব্যাঙ্গ প্রাজোগো এই গাছটি প্রথম তার গবেষণাগারে এনেছিলেন৷ এর পর থেকেই এই ওষুধ তৈরির কাজ শুরু হয়৷ তবে এই পিল খেলে যে পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা একেবারেই নষ্ট হয়ে যাবে এমন নয়।
এই ওষুধ খাওয়া বাদ দেয়ার এক মাসের মধ্যেই পুরুষের শুক্রাণু আবার কার্যকরী হবে। তবে এই ওষুধের সুফলের পাশাপাশি একটি কুফলও রয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। তারা জানান, এই ওষুধ খেলে পুরুষের ওজন বেড়ে যেতে পারে৷ তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৫৩৫
আপনার মতামত জানানঃ